গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। আড়াই ঘণ্টার নিষ্ফল অভিযানের ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে দলটি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট জনরা মনে করছেন, এতে বিএনপি ‘লাভবান’ হয়েছে। আর সরকারের ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ন হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে হুট করে এভাবে কোনো রাজনৈতিক কার্যালয়ে অভিযান চালানো ঠিক হয়নি। এতে জনগণের কাছে সরকারের ভুল বার্তা যায়; সরকার ও প্রশাসন ‘ইমেজ’ সংকটে পড়ে। তাই সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এ ধরনের অভিযান চলালো উচিৎ।
উল্লেখ্য, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ। সাড় ৯টায় অভিযান শেষ করে। অভিযানের আগে গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমাদের কাছে আদালতের নির্দেশনা আছে এই কার্যালয়ের ভেতরে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার। ওয়ারেন্ট রয়েছে, তা অনুযায়ী তল্লাশি শুরু করেছি।
খালেদার কার্যালয়ে অভিযানের ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী ড. মিজানুর রহমান শেলী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিশ্চিত হওয়ার পরই খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো প্রয়োজন ছিল। আজকের ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।’
এখানে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে জনগণের কাছে অবশ্যই ‘লাভবান হবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘চেয়ারপারনের কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশিতে বিএনপি লাভবান হবে, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’
২০ দলীয় জোটের এই শরিক নেতা বলেন, ‘বিএনপিকে অপদস্থ করার জন্য সরকার প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপটি গ্রহণ করেছে। যেহেতু বিএনপির এগিয়ে যাচ্ছে; ভিশন-২০৩০ দিয়েছে, সুতরাং তাদের এগিয়ে যাওয়াকে থামাতেই সরকার এ কাজটি করেছে।’
নিজ দলের প্রধানের কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান।
তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘বিএনপিকে অপমানিত ও বিব্রত করা হয়েছে। এটা দল সহজভাবে নিবে না। একটা খারাপ রাজনৈতিক ঐতিহ্য তৈরি হলো। যে ঐতিহ্য তৈরি হলো এটা অনেক দূর পর্যন্ত টানতে হবে।’
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার কার্যালয়ে পুলিশি হামলা চালিয়ে প্রমাণ করেছে দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র অবশিষ্ট নেই। তল্লাশিকালে পুলিশের কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট আছে কিনা দাবি করা হলে উপস্থিত তারা কোনো কাগজ-পত্র দেখাতে পারেনি।
অবশ্য ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘পুলিশি তল্লাশি একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক অফিস (খালেদা জিয়ার গুলশান অফিস) বলেই কথাটা উঠেছে। পুলিশ হয়তো কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে তল্লাশি চালিয়েছে।’
এদিকে তল্লাশি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘সরকার ইতিবাচক রাজনীতি করে। আওয়ামী লীগ কখনও ষড়যন্ত্র করে না। ষড়যন্ত্র তারাই করে যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে। আর আওয়ামী লীগ এই ধরনের (খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি) ষড়যন্ত্র করতে যাবে কেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তল্লাশি করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপি সব সময় ষড়যন্ত্র করে। এর আগেও বিএনপি এ ধরনের সাজানো নাটক করেছে। বিষয়টি আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী একটি জিনিস পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে। আর তা হলো এখানে কোনো ইন্টেনশন ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ তার রুটিন ওয়ার্কটাই করেছে’
যেভাবে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আকস্মিকভাবে গুলশান কার্যালয়ের সামনে হঠাৎ করেই পুলিশ মোতায়েন হয়। ৭টার দিকে গুলশান জোনের ডিসি মোস্তাক আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে ঢোকে। কার্যালয়ের ভেতরের কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে পুলিশ কার্যালয়ের মূল ভবনে প্রবেশ করে। এ সময় পুলিশ ভবনটিতে তল্লাশি চালায়। তল্লাশির সময় চারটি কক্ষের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে এবং তালাগুলো নিয়ে যায়।
পুলিশ কার্যালয়ে প্রবেশ করে অফিসের দুই কর্মচারী রাশেদুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম স্বপনকে একটি কক্ষের মধ্যে আটকে রাখে। এছাড়া তাদের মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয়। তবে তল্লাশি শেষে তাদের মোবাইল ফোন ফেরত দেয় পুলিশ।
এ ব্যাপারে রাশেদুল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘পুলিশ কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে এবং চারটি কক্ষের তালা ভাঙে। আমাদেরকে একটি রুমে আটকে রাখে। আমাদের মোবাইল ফোন নিয়ে বন্ধ করে রেখে দেওয়া হয়। তল্লাশি শেষে যাওয়ার সময় আমাদের মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দেয়।’
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘অভিযানের সময়ে পুরো কার্যালয়ের কাগজপত্র তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ অনুমতি ছাড়াই কার্যালয়ের প্রধান ফটকের গেটের তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশ করে। অফিসের ভেতরে থাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) ভেঙে ফেলা হয় বলেও দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন