নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে অনড় বিএনপি। তবে এ নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে চাইছেন দলটির হাইকমান্ড। একই সঙ্গে তৃণমূলকে সক্রিয় করার মধ্য দিয়ে ছোটখাটো দ্বন্দ্বও মিটিয়ে নিতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলায় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গঠিত ৪০টি টিমকে সক্রিয় করতে চিঠি দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। বৃহস্পতিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম প্রধানের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে আগামীকাল শনিবার থেকে সংশ্লিষ্ট জেলার টিম প্রধানদের কার্যক্রম শুরু করে ৭ মে’র মধ্যে তা শেষ করতে বলা হয়েছে। তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থাসহ সার্বিক বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তা কেন্দ্রে জমা দিতেও বলা হয়েছে টিম প্রধানদের। চিঠিতে দলের চেয়ারপারসনের বরাত দিয়ে টিম প্রধানদের বেশ কিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের নিয়ে কর্মিসভা করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কর্মিসভার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের তা অবহিত করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলার সব কেন্দ্রীয় নেতাকে টিমে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে। জেলার উদ্যোগে এসব কর্মিসভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের অবস্থান ও দলের ঐক্য সম্পর্কে বক্তব্য রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে টিম প্রধানদের।
জানা গেছে, জেলা সফরকালে প্রতিটি টিম তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট জেলার একটি সাংগঠনিক প্রতিবেদন তৈরি করবেন। বিশেষ করে আন্দোলন করার মতো সাংগঠনিক সক্ষমতা রয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে বিস্তারিত থাকবে এ প্রতিবেদনে। যারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চান, নিজ নিজ এলাকায় তাদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টিও স্থান পাবে তাতে। জেলায় কোনো বিরোধ থাকলে তা মেটানোর চেষ্টার তাগিদ দিয়ে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সম্ভব না হলে তার কারণ উল্লেখ থাকবে প্রতিবেদনে।
বিএনপির ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা সফরের জন্য গঠিত ৪০টি টিমে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মীর মোহাম্মদ নাছির, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, আতাউর রহমান ঢালি, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ। পটুয়াখালী জেলার টিম প্রধান হাবিবুর রহমান হাবিব শনিবারই জেলার কর্মিসভায় যাচ্ছেন। এ কর্মিসভাকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে আছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী জেলা ও মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমের প্রধান ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি মহাসচিব স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত তিনি তার কার্যক্রম শুরু করবেন। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার টিমের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানকে। তিনি চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে যুগান্তরকে বলেন, দ্রুত সংশ্লিষ্ট এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
যশোর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমের প্রধান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, এ সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়া। আমরা মনে করি, আমাদের নিরপেক্ষ সরকারের যে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে, তা চূড়ান্ত অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি আমরা মনে করি, শেষ পর্যায়ে গিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হবে, ওই নির্বাচনে অংশ নিতে আলাদা করে যাতে প্রস্তুতি নিতে না হয়, সেটা মাথায় নিয়ে এ সফরে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে অংশ নেয়া নেতারা একমত হয়েছেন যে, চলমান পরিস্থিতিতে আর ঘরে বসে থাকা যাবে না। এখনই নেতাকর্মীদের সক্রিয় করে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতিও রাখতে হবে। দলের কোনো কোনো নেতা খালেদা জিয়াকে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার প্রস্তাবও দেন। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একই প্রস্তাব দেন বিএনপিপন্থী কয়েকজন বুদ্ধিজীবীও।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স যুগান্তরকে বলেন, সারা দেশের যে অবস্থা, ইচ্ছা হলেই তো কর্মিসভা করা যায় না। পুলিশ অনুমতি পেলেই কেবল সম্ভব। তারপরও আমরা নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে দলের চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।
সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান দেশে যে জটিল পরিস্থিতি বিরাজ করছে- এ অবস্থায় যদি বিএনপির সিনিয়র নেতারা তৃণমূলে এসে একটু সময় দেন এবং তাদের আশার কথা শোনান তাহলে নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে ওঠবে বলে মনে করি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সঠিক সময়েই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন