আগ্রহী প্রার্থীরা মাঠে থাকলেও ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন নিয়ে সংশয় ক্রমেই বাড়ছে। এই সংশয় সহসা দূর হচ্ছে না। তারপরও এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আগ্রহী প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নানা জল্পনা-কল্পনা সত্ত্বেও তারা দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বেশ সক্রিয় রয়েছেন। কিন্তু এই নির্বাচনে নতুন ভোটার ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ নিয়ে আইনি জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা এখন আরো বাড়ছে। আগ্রহী প্রার্থীদের অনেকেই গণমাধ্যমকে বলেন, ভোট হবে তো? নাকি আইনের মারপ্যাঁচে মামলার জালে আটকে যাবে এই নির্বাচন। : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচন ও উত্তর-দক্ষিণের সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুন ৩৬ ওয়ার্ডের ভোট নিয়ে নানামুখী শঙ্কা দেখছেন বিশ্লেষকরা। খোদ ইসির কর্মকর্তারাও ভোট নিয়ে গণমাধ্যমকে এই শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন।
তারা বলছেন, আগামী ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ঘোষণা হবে। ওই তালিকায় স্থান পাওয়া নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডের সব ভোটার মেয়র পদে ভোট দিতে পারবেন না। আবার তাদের অনেকই প্রার্থী হতে পারবেন না। কেননা ১৮ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। এতে নতুন ভোটারদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হতে পারেন। মামলাও করতে পারেন। কারণ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে প্রার্থী এবং সমর্থক ও প্রস্তাবকের ভোটার নম্বর প্রয়োজন। ২০১২ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ওয়ার্ডে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা আরো বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। যার ফলে তাদের ভোট আটকে যাচ্ছে। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, সিটি করপোরেশনের আইন সংশোধন করে নতুন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মেয়াদকাল নির্ধারণ না করলে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে। তফসিল ঘোষণার পরও ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচনসহ ৩৬ ওয়ার্ডের নির্বাচন ঝুলে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ইসি বলেছে, নতুন ভোটারদের প্রার্থিতার সুযোগ নেই। কিন্তু তারা ভোট দিতে পারবেন।
আর এই বিষয় সমাধান না করে ভোট করলে মামলা হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করছেন খোদ ইসির কর্মকর্তারা। এমনকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন সিটি ভোট নিয়ে কেউ মামলা করলে এ নিয়ে ইসির করার কিছুই নেই। তবে সুশাসনের জন্য নাগরিকÑসুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, বড় জটিলতা হচ্ছে নতুন কাউন্সিলরদের মেয়াদ। কমিশন বলেছে, বর্তমান পরিষদের মেয়াদের সঙ্গে নতুন কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু আইনে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। তাই কেউ মামলা করে নির্বাচন ভন্ডুল করার সুযোগ নিতে পারেন। তিনি বলেন, ইসির উচিত সরকারকে এ বিষয়টি স্পষ্ট করতে বলা। আর সরকারের এ বিষয়ে কিছু দায়িত্ব রয়েছে, তা হলেও আইন সংশোধন করে দিয়ে মেয়াদ স্পষ্ট করা। তিনি বলেন, বল এখন সরকারের কোর্টে। চলতি সংসদ অধিবেশনে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা যেতে পারে বলেও মত দেন তিনি। ভোট নিয়ে নানা জটিলতা দেখছেন ইসির কর্মকর্তারা।
: তারা বলছেন, উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নতুন অন্তর্ভুক্ত ৩৬টি ওয়ার্ডে নির্বাচনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ অনুরোধ করেছে। কিন্তু তারা আইনি সমাধানের বিষয়ে তেমন কিছু বলেননি। এ ছাড়া উপনির্বাচন ও কাউন্সিলর পদে নতুন ভোটারদের ভোট দেয়ার অধিকার থাকলেও প্রার্থী হওয়ার অধিকার নেই। দুই সিটিতে সীমানা ও ওয়ার্ড বেড়ে যাওয়ায় পরিষদের বা বর্ধিতাংশের কাউন্সিলর পদের মেয়াদ নিয়ে জটিলতার শঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা। : সেই সঙ্গে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদের উপনির্বাচনে কারা ভোট দেবেন সেই বিষয়ে সমস্যা হতে পারে। কেননা এর আগে উত্তরের নির্বাচনে নতুন ওয়ার্ডের ভোটাররা মেয়রকে ভোট দেননি। তাই তারা কেন উপনির্বাচনে ভোট দেবেন? যারা মেয়র নির্বাচন করেছেন তারাই শুধু মেয়রের উপনির্বাচনে ভোট দেবেন এমন প্রশ্ন তুলছেন নতুন ওয়ার্ডের ভোটাররা।
এ ছাড়া দুই সিটির সীমানা বাড়ানোর পর ওয়ার্ড সংখ্যা বৃদ্ধি ও ওয়ার্ড বিভক্তি নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে। এমনকি এর আগে কমিশন সভায় উপস্থাপনের জন্য তৈরি করা কার্যপত্রে বলা হয়েছিল, ‘স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইনে নতুন অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন-সংক্রান্ত বিধান পরিলক্ষিত হয় না।’ : এদিকে ইসির পক্ষ থেকে এই নির্বাচনে আগাম প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচনকে সামনে রেখে আগাম প্রচার সামগ্রী নির্ধারিত সময়ে না সরালেও কোনো ব্যবস্থাই নেয়ার হুমকিও দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু এখনো নির্বাচনি প্রচারণা সংক্রান্ত পোস্টার, ব্যানার সরানো হচ্ছে না এবং নির্বাচন কমিশনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম গণমাধ্যমকে বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই এখনো প্রচার সামগ্রী নিজ উদ্যোগে সরিয়ে ফেলেননি। অনেকে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তারা হয়তো অজ্ঞাতবশত এমন করছেন।
আমি বলব আপনারা এ কাজ থেকে বিরত থাকুন। : ইসির এ যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনি আইন-বিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো ধরনের প্রচারণার সুযোগ নেই। আজ থেকে আচরণবিধি প্রতিপালন তদারকির জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করা হচ্ছে। প্রয়াত আনিসুল হকের উত্তরসূরি নির্বাচনে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোট দেবেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভোটাররা। মঙ্গলবার ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এই উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে আবেদন জমা দেয়া যাবে আগামী ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। তা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২১ ও ২২ জানুয়ারি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নবগঠিত ৩৬ ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর পদে ভোট হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। : এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে ৬ জানুয়ারির মধ্যে আগাম প্রচার সামগ্রী অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিল ইসি।
নির্ধারিত সময় পার হলেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে আগারগাঁও কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, মাত্র তফসিল ঘোষণা হলো। অনেক জায়গায় আগাম প্রচার সামগ্রী সরিয়ে নিয়েছে, কোথাও কোথাও রয়ে গেছে। এ বিষয়গুলো কমিশনের নজরে আনা হবে। নির্বাহী হাকিম মাঠে নামলেই তারা আইন-বিধি মেনে ব্যবস্থা নেবে। ঢাকা উত্তরের ৫৪টি ওয়ার্ডে ১৮ জন নির্বাহী হাকিম তদারকিতে নামবে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।
দৈনিক দিনকাল
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন