ঝালকাঠি ও বরিশাল বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের অবসান হয়নি। দীর্ঘ ছয় মাস পর চালু হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় আবারো বন্ধ হয়ে যায় বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ১০ রুটে সরাসরি বাস চলাচল। ঝালকাঠি মালিক সমিতির বাস পটুয়াখালী-কুয়াকাটা-বরগুনা রুটে চলতে না দেয়ার দ্বিতীয় দিনের মতো সকাল থেকে এ অচলাবস্থা চলছে।
বরিশাল থেকে সরাসরি ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বাউফল, বরগুনা, কুয়াকাটা, ভান্ডারিয়া, পিরোজপুর, পাথরঘাটাসহ ১০টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এসব রুটের হাজার হাজার যাত্রী ভোগান্তি পোহাচ্ছে। যাত্রীদের ৫ কিলোমিটার পথ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অটো ও মহেন্দ্র বা অন্য যানবাহনে করে ঝালকাঠির সীমান্তে কালিজিরা নামক বাসষ্টান্ডে নামতে হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পরে প্রশাসন হস্তখেপে গত ১৩ জুন বরিশাল থেকে ঝালকাঠি রুটে সরাসরি বাস চলাচল শুরু হয়। কিন্তু শুক্রবার থেকে ঝালকাঠি জেলা বাস মালিক সমিতি তাদের বাস বরিশাল রুপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে সরিয়ে নেয় ঝালকাঠি কালিজিরা ব্রিজের কাছে নিয়ে আসে। পরে তারা বরিশাল নগরের রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কালিজিরা ব্রিজের ওপারে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত রায়াপুরা এলাকায় অস্থায়ী বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী পরিবহন শুরু করেন।
অপরদিকে বরিশাল মালিক সমিতির রুপাতলী থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশে ছেড়ে আসা সকল বাস ঝালকাঠির মালিক সমিতি রায়াপুর নামক স্থানে তা আটকে দেওয়া হয়। পরে প্রশাসনের সহায়তায় বাস সেখান থেকে ছাড়িয়ে ঝালকাঠির উদ্দেশে পাঠানো হয়। কিন্তু ঝালকাঠি বাসস্ট্যান্ডে বরিশালের বাস গেলে গাড়ি ভাঙচুর ও স্টাফদের মারধর করার অভিযোগ তুলেন বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন। এ প্রতিবাদে বরিশালের রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস মালিক ও শ্রমিক নেতারা দক্ষিণাঞ্চলের ১৫টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন।
ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি সহ-সভাপতি মাহাবুবুল আলম জানান, ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি জানিয়েছে, বরিশাল-পটুয়াখালী-বরগুনা-কুয়াকাটা রুটে ঝালকাঠি মালিক সমিতির বাস চলাচল করার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বরিশালের সাথে ঝালকাঠির বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট চলবে বলেও জানান ঝালকাঠি আন্তজেলা মালিক সমিতি।
ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির দাবি, বরিশাল কুয়াকাটা রুটে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলাধীন আট কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়ক দিয়ে বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালীর মালিক সমিতি তাদের বাস চালালেও ঝালকাঠির কোনো বাস চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না।
বিভাগীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বারবার বাস চলাচল স্বাভাবিক করা হলেও বরিশাল মালিক সমিতির কারণে তা প্রতিবারই বন্ধ হয়ে যায়। তাদের আল্টিমেটাম অনুযায়ী দ্বিতীয় দিনের মতো বরিশাল থেকে আবারও ঝালকাঠি ও ঝালকাঠি হয়ে অন্যান্য রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বরিশালের বাস ঝালকাঠিতে প্রবেশ করতে পারছে না এবং ঝালকাঠি মালিক সমিতির কোন বাস রুপাতলী বাসস্ট্যান্ডে যেতে পারছে না।
ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, বরিশাল কুয়াকাটা রুটে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলাধীন আট কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়ক দিয়ে বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালীর মালিক সমিতি তাদের বাস চালালেও ঝালকাঠির কোনো বাস চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, বিভাগীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বারবার বাস চলাচল স্বাভাবিক করা হলেও বরিশাল মালিক সমিতির কারণে তা প্রতিবারই বন্ধ হয়ে যায়। ওদের আল্টিমেটাম অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সকালে বরিশাল থেকে আবারও ঝালকাঠি ও ঝালকাঠি হয়ে অন্যান্য রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বরিশালের বাস ঝালকাঠিতে প্রবেশ করতে পারছে না।
প্রসঙ্গত, রুটের ন্যায্য ভাগ নিয়ে বরিশাল বাস মালিক সমিতির সঙ্গে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্ব দেখা দিলে গত ৩ জানুয়ারি বরিশাল থেকে ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনার বেশ কয়েকটি রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির কোনো বাস বরিশালে প্রবেশ করতো না এবং বরিশালের রুপাতলীস্থ বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস সমিতির কোনো বাস ঝালকাঠিতে যেতে পারতো না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন