প্রতারণার শীর্ষে রাজধানীর অভিজাত হাসপাতালগুলো, দোষ ঢাকতে ডেথ সার্টিফিকেটে মিথ্যাচার
অবহেলা, ভুল চিকিৎসা ও হাসপাতালের অব্যবস্থাপনায় প্রতিদিনিই মৃত্যু ও চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। নিজেদের দোষ ঢাকতে ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর ভিন্ন কারণ দেখাতেও দ্বীধা করছে না চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তবে প্রতারণা, অপ্রয়োজনে আইসিইউতে প্রেরণ করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়, দোষ ঢাকতে হুমকি দেয়াসহ নানা ধরনের কৌশলী ভূমিকায় অভিজাত শ্রেণীর হাসপাতালগুলোর স্থান শীর্ষে। রোগীদের সুরক্ষায় চিকিৎসকদের তথাকথিক ঐক্য ভাঙ্গার পাশাপাশি আইনের সংশোধন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।
বিবাহের চতুর্থ বার্ষিকীতে সদ্য প্রসূত প্রথম সন্তান লাশ হয়ে এসেছে মায়ের কোলে। সম্প্রতি স্কয়ার হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির আগ্রহ প্রকাশ করায় চিকিৎসকের আক্রোশের শিকার হয়েছেন নোভা।
নোভার অভিযোগ, কোন ব্যাথা অনুভব না করলেও ভর্তির দ্বিতীয় দিনেই তাকে প্রসব বেদনা সৃষ্টির জন্য ইনজেকশন পুশ করা হয় পরিবারকে অনুরোধ উপেক্ষা করেই।
নোভা বলেন, 'চিকিৎিসকেরা বললেন আমার পেইন অবজারভেশনের ক্ষমতা অনেক। আপনি টের পান না পেইন। কিন্তু মেশিন বলছে আপনার পেইন হচ্ছে।'
এখানেই শেষ নয়, অবহেলা ও শারীরিক নির্যাতনের পর সবশেষ সন্তানের ডেথ সার্টিফিকেটে হার্টে ছিদ্রের কথা লিখা হয়, যেখানে জন্মের আগের ২ বারের রিপোর্টে নবজাতকের সুস্থ হার্টের কথা জানিয়েছিলেন ডাক্তার রেহনুমা জাহান।
দুর্ঘটনার স্বীকার নোভার পরিবারের সদস্য বলেন, 'ওনাদের টার্গেট ছিলো সিজার করাবে। ওনারা ওনাদের প্রসেসে গিয়ে একটু দেরিও করলো, কিছু বিলও যোগ হলো। পরে সিজারও করলো।'
অহরহ ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা বাড়ায় শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। আস্থা কমে যাওয়ায় একই সাথে একাধিক চিকিৎসকের কাছে যাবার প্রবণতা বেড়েছে রোগীদের মধ্যে।
বিভিন্ন গবেষণায়, বিগত ৫ বছরে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৫শ, যদিও প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। অথচ দেশের প্রচলিত আইনে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির তেমন কোন নজির নেই।
এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগুঠনগুলোর তথা কথিত ঐক্য ও উদাসীনতা অনেকটা দায়ী বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।
মৃত্যুর মিছিল প্রতিনিয়ত বাড়লেও বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলে বছরে অভিযোগের সংখ্যা হাতে গোনা। আস্থার সংকট কমাতে আক্রান্তদের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা বিএমডিসির।
বিএমডিসির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এবিএম মাকসুদুল আলম বলেন, 'বিএমডিসি কোনো অভিযোগ পেলে তাতে গুরুত্ব দেয়। আস্থা সংকটের জন্য আমাদের যোগাযোগটা বাড়ানো উচিত।'
আইনের সংশোধন, অপরাধীর কঠোর শাস্তি আর চিকিৎসকদের মধ্যে দায়িত্বশীলতার অনুভূতি বাড়ানোর মাধ্যমে এমন মৃত্যু রোধ করা সম্ভব বলে মত বিশ্লেষকদের।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন