এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এমপি ও ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থকদের দ্বন্দ্বের জেরে রাজধানীর বাড্ডার বেরাইদে কামরুজ্জামান দুখু (৩৬) হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই নিহত কামরুজ্জামান। গুলি করে হত্যার পর চার দিন পেরিয়ে গেলেও ঘাতকদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় প্রধান আসামি ফারুক আহমেদ ওরফে ভাগ্নে ফারুক ও মহসিনসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানা হত্যা মামলা হয়েছে। বুধবার রাতে জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন বলে জানিয়েছেন বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী।
রোববার বিকেলে বেরাইদ ক্রাউন সিমেন্ট কারখানার কাছে ঢাকা-১১ আসনের সরকার দলীয় এমপি একেএম রহমতউল্লাহ ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জাহাঙ্গীর আলমের ভাই কামরুজ্জামান দুখু। এ ছাড়া ওই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ আটজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়েছে। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাড্ডার এমপি একেএম রহমতুল্লাহর ভাগ্নে ফারুক ও ইউপি চেয়ারম্যান ও বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরের মধ্যে বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি বেরাইদ ইউনিয়ন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে অন্তর্ভুক্ত হলে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এমপিপুত্র হেদায়েতুল্লাহ রণ ও জাহাঙ্গীর আলম। এরপর থেকে এমপি গ্রুপ ও জাহাঙ্গীর গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়।
একই সূত্র মতে, বাড্ডার বেরাইদ ক্রাউন সিমেন্ট ফ্যাক্টরি নিয়ন্ত্রণ করত কামরুজ্জামান দুখু। ওই ফ্যাক্টরি থেকে প্রতিমাসে তার আয় ছিল অন্তত ৫ লাখ টাকা। বেশ কয়েক মাস ধরে ফ্যাক্টরিটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছিল এমপি সমর্থক ভাগ্নে ফারুকের সহযোগীরা। এর জের ধরেই রোববার বিকেলে বড় বেরাইদ ফোর্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বিল্ডার্সের সামনে উভয় গ্রুপের সমর্থকরা অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে ওই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
হত্যাকাণ্ডের পর নিহত কামরুজ্জামান দুখুর বড় ভাই ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, স্থানীয় এমপি রহমতুল্লাহর ভাগ্নে ফারুকের নেতৃত্বে অতর্কিতে গুলি চালিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ভাই কোনো রাজনীতি করত না। সে নিছক ব্যবসায়ী। আমি ডিএনসিসির উপনির্বাচন নিয়ে মামলা করা ও নিজে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় এমপি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি একেএম রহমতুল্লাহ জানান, এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচার। কে কী বলল, সে বিষয়ে সেই ভালো বলতে পারবে। পুলিশের তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ভাই কামরুজ্জামান দুখু হত্যার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ভাগ্নে ফারুকসহ ২৭ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলাটি বিলম্বে হলেও আমরা ঘাতকদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা আগ থেকেই করে আসছি। একই সঙ্গে নেপথ্যের কারণ উদঘাটনেও তৎপর রয়েছে পুলিশ।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন