একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ঈদুল ফিতরে দলের নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ঈদ উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি আদায়ে জনমত গড়ে তোলার জন্য এই ঈদকে কাজে লাগাতে নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়েছেন দলীয় প্রধান।
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে। তারা বলেন, বিগত দিনে সরকারের রোষানলে পড়ে দলের অনেক নেতাকর্মী বাড়িঘর ছাড়া। তাদের পরিবার অসহায় জীবন যাপন করছেন। তাই দলের নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- নির্যাতিত ও গুম-খুনের শিকার পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
এছাড়া নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি আদায়ে জনমত গড়ে তুলতে এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশনা দিয়েছেন চেয়ারপারসন। সরকারের অনৈতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করাই হবে এখন দলের লক্ষ্য। কারণে ঈদের পর দাবি আদায়ে আন্দোলনের জন্য তৈরি হতে হবে। আগামী দিনে বিএনপির সামনে আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।
বিএনপি একাধিক নেতা পরিবর্তন ডটকমকে জানান, গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে দলের নেতাদের মধ্যে যারাই যাচ্ছেন, তাদেরকে তিনি বলছেন- ‘আপনারা যার যার এলাকায় যান। দলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ান, জনগণের পাশে দাঁড়ান। সুযোগ পেলে গণসংযোগ করুন। জনগণকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য তৈরি করুন।’
এদিকে ঈদের পর নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দিয়ে মাঠে নামার ইঙ্গিত বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেই দিয়েছেন। রোববার রাজধানীর গুলশানে এক ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন হবে না। সেই নির্বাচনে কেউ অংশ নেবে না। সেই নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। ঈদের পরপরই সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেব। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে।’
ঈদকে সামনে রেখে দলীয় প্রধানের নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ঈদে যার যার এলাকায় এলাকায় গিয়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলার জন্য ম্যাডাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। ঈদের আগে এবং পরে এলাকায় অবস্থান করে মানুষকে সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে অবহিত করাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা আছে।’
তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবি আদায়ে জনগণ ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তাদেরকে জানাতে হবে- আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। জনগণের অধিকার রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য তৈরি করতে হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিনই গুলশান অফিসে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতারা দেখা করেন। এসময় খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘হ্যাঁ, নির্দেশনা তো আছেই। নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ঈদ করা, জনগণের সঙ্গে কথা বলা।’
চট্টগ্রামে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর হামলার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য যেভাবে হামলা, মারামারি করছে তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে।’
এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ম্যাডামের নির্দেশনা আছে যারা যার এলাকায় গিয়ে ঈদ করার জন্য। যেখানে যেখানে সুযোগ হয় গণসংযোগ করার জন্য। কর্মীদের নিয়ে ঈদ করার জন্য। প্রতিদিনই দলের কেউ না কেউ ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করছেন। তাদেরকেই এই নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি।’
বিগত ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বয়কট করলেও আগামীতে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কোনো রকম ছাড়া দিতে নারাজ বিএনপি। যে কারণ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার দাবি আদায়ের আন্দোলনের প্রস্ততিসহ দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও শেষ করেছে দলটি। সময় মতো এ তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন