১০০ টাকায় বোরখা, দেড়শ টাকায় বিছানার চাদর কিনতে চান? নিশ্চয়ই ভাবছেন এগুলো পুরনো। নইলে এত কম দাম হাঁকানো হচ্ছে কেন। কিন্তু না না, এগুলো নতুনই। শুধু রোরখা এবং বিছানার চাদরই নয়, কম দামে কিনতে পারেন নারীদের বিভিন্ন পোশাক ও গৃহস্থালি পণ্য। এজন্য ঢুঁ মারতে হবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। কেননা, নারীদের সাপ্তাহিক এই হাট এক এক দিন এক এক জায়গায় বসে।
এই হাটে পাওয়া যাবে নারীদের জন্য থ্রিপিছ, ওয়ান পিস কামিজ, ওড়না, হিজাব, টাইস, টপস সহ আরো অনেক ধরনের পোশাক। জামার পাশাপাশি কিনতে পারবেন জুতাও। আছে প্রসাধনী সামগ্রীও।
নারী বান্ধব এই হাঁটে কেনাকাটা করতে আসা বেশির ভাগই গৃহবধু। তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। আছেন চাকরিজীবী নারীরাও। সপ্তাহে হাঁট যেখানে বসে তার আশেপাশের এলাকা থেকে গৃহিনীরা আসেন। কিনে নেন তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস। এদেরই একজন লাইলী বেগম। তার সঙ্গে কথা হয় মোহাম্মদপুর বেড়ি বাঁধের সাপ্তাহিক হাটে।
লাইলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হাটে ড্রেস, কসমেটিক্স সবই তো পাওয়া যায়। তাই মার্কেটে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রতি সপ্তাহেই এখানে হাট বসে। মার্কেটের চাইতে এখানকার জিনিসপত্রের দাম কম।’
অনেকেই হয়তো ভাববেন এই হাটে বুঝি নিম্নবিত্তরাই কেনাকাটা করতে আসেন। সাপ্তাহিক এই হাটে গেলে আপনার ভুল ভাঙ্গবে। কেননা, নিম্ন বৃত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও হাটে আসেন। ক্রেতাদের মধ্যে আছে শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ নানা পেশার সঙ্গে জড়িতরা। এদের বেশিরভাগ নারী হলেও পুরুষ ক্রেতাদের সংখ্যাও কম নয়। কেউ কেউ স্বপরিবারে আসেন। কিনে নিয়ে যান নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী।
মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের হোসেন মার্কেট সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক হাট বসেছিল। এখানে কথা হয় স্কুল শিক্ষিকা লতা আক্তারের সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন ‘জিনিসিপত্রের কম দামের কারণে এই হাটে ক্রেতা বেশি। এত কম দামে কোনো মার্কেটে আমরা এসব জিনিস পাই না। মানের দিকটাও ঠিক আছে।’
একই কথা জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী মেহেরুননিসা। তিনি বলেন, ‘হাটে বোরখা পাওয়া যাচ্ছে মাত্র একশ টাকায়। এই একই বোরখা যেকোনো মার্কেট থেকে কিনলে কমছে কম পাঁচ শ টাকা লাগবে।’
দামের দিক বিবেচনা করেই মূলত এখানে ক্রেতা সমাগম দিন দিন বাড়ছে। স্বাভাবিকভাগে কিন্তু জাগতে পারে পণ্যের মান যদি এত ভালই হয় তবে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে কেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে দিলেন সাপ্তাহিক হাটের বিক্রেতা মোরশেদ। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমাগো কাছে কম পাইবেন না, তো কই কম পাইবেন? আমাগো দোকান কই? দোকানি তো নাই। দোকান ভাড়া নাই, কারেন্টে বিল নাই, পুলিশের চান্দা নাই। দাম তো কম থাকবোই। আবার একটা ব্যাপার আছে, এইখানে যে পরিমাণ বেচাকেনা হয়, তা কোনো মার্কেটে হয় না। তাই দাম কম রাইখা, বেশি বেচি। লাভ আমাগোই।’
১০ বছর ধরে নগরের বিভিন্ন ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করেন মো. হাবিব। ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি সাপ্তাহিক হাটে নিয়মিত বসেন। তিনি জানান, মাসের ৭ থেকে ৮ তারিখ থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত সাপ্তাহিক হাটে বেচাবিক্রি ভালো হয়। তার কারণটা হলো এইসময়ে মানুষের হাতে টাকা থাকে।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, সাপ্তাহিক এই হাট এক জায়গা নির্দিষ্ট থাকলে ভালো হতো। পণ্য হাটে বেচার জন্য তাদের এক এক সপ্তাহে এক এক এলাকায় যেতে হয়। এতে করে ঝক্কি-ঝামেলা পোহানোর পাশাপাশি পরিবহন খরচও আছে।
কোথায় বসে এই হাট?
সাপ্তাহিক এই হাটে কেনাকাটা করতে চাইলে আপনাকে জানতে হবে সপ্তাহের কোন দিন, কোন এলাকায় হাট বসে। সপ্তাহের প্রথম দিন শনিবার হাট বসে মোহাম্মদপুরের আড়ং মাঠে। রবিবার তা চলে যাবে রায়েরবাজার টালি অফিস সংলগ্ন এলাকায়। সোমবার হাটের ঠিকানা রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সামনে।
মঙ্গলবারের হাট বেশ জমজমাট হয়। কারণ সেটি হাট বসে কামরাঙ্গীচরের সেকশন এলাকায়। প্রায় হাজার খানেক দোকানি বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজায় এই হাটে।
বুধবারের হাট থেকে কেনাকাটা করতে আপনাকে যেতে হবে রামপুরার ম্যারাইঠা এলাকায়। বৃহস্পতিবার হাট বসে বছিলা ব্রিজের উত্তরে ফিরোজা বাশার স্কুল ও কলেজের কোল ঘেঁষে।
শুক্রবার হাটের পরিসর ছোট। স্থান বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়ের হোসেন মার্কেটের সামনে।
এসব হাটে অংশ নেয়ার জন্য বিভিন্ন হকার দল রয়েছে। যারা একজোট হয়ে হাটগুলোতে গিয়ে বেচাবিক্রি করেন। প্রতিটি দলের হাটে অংশ নেয়ার সময় ও স্থান ভিন্ন ভিন্ন।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন