রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে নির্ভার জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে চাপে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রাথমিকভাবে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ১৩ জনের নাম এলেও এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭। আগামী শনিবার (১১ নভেম্বর) প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে দলীয় সূত্রে। আর এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি।
এদিকে, নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র শরফ উদ্দিন আহাম্মেদ ঝন্টু ও মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী রাশেক রহমানকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার সুভাষ চন্দ্র সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, রসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ১৩ জন মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তবে এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭ জন। প্রার্থিতার দৌড়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। শুরুতে বলা হয়েছিল, ৭ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর দুপুর ১২টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা দিতে হবে জীবনবৃত্তান্ত। পরে আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক জানান, প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজুর কাছেও জমা দেওয়া যাবে। এরপর কেউ কেউ জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন ঢাকায়, কেউ কেউ জেলা সাধারণ সম্পাদকের কাছেও।
এ বিষয়ে জানতে রেজাউল করিম রাজুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি দলের নির্দেশ পাওয়ার পরই আমার কাছে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছিলাম। এতে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই।’ বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী তার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, রেজাউল করিম রাজুর কাছে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়া সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সিটি মেয়র শরফ উদ্দিন আহাম্মেদ ঝন্টু, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিয়ার রহমান, রংপুর মেট্রোপলিটান চেম্বারের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন, রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম, আওয়ামী লীগ নেতা রথিশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা, শিক্ষাবিদ ড. জয়নুল আবেদীন, আওয়ামী লীগ নেত্রী রোজি রহমান ও লতিফা শওকত।
এসব আবেদনপত্র বুধবার (৮ নভেম্বর) রাতে ঢাকায় দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান রেজাউল করিম রাজু।
তবে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল জানান, মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনি ঢাকাতেই জীবনবৃত্তান্ত জমা দেবেন। এ জন্য তিনি বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) ঢাকা পৌঁছেছেন। এছাড়া, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, সেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর সভাপতি বাবুসহ আরও কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীও একই কাজে ঢাকা অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, ক্ষমতাসীন দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন কার ভাগ্যে জুটবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়। অনেকেই মনে করছেন, এই দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান মেয়র ঝন্টু। আবার তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীই বলছেন, জাতীয় পার্টির শক্তিশালী প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার বিরুদ্ধে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে থাকতে পারেন চৌধুরী খালেকুজ্জামান। তবে শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগে কোনও প্রার্থীর প্রার্থিতাকেই নিশ্চিত ধরে নিতে পারছেন না তারা।
রসিক নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে তোড়জোড় চললেও এই নির্বাচন নিয়ে এখনও হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা মেলেনি বলে জানিয়েছেন রংপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র পদে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী শহীদুল ইসলাম মিজু। গত আড়াই বছরে রংপুরে দলীয় কর্মসূচি পালন না করতে পারলেও দল মনোনয়ন দিলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত বলে জানান। দলের আরেক সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু জানান, ১২ নভেম্বর ঢাকায় বিএনপির জনসভার পরপরই এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন