রাজধানী ঢাকা বিশ্বের বাসঅযোগ্য চতুর্থ স্থানে থাকার পরেও কেন সেই শহরের গৃহকর বাড়ানো হচ্ছে এমন এক প্রশ্ন তুলে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নাগরিকদের বোকা বানাচ্ছে। এই দুই সেবা প্রতিষ্ঠান ২২ বছর গৃহকর সমন্বয় না করে কেন হঠাৎ করে দীর্ঘ বছরের সমস্যা একবারে সমাধানের পথে হাটছে।যার প্রভাব নাগরিকদের কাঁধে চাপবে।
.
এ বিষয়ে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, উভয় পক্ষের মতামত ছাড়া পুনমূল্যায়নের নামে অযৌক্তিকভাবে ৩ থেকে ১০ গুণ গৃহকর বৃদ্ধি করছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এর ফলে জনগণ আতঙ্কিত।
এদিকে গৃহকরের বিষয়ে ক্যাব সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, দুর্নীতির অর্থ বৃদ্ধি করার জন্য হঠাৎ করে গৃহকর বাড়াচ্ছে।
তবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন বলে আসছে রাজস্ব কমিশন অনুযায়ী ৫ বছর অন্তর অন্তর গৃহকর সমন্বয় করার নিয়ম। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দীর্ঘ ২২ বছর পর এই সমন্বয় করা হচ্ছে। কর ১২ শতাংশ রয়েছে শুধু বর্তমান ভাড়া অনুযায়ী সমন্বয় করা হচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ক্যাব এক মানববন্ধন করে জনস্বার্থে কিছু দাবি তুলে ধরে। সেখানে উল্লেখ করেছে, অযৌক্তিক গৃহকর বৃদ্ধি স্থগিত করতে হবে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি নিয়ে স্বার্থসংঘাত মুক্ত কমিটি গঠন করতে হবে। সেই কমিটি কর্তৃক প্রবিধানমালা আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী গৃহকর পুননির্ধারণ করতে হবে।
এছাড়া বাড়িভাড়া যৌক্তিক করার লক্ষ্যে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠন করে উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম কমানোর দাবি জানানো হয় ক্যাবের তরফ থেকে।
পরিবর্তন ডটকমের সঙ্গে একান্ত স্বাক্ষাতকারে ক্যাব সভাপতি বলছেন, গৃহকর সমন্বয় শুধু শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।মূলত কর বাড়ানোর একটা পন্থা মাত্র।এছাড়া ক্যাব সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, দুর্নীতির টাকা বাড়ানোর এক পন্থা সমন্বয়।
ক্যাবের এমন অভিযোগের বিপরীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলাল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, প্রতি নাগরিকের বলার অধিকার আছে।আইন মাফিক আমরা ট্যাক সমন্বয় করার কাজ করছি।
তিনি বলেন, রাজস্ব কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী গৃহকর সমন্বয় করা হয়েছে। এরপর যদি কোন নাগরিকের সমস্যা হয় তার জন্য আপিলের সুযোগ আছে।স্থানীয় কাউন্সিলরের নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে একটা কমিটি আছে।সেখানেও অভিযোগ দিতে পারবেন নাগরিকরা। এরপরেও বিভাগীয় কমিশনের কাছে আপিল করতে পারবে।সেখানে আইনে আছে।সেই আইন অনুযায়ী কোর্ট কর মওকুফ করতে পারবেন।কারো কোন অভিযোগ থাকলে আইনের মাধ্যমে তা সমাধান করার সুযোগ আছে।
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠনের বিষয়ে ডিএসসিসির এই কর্মকর্তা বলেন, উচ্চ আদালতের আইনটি আমরা দেখেছি। ২০১০ সালে উচ্চ আদালত বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন। যা পূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের নির্দেশ দিলে আমরা তখন দেখবো।
একই বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহুল ইসলাম বলেন, এক তলা বিল্ডিংয়ের স্থানে যদি কেউ ৮তলা বানায় দীর্ঘ সময় ধরে তাহলে কি সেই বাড়তি অংশের ট্যাক্স দিবে না। এখানে তো কোন সমস্যা নেই।
ক্যাবের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এসব সমালোচনা এড়ানোর জন্য সফটওয়ার মাধ্যমে কর সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছি।সেখানে সবাই দেখতে পাবে কেন, কতোটুকু বাড়ানো হয়েছে কর। সবই দেখতে পাবে।
এতো সবের পরেও কেউ যদি আমাদের বিষয়ে দ্বিমত করে, তাহলে আমাদের সাথে বৈঠকে বসুক, কথা বলুক। তাহলেই সকল সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা।
ক্যাব বলছে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর ফলে বাড়িবাড়া এমনি বৃদ্ধি পাবে।এরপর যদি সমন্বয় শব্দ ব্যবহার করে গৃহকর বাড়ানো হয় তাহলে, নগরীর ৮০ শতাংশের বেশি স্বপ্ল আয়ের মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি অসহনীয় হয়ে যাবে।
poriborton
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন