সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু জাতীয় পার্টির টিকিট নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে। পরে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। রংপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার চেয়ারম্যান ও সর্বশেষ রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র ছিলেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেছেন, ‘আমার কোনো নির্বাচনী ইশতেহার কিংবা ভোটারদের কাছে কোনো ওয়াদা নেই। আমার অতীতের কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে ভোটাররা ভোট দেবেন। আমার কাজ বিবেচনা করেই অতীতে ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আমি উন্নয়নের রাজনীতি করি। তাই এবারও জনগণ আমাকে বিমুখ করবে না।’
ঝন্টু বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী হয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন করছি। বিগত সময়েও এই সরকারের আমলে সিটি করপোরেশনের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এবার মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই নগরবাসীর জন্য কাজ করব। ’
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘রংপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করাই হবে আমার প্রথম কাজ। ’
তিনি আরো বলেন, ‘রংপুর পৌরসভার সঙ্গে অনেক গ্রাম এলাকা নিয়ে সিটি গঠিত হয়েছে, যেগুলোতে এখনো রাস্তাঘাট পর্যন্ত নেই। এসব এলাকাকে নগরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্য রাস্তাঘাটের উন্নয়নও করা হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে।’
নৌকার বিজয় সম্পর্কে ঝন্টু বলেন, ‘একসময় এখানকার মানুষ নৌকা মার্কার স্লোগান দিতে ভয় পেত, বিশেষ করে লাঙ্গল মার্কা একসময় নৌকার গলা টিপে ধরেছিল। সেই অবস্থার এখন পরিবর্তন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের রাজনীতির ফলে এখন ছোট ছোট বাচ্চার মুখেও জয় বাংলা ও নৌকা মার্কার স্লোগান শোনা যাচ্ছে। জনগণের এই পরিবর্তনের ফলে আমি আশাবাদী, এবার নৌকা মার্কা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।’
অন্যদিকে এরশাদের দূর্গ রংপুর সদর। এই সদর আসনে সংসদে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিত্ব সবসময়ই বিরাজমান ছিলো। তাই এই সিটি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে নিয়ে আশাবাদী স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা অভিজ্ঞতা রয়েছে মোস্তফার। তিনি ২০১২ সালের রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে রংপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ভোট যুদ্ধের ময়দানে ভোটারদের আলোচনায় সর্বাধিক এগিয়ে রয়েছেনও তিনি।’
লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘মেয়র হতে পারলে আমার প্রথম কাজ হবে নবগঠিত এই নগরীর নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা। যদিও অনেকটা গ্রামাঞ্চল নিয়ে সিটি গঠন করা হয়েছে। তাই সেগুলোর উন্নয়ন করা কঠিন হবে। তবে আমি ওই সব মানুষের সর্বশেষ প্রতিনিধি। তাই আমার জন্য সমস্যা হবে না।’
সিটি করপোরেশনকে মডেল হিসেবে গড়ে তোলায় প্রত্যয়ী মোস্তফা আরো বলেন, ‘জনগণই আমার শক্তি, তাদের সেবা করতে গিয়ে আমার যেটা করা উচিত, তা-ই আমি করব। চেষ্টা করব যাতে নগরীর শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রসার যাতে বৃদ্ধি করা যায়। সিটি করপোরেশনকে করা হবে জনগণের সত্যিকারের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে। বিজয়ী হলে সর্বপ্রথম যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাব। এরপর নজর দেব যানজট নিরসনে। পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করব।’
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে লাঙ্গল মার্কা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। রংপুরের মানুষ শান্তিপ্রিয়। আশা করি, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে আন্তরিক হতে হবে। ’
নির্বাচনী ইশতেহার প্রসঙ্গে মোস্তফা বলেন, ‘ইশতেহার তৈরি করেছি। এখনো তা জনগণের মাঝে প্রকাশ করিনি, তবে শিগগিরই তা প্রকাশ করব।’
অপর মেয়র প্রার্থী বিএনপির কাওছার জামান বাবলা। তিনি রংপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। নির্দলীয় ওই নির্বাচনে আনারস প্রতীকে মাঠ চষে বেড়িছেন। দলীয় পরিচয়ের বাইওে তার রয়েছে সমাজসেবকের পরিচয়। তিনি একাধারে বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দান করেছেন আসছেন। মহানগর বিএনপির এই নেতাকে ঘিরে বিএনপিও মাঠে নেমেছেন। তারা চাইছেন সরকারের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলতে।
কাওছার জামান বাবলা বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীর অন্যতম সমস্যা শ্যামাসুন্দরী খালের উন্নয়নসহ কলকারখানা গড়ে তোলার মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণে কাজ করবেন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তার।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সরকারের লোক। এ সরকারই তাদের নিয়োগ দিয়েছে। তাই তাদের দ্বারা কতটুকু নিরপেক্ষতা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’
নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব সম্পর্কে বাবলা বলেন, ‘এ বিষয়ে রংপুরে মতবিনিময় সভায় খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংশয় প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, কালো টাকার প্রবাহ বন্ধ করা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনারের এ ধরনের কথায় কালো টাকা নিয়ে যারা নামার পরিকল্পনা করছেন তারা উৎসাহ পেয়েছেন; কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কালো টাকার প্রবাহ বন্ধ করা জরুরি।’
তিনি আরো বলেন, ‘অতীতে এ সরকার অনেক বিতর্কিত নির্বাচন উপহার দিয়েছে। রংপুর সিটি নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে সেনা মোতায়েনের বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।’
জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, ‘দলটি আওয়ামী লীগের ‘বি টিম’। দুটিই সরকারি দল। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে রংপুরের জনগণ ধানের শীষে ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করবে বলে দৃঢ়তার সঙ্গে জানান তিনি।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন