ঢাকা ‘টিকেট কাটা ছিল। ঢাকা যাত্রার কিছুক্ষণ আগে জানলাম অনুষ্ঠান হবে না। আমরা হতাশ।’ বললেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিএনপিপন্থি সিনিয়র শিক্ষক নেতা।
পরিস্কারভাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী থেকে ৫০ জনের একটি গ্রুপ ‘বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী সমাবেশে’ যোগদান করার জন্য তৈরি ছিলাম। কিন্তু নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে অনুষ্ঠানটি হতে পারে নি।’
একই হতাশার সুর দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের মধ্যেও লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকায় যোগ দেওয়ার প্রাক্কালে অনুষ্ঠান বন্ধের খবর পেয়ে চট্টগ্রামের বুদ্ধিজীবীরা ক্ষুব্ধ। নগরে একজন সিনিয়র শিক্ষকের বাসায় বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য তাঁরা শুক্রবার দুপুরে বসেন। সেই সভায় অংশ নেওয়া একজন টেলিফোনে জানান, ‘কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। ফোন করে উদ্যোক্তাদেরকেও পাচ্ছি না। তবে বিভিন্ন সূত্রে নেতাদের মধ্যকার কোন্দলের খবর পাচ্ছি। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে বিএনপি’র ভবিষ্যত নিয়ে আমরা সত্যিই উদ্বিগ্ন।’ তিনিও তাঁর নাম যেন রিপোর্টে ছাপা না হয়, তেমন শর্ত দিয়ে বলেন, ‘বিএনপিতে এখন এতো গ্রুপিং-দলাদলি যে নিজের নাম প্রকাশ করে কারো বিরাগভাজন হতে চাই না।’
একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি’র আমলে ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনারত এমন একজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমরা সব সময় বলি যে সরকার আমাদের কাজ করছে দিচ্ছে না। এটা বিএনপি’র ক্ষেত্রে সর্বাংশে সত্য নয়। বিএনপি কাজ করতে পারছে না নিজেদের অযোগ্যতা ও হিংসা-বিদ্বেষের কারণে।’ বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী সমাবেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত এই প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা ইতিবাচকভাবে অংশ গ্রহণ করতে চাই। কাজ না করলে আমাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব থাকবে না। আওয়ামী লীগ দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানামুখী কাজ করে চলেছে। বিএনপি সমালোচনা ছাড়া আর কি করছে? আমরা চেয়েছিলাম বুদ্ধিজীবী সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপিকে সঠিক দিক-নিদের্শনা দিয়ে গতিশীল করতে। কিন্তু নেতৃত্বে আসীন কিছু ব্যক্তির নিজস্ব দ্বন্দ্ব ও লড়াইয়ের কারণে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরা একত্রিতভাবে কাজ করতে পারল না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের প্রধান নেতা হওয়ার দৌঁড়ে নিয়োজিতদের সকলেই এতো বড় একটা আয়োজনকে নিজের পকেটে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। এতে ইন্ধন দেন বিএনপির কয়েকজন পেশাজীবী ও সাংবাদিক উপদেষ্টা। সমাবেশ থেকে তরুণ ও উদীয়মান পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী নেতৃত্বের উত্থান হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা শঙ্কিত হন। ফলে আয়োজনে নানা বিপত্তি ও উত্তেজনা দেখা দেয়। এদিকে, শুক্রবার সারা দিনই বুদ্ধিজীবী সমাবেশ না হওয়ার জন্য বিএনপি মহলের পক্ষগুলো একে অপরকে আয়োজনটি ‘স্যাবোটাজ’ করার জন্য অভিযোগ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিএনপিপন্থি শিক্ষক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’কে জানান, আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি বা জামায়াতের মতো বিএনপিতে বুদ্ধিজীবীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ, পরিবেশ ও স্বাধীনতা নেই। বিএনপি’র ক্ষেত্রে সব সময়ই দেখা যায়, বুদ্ধিজীবীদের সামনে কয়েকজন বিশেষ সাংবাদিক, পেশাজীবী ও চিকিৎসক নেতা এসে বসে থাকেন। সিনিয়র শিক্ষাবিদদেরকেও তাঁরা পাত্তা দেন না। তাঁরা নিজস্ব কোটারির মাধ্যমে দলের বুদ্ধিজীবীদের বিকাশের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, কোটারি ও নিজস্ব পকেট তৈরি করতে গিয়ে এই গ্রুপটি নিজের লোক না হলে বিএনপিপন্থিদেরও ঠাঁয় দেয় নি। চরম ব্যক্তি ও গোষ্ঠিতান্ত্রিকতার কারণে তাঁরা উদার বিএনপিপন্থি ও সাধারণ সাংবাদিকদের দ্বারা বিতাড়িত হয়েছেন। তরুণ ও উদ্যমশীল বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবীদের দ্বারা এই ক্ষতিকর গোষ্ঠীকে দলের মধ্য থেকে উৎখাত করা না হলে বিএনপি’র বুদ্ধিজীবীদের সংগঠিত করা যাবে না। দল ও বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তৃণমূলের পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদের সংযোগ সাধন করাও সম্ভব হবে না। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘বার বার ব্যর্থ হয়েও বিএনপি কেন দলের আগাছা নির্মূল করছে না এবং শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে না, সেটাই আশ্চর্য বিষয়!’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন