রাজধানীর রাজপথের যেন মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিচ্ছে লোকাল বাসগুলো! ছোট যানবাহন কিংবা পথচারী কেউই নিরাপদ নয় এসব বাসের কাছে। জনবহুল রাজপথে তীব্র গতিতে ধেয়ে আসা বাসগুলো নিজেদের মধ্যে গতিবেগের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতে গিয়ে হরহামেশাই দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। আর তাদের এই ‘খেলা’র বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আবার ফিটনেসহীন গাড়ি কিংবা অদক্ষ চালকের কারণেও কেউ হারাচ্ছে প্রাণ, কেউবা হচ্ছে চিরতরে পঙ্গু। একেকটি দুর্ঘটনায় একেকটি পরিবারে নেমে আসছে দুর্যোগ। কিন্তু তার পরও বাসচালকদের নিয়ন্ত্রণে নেই দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ।
সাম্প্রতিক সময়ে এ রকম বেশ কয়েকটি ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রাজধানীবাসী। এসব ঘাতক বাসচালকদের সর্বশেষ শিকার হয়েছেন রুনি আক্তার (২৮) নামে এক কর্মজীবী নারী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন দুই বাসের চাপায় ডান হাত হারানো ছাত্র রাজীব। দুই সন্তানের জননী আয়েশার ড্যামেজ হয়ে গেছে স্পাইনাল কড। তার চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
এদিকে বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটে বেপরোয়া বাসের চাপায় ডান পা থেঁতলে গেছে রুনি আক্তারের। তিনি র্যাংগস প্রপার্টিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। এ ঘটনায় ঘাতক নিউ ভিশন নামের ওই বাস ও বাসের চালক মোতালেবকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা।
জানা যায়, ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে থেমে যাত্রী ওঠা-নামা করে সব ধরনের বাস। সেখানে সড়কে উঁচু বিভাজক আছে, যেখানে যাত্রীরা দাঁড়ান। সকাল ৯টার দিকে রুনি আক্তারও সড়ক থেকে উঁচু বিভাজকের ওপর উঠতে যাচ্ছিলেন। এ সময় বেপরোয়া গতির নিউ ভিশন পরিবহনের বাসটি সড়ক বিভাজক ঘেঁষে এগিয়ে আসে। বিভাজক ও বাসের মাঝে রুনির ডান পা চাপা খায়। এতে তার ডান পায়ের হাঁটু সংলগ্ন অংশ থেঁতলে যায়। পথচারীরা উদ্যোগী হয়ে বাস ও বাসের চালককে আটক করে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। আহত রুনিকে পরে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তার সহকর্মী আহমেদ আলী জানান, বেলা ২টা পর্যন্ত রুনি আক্তারের জ্ঞান ফেরেনি।
তিনি বলেন, রুনি মাস্টার্স সম্পন্ন করে এমবিএ করেছেন। এরপর র্যাংগস প্রপার্টিজে চাকরি করছিলেন। অফিসে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। তার ডান হাঁটুর ওপরের মাংস ছিঁড়ে গেছে। হাসপাতালে আনার পর দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে রুনিকে। ডান পা রাখা যাবে কিনা, এ ব্যাপারে চিকিৎসকরা পরে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
এদিকে দুই বাসের চাপায় ডান হাত হারানো কলেজছাত্র রাজীব হোসেনের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যদিকে, দুই বাসের চাপায় পড়ে মেরুদণ্ড ভেঙেছে আয়েশা খাতুনের। সড়ক দুর্ঘটনার আহত এ দু’জনের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
৩ এপ্রিল কারওয়ান বাজার এলাকায় দুই বাসের চাপায় কলেজছাত্র রাজীব ডান হাত হারান। তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। ঢামেক হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান ডা. শামসুজ্জামান শাহীন জানান, রাজীবের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। হার্টসহ শরীরের অন্য অঙ্গ কাজ করছে। কিন্তু ব্রেনের সঙ্গে অন্য অঙ্গ রেন্সপন্স করছে না। রাজীব লাইফ সাপোর্টে রয়েছে।
এদিকে, ৫ এপ্রিল মেয়ে আহনাব আহমেদকে নিয়ে রিকশায় করে নিউমার্কেট থেকে ধানমণ্ডির স্কুলে যাওয়ার পথে দুই বাসের চাপায় গুরুতর আহত হন আয়েশা খাতুন। তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ল্যাবএইড হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের কনসালট্যান্ট মাসুদ আনোয়ার জানান, আয়েশা খাতুনের মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছিল। সেটা অস্ত্রোপচার করে ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু তার স্পাইনাল কড ড্যামেজ হয়ে গেছে। এ কারণে কোমর থেকে পা পর্যন্ত অবশ হয়ে আছে।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন