রাজধানীর মৌচাকে ফরচুন শপিং মলের ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম ইরানের বিরুদ্ধে এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ কারণে ৯ ডিসেম্বর কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সোয়াট টিমের সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করতে যান। তখন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের হামলার শিকার হন তারা। এ ঘটনার নেপথ্যে এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্রের যোগসাজশ রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। তাদের দাবি, পরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃতভাবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করতে গেলে সোয়াট সদস্যদের প্রথমে আটক করে রাখা হয়। পরে থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করতে যায়। ব্যবসায়ী ও জনগণকে সরাতে এ সময় লাঠিচার্জ করেন তারা। তখনই বেঁধে যায় ঝামেলা। এতে আহত হন ৯ সোয়াট সদস্যসহ থানা পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য।
পুলিশের কাজে বাধা ও হামলার ঘটনায় ৯ ডিসেম্বর রমনা থানায় আলাদা দুটি মামলা দায়ের করেছে সোয়াট টিম ও রমনা থানা পুলিশ। সোয়াট টিমের দায়ের করা মামলায় ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম ইরানসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ জনকে। রমনা থানা পুলিশের দায়ের করা মামলায় আছে ইরানসহ দুই জনের নাম। এখানেও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ জনকে।
ফরচুন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে জানান সোয়াট টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব-উর-রশীদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা সংঘবদ্ধভাবে জালিয়াতি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের মধ্যে মাজহারুল ইসলাম ইরানকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করতে গেলে পুলিশ সদস্যদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়। এ সময় আমাদের সদস্যরা আহত হন।’
এদিকে ব্যবসায়ী ইরানকে রবিবার (১০ ডিসেম্বর) আদালতে হাজির করেছে সোয়াট টিম। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। এটিএম কার্ড জালিয়াতি ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো নিয়ে তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ফরচুন শপিং মলের ঐশ্বরিয়া শাড়ি সেন্টারের মালিক মাজহারুল ইসলাম ইরান এটিএম কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দায়ের করা মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে এটিএম কার্ড জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সোয়াট টিম এ তথ্য জানিয়েছে।
এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন মার্কেটের এমন ব্যবসায়ীদের সহায়তায় লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও জানান সোয়াট টিমের সদস্যরা। তারা প্রথমে দেশি-বিদেশি এটিএম কার্ড ও পিন নম্বর সংগ্রহ করে। এরপর জালিয়াতদের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা পজ মেশিনের মাধ্যমে কার্ডের টাকা স্থানান্তর করে।
গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি ফরচুন শপিং মলের একাধিক দোকানের পজ মেশিনে এটিএম কার্ড ক্র্যাচ করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ওই চক্র। এ ঘটনায় ২৩ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের হয়। ওইদিনই গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করে সোয়াট টিম। এ সময় তাদের কাছ থেকে একাধিক এটিএম কার্ড ও ইলেট্রিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে।
পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তে ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম ইরানসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম বেরিয়ে আসে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, দোকানসহ বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যক্তি এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে রয়েছে ফরচুন মার্কেটের মনোয়ারা শাড়িজ, বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ক্যামেরা ভিশন ও চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ভিশনের নাম।
ব্যবসায়ী ও জালিয়াতরা সংঘবদ্ধভাবে এই প্রতারণা করে থাকে বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। প্রথমে জালিয়াতরা বিভিন্ন কৌশলে দেশি-বিদেশি এটিএম কার্ড ও সেসব কার্ডের পিন নম্বর সংগ্রহ করে। পরে সেগুলো ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে থাকা পজ মেশিনে ক্র্যাচ করে কার্ডে থাকা টাকা ট্রান্সফার করা হয়। এভাবেই তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসি’র সোয়াট টিমের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মঈন উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। ব্যবসায়ী ইরানকে গ্রেফতার অভিযানে তিনিও ছিলেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এ মামলার আসামি মাজহারুল ইসলাম ইরানের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। তিনি আমাকে চেনেন। তবুও ইচ্ছাকৃতভাবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।’
তবে সোয়াট টিমের সদস্যদের ওপর হামলা পরিকল্পিত নয় বলে দাবি মৌচাকের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। তাদের ভাষ্য, ‘ডিবি পরিচয় দিলেও তারা সাদা পোশাকে এসেছিলেন। সম্প্রতি ডিবি পরিচয়ে ব্যবসায়ীদের তুলে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আসল না ভুয়া ডিবি তা নিয়ে ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সন্দেহ জাগে। সেই সন্দেহ থেকে তাদের আটক করা হয়।’
ফরচুন শপিং মলের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউন বললেন, ‘ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। পরে অন্যদের কাছে শুনেছি, ডিবি পরিচয়ে আমাদের মার্কেটের ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম ইরানকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় সাধারণ জনগণ বাধা দিয়েছিল। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলাও হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কোনও সম্পর্ক নেই।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন