রাজশাহীতে ড্রাইভিং শিখতে গিয়ে নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (নেসকো) একটি নতুন প্রাইভেটকার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রকৌশলীর ভাই সোমবার দুপুরে নগরীর নওদাপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটায়। এতে প্রাইভেটকারটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় নেসকোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাড়িতে প্রকৌশলীর ভাই ড্রাইভিং শিখতে পারেন কি না এবং বিষয়টি কতখানি বিধিসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটি নগরীর একটি গ্যারেজে মেরামতের জন্য দেয়া হয়েছে।
গত ৬ নভেম্বর ঢাকার একটি অটোমোবাইল শোরুম থেকে টয়োটা ভিআইওএস-২০১৬ ব্রান্ডের প্রাইভেটকারটি কেনে নেসকো। প্রায় ৪৫ লাখ টাকা মূল্যে এ প্রাইভেটকার বরাদ্দ ছিল উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম, বাণিজ্যিক পরিচালন বিভাগ) ফারুক হোসেন সরকারের জন্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারিবারিক প্রয়োজনের কথা বলে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ওই প্রাইভেটকারটি নিয়ে যান সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে সেটি নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
নেসকোয় কর্মরত নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, জাহাঙ্গীর আলম সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে সহকারী প্রকৌশলী হয়েছেন। এর আগে তিনি উপসহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি উপসহকারী প্রকৌশলী সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকৌশলী সংগঠনের নেতা হওয়ার সুবাদে তিনি নেসকোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর অনৈতিক প্রভাব খাটান। আর প্রভাব খাটিয়েই তিনি ডিজিএম ফারুক হোসেন সরকারের কাছ থেকে প্রাইভেটকারটি জোরপূর্বক নিয়ে যান।
নেসকোর বাণিজ্যিক পরিচালন বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সোমবার বেলা দেড়টার দিকে নগরীর উপকণ্ঠ নওদাপাড়ায় সিটি বাইপাস সড়কে প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের ভাই প্রাইভেটকারে ড্রাইভিং শিখছিলেন। সঙ্গে ছিলেন প্রকৌশলী জাহাঙ্গীরও।
ড্রাইভিং শেখার একপর্যায়ে একটি গরুবাহী ভটভটিকে সামনাসামনি ধাক্কা দেন প্রকৌশলী জাহাঙ্গীরের ভাই। এতে কারটির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সূত্রটি প্রকৌশলী জাহাঙ্গীরের ভাইয়ের নাম জানাতে পারেনি।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতে নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার একটি গ্যারেজে গাড়িটি মেরামত করতে দেখা গেছে। গ্যারেজের মালিক আনারুল ইসলাম বলেন, প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম তাকে গাড়িটি মেরামতের জন্য দিয়েছেন। গাড়িটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে ভেতরে ঢুকে গেছে। ভেঙে গেছে সামনের কাঁচ। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাম্পার, বনাট, রেডিয়েটর ও এসি। বেঁকে গেছে চেসিস।
আনারুল ইসলাম আরও বলেন, গাড়িটির সামনের অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া কাঁচের দাম লাখ টাকার ওপরে। এছাড়া চেসিস, এসি এবং রেডিয়েটের মেরামতে বড় অঙ্কের টাকা খরচ হবে। ইতোমধ্যে কিছু যন্ত্রাংশ ঢাকা থেকে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গাড়িটি সম্পূর্ণভাবে নতুন অবস্থায় আনা সম্ভব না। আর মেরামতেও খরচ হবে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা।
অপরদিকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাড়ি ড্রাইভিং শিখতে ভাইকে দিতে পারেন কি না? এ ধরনের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, অনিচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এর বাইরে কোনোকিছু জানতে চাইলে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে অফিসে এসে যোগাযোগ করতে বলেন।
তবে ডিজিএম ফারুক হোসেন সরকার প্রকৌশলী সমিতির নেতাদের দাপটে অনেকটা অসহায় বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, গাড়িটি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর চেয়েছিলেন। আমি না করতে পারিনি। এভাবে অধঃস্তনদের গাড়ি ব্যবহার করতে দেয়া বিধিসম্মত কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এ কর্মকর্তা।
চলতি বছরের এপ্রিলে পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) ভেঙে দেশজুড়ে ছয়টি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গঠন করে সরকার। এর আওতায় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলা মিলে গঠিত হয় নেসকো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন