বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে কিছুই পাওয়া যায়নি। এদিকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী নাশকতা সামগ্রীর খোঁজে’ এ অভিযানে অফিসটি ‘তছনছ’ করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
২০ মে শনিবার সকাল ৭.২০ মিনিট থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কার্যালয়ে এ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়, সকাল ৮টা থেকে নয়টা পর্যন্ত তল্লাশি চলে।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, অভিযানে পুলিশের প্রাপ্তি ‘শূন্য’। অর্থাৎ তারা কিছুই পায়নি। পুলিশও এটি স্বীকার করেছে। সেখান থেকে কাউকে আটক বা কোনোকিছু জব্দ করাও হয়নি। আদালতের নির্দেশে এদিন সকাল ৮টার দিকে পুলিশের গুলশান জোনের ডিসি মোস্তাক আহমেদের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় তল্লাশি করে সকাল পৌনে ১০টার দিকে কার্যালয় ছেড়ে চলে যায় পুলিশ।
অভিযান শেষে সেখানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ডিসি) মোশতাক আহমেদ ছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশের ঢাকা উত্তরের ডিসি নাজমুল আহসানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক জানান, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর মতো কোনো কিছু হচ্ছে কি না তা জানতেই এ কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশ রয়েছে ওই কার্যালয়ে রাষ্ট্রবিরোধী কিছু আছে কি না তা খতিয়ে দেখার। তবে সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি। কাউকে আটকও করা হয়নি।
অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে খালেদার মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, সকালে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) কার্যালয়ে পুলিশ প্রবেশ করে। তবে কেন এবং কী কারণে তারা এই অভিযান চালায় তা আমরা জানি না।
তল্লাশির খবর পেয়েই সেখানে ছুটে যান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল। তল্লাশি শেষ হলে কিছু পর তাদের বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের রিজভী বলেন, অজ্ঞাতনামা জিডির ভিত্তিতে দলীয় কাউকে না জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পুলিশের এ তল্লাশি। তবে পুলিশ যাওয়ার সময় আমাদের কাছে লিখিত দিয়ে গেছে শূন্য প্রাপ্তি। সুতরাং তারা জানেই এখানে কিচ্ছু নেই।
ক্ষমতাসীন সরকার খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে চায় বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিএনপি প্রধানকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের সভ্যতার চরম পরিপন্থী।
বিএনপির নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে চায় সরকার এমন অভিযোগ করে দলটির এই নেতা বলেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য যখন সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে চায় সরকার।
দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটে তালা ছিল, সেই তালা ভেঙে তারা ভিতরে প্রবেশ করেছে। ভেঙে বিভিন্ন কক্ষেও ঢুকেছে। যদিও তারা কিছুই পায়নি।
কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকারী এক কর্মচারী জানান, কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে তারা (পুলিশ) নিয়ে গেছেন। উপরে উঠার সময় তালা ভেঙেছে। কেউ যাতে কিছু দেখতে না পারে এজন্য সিসি ক্যামেরা ঘুরিয়ে দেয়।
তল্লাশির খবর পেয়ে ঠাকুরগাঁয়ে অবস্থানরত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া তিনি বলেন, তারা (পুলিশ) সার্চ ওয়ারেন্টের কথা বলেছে, কিন্তু দেখায়নি। এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, এই সরকার ইচ্ছেকৃতভাবে অত্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে ব্যহত করতে চাইছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল, যে দলের চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তার কার্যালয়ে পুলিশি হামলা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ঘটনা এটাই প্রমাণ করেছে, গণতন্ত্রের লেশমাত্র এই দেশে অবশিষ্ট নেই। আমরা আবার বলছি, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ একটি গণতন্ত্রবিহীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্যে সরকার দেশ চালাচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন