দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানীতে শুরু হয়েছে র্যাব-পুলিশের বিশেষ অভিযান। রামপুরা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে কুখ্যত মাদক ব্যবসায়ী দাদা সজলসহ ২০জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে ৫শ’ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হলেও এখন পর্যন্ত ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে স্থানীয় মাদক সম্রাজ্ঞী খ্যাত আয়শা আক্তার মনিরা ওরফে মনি। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই রামপুরা মাদকমুক্ত হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মনিরার খোঁজে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। স্থানীয় সূত্র জানায়, পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হওয়া মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে দাদা সজলসহ ন্যূনতম ৬ জন মনিরার সহযোগী হিসেবে পরিচিত। এই মনিরাকে ইতোপূর্বে একাধিকবার র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছে। আদালত থেকে জামিনে বের হয়েই পুনরায় সে মাদক ব্যবসা শুরু করে। সে তার নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পশ্চিম রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী ও খিলগাঁওসহ অন্যান্য এলাকায় ইয়াবা সাপ্লাই দিয়ে থাকে। এই মাদক ব্যবসা করেই কোটি কোটি টাকা ও সম্পদের মালিক হয়েছে আয়শা আক্তার মনিরা। তার স্বামী মারুফও এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে যারাই রুখে দাঁড়াবে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, অপপ্রচার ও কুৎসা রটনা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন অভিযোগে রামপুরা থানায় মনিরা ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে রয়েছে শতাধিক জিডি।
গত ৫ জুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর মাদক প্রতিরোধে সহযোগিতা প্রসঙ্গে একটি অভিযোগ করা হয়েছে আয়েশা আক্তার মনিরার বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছে, মনিরার ভয়ে এলাকাবাসী তটস্থ থাকে। তার নেতৃত্বেই রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, খিলগাঁওসহ বিভিন্নস্থানে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালিত হয়ে থাকে। অপরদিকে, গত ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর শাম্মী আক্তার সীমা নামের এক ভুক্তভোগী মনিরা, দাদা সজল, মনিরার বিয়াইসহ আরো ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় একটি জিডি করেন। জিডিতে বলা হয়, তিনি (শাম্মী) রামপুরা থানার ২২ নং ওয়ার্ডের মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (মহিলা কাউন্সিলর পদে) হিসেবে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে অভিযুক্তরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের অপবাদ, কুৎসা রটনা ও মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ করছে যাতে করে তার রাজনৈতিক ক্যরিয়ার নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে অশ্লীল কল্পকাহিনী বানিয়ে বিভিন্ন অনলাইনে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাপিয়ে মান-মর্যাদা ক্ষুন্নের ষড়যন্ত্র করছে। গত ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর ৫ হাজার কপি পোস্টারসহ র্যাব-৩ এর হাতে আটক হয় মনিরা। ২০০২ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ওই মনিরা তার বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করতো। পরে তার ভাই চোরা সুমন ও সে বাসা থেকে ৩১ হাজার টাকার মালামাল চুরি করে। এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন সময়ে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করা হয়। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। গত ২০১৭ সালের ২১ জুলাই মনিরা ও তার সহযোগিরা সীমার ছেলে রিফাতকে আটক করে মাদক দিয়ে পুলিশে দেয়ার চেষ্টা চালায়। এছাড়াও তারা রাজনৈতিকভাবে অযোগ্য ঘোষণার জন্য মনিরাসহ তার সহযোগিরা ষড়যন্ত্র করছে। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানান শাম্মী। জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আ. রউফ তদন্ত শেষে সত্যতা পেয়ে গত ২১ এপ্রিল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারীর জন্য আদালতে আবেদন করেন।
এসবিসি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন