রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে নেমেই বেশ বিপাকেই পড়তে হবে। নামমাত্র হাটার পথ আছে তবে সেটাতে হাটার অবস্থা নেই। পথচারীর চাইতে পণ্য আর পথব্যবসায়ীর সংখ্যাই বেশি। দখলদারদের দৌরাত্ম্যের কারণে ঝুঁকি নিয়ে মূল সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের।
গোল চত্বরের চৌরঙ্গী মার্কেট থেকে ফায়ার সার্ভিসের দিকে এগোতে পুরোটা ফুটপাতে চোখে পড়বে ফল, পোশাক আর বিভিন্ন প্রসাধনীর দোকান। মিরপুর-১০ গোল চত্বরের উত্তর দিক থেকে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়-৪ ও পশ্চিম দিকের রাস্তার দুপাশের সরু ফুটপাতে একই অবস্থা। ঢাকা ওয়াসার সামনের সড়কেও সমানে চলছে দখল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুটপাতের এই বাণিজ্য ঘিরে আছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেট। প্রতি মাসেই চলে অর্ধ কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য। এ নিয়ে কথা হয় জামা-কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসা দোকানি আব্দুর রউফের সঙ্গে। আরটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, সাপ্তাহিক ও দৈনিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার ভিত্তিতে ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন তারা। এক্ষেত্রে দখলদারকে প্রতিদিন দোকান ভেদে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয় দোকানদারদের।
অনুসন্ধান করে দেখা যায়, বড় নেতাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা স্থানীয় নেতা ও কর্মীরা একটি সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে ফুটপাত দখল করে রেখেছেন। ফুটপাতে দোকান বসাতে হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ জামানতও দিতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। এই হিসাবে গড়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিন লাখ টাকা আদায় করে এই সিন্ডিকেট। মাসে হিসাব করলে এ টাকার পরিমাণ অর্ধ কোটি টাকার বেশি।
বিভিন্ন সময় ফুটপাত দখলের বিরুদ্ধে অভিযান হলেও কোনো সুফল পায়নি উত্তর সিটি করপোরেশন। স্থানীয় কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মাণিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডকে একটি সুপরিকল্পিত মডেল ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরের ফুটপাত কয়েকবার উচ্ছেদও করা হয়েছে। পরে আবার বসে যায়। শিগগিরই আবার অভিযান চালানো হবে।
তবে তার ঘনিষ্ঠ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়-৪ এর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক কারণে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান শোভন জানান, ‘এখানে কয়েকটি ইংলিশ ভার্সন স্কুল ও কোচিং সেন্টার থাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় থাকে। এই সুযোগে স্থানীয় স্বার্থলোভী নেতারা এসব দোকান বসিয়ে ভাড়া তুলছেন। অগ্রিম এক থেকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিচ্ছেন এবং প্রতিমাসে তিন-চার হাজার টাকা ভাড়া তুলছেন।’
ঢাকা ওয়াসার সামনের ফুটপাত দখল নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটা আমাদের জায়গা নয়, এটা সিটি করপোরেশনের জায়গা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ও করপোরেশনের কর্মকর্তারা বিষয়টা ডিল করেন। এ বিষয়ে আমি কোনো বক্তব্য দিব না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন