‘আবারো ভুল না করে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নেয়ায়’ আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ আহ্বানের মধ্যে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখলেও ‘খুব আনন্দের কথা’ এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘শুভ বুদ্ধির উদয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা।
তবে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ কাটেনি। কারণ ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ষড়যন্ত্র হলে সে ফাঁদে তারা কিছুতেই পা দেবেন না।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন দেশে-বিদেশে কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। এটা ক্ষমতাসীনরাও জানে। তারা বলেছিলো এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। শিগগিরই নির্বাচন দেয়া হবে। কিন্তু তারা কথা রাখেনি। মুখে যাই বলুক এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ চাপে ছিলো এবং আছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান দেশি-বিদেশী চাপ এবং আত্ম উপলব্ধির ফল। আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে, যত ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন, এবার বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন হবে না।
তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রধান বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়েছেন, এটা আনন্দের। অন্যদিকে উদ্বেগ আছে। কারণ তারা নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে কোনো কথা বলেনি। ফলে এখানে ষড়যন্ত্রের সুযোগ রয়েছে। বিএনপি সেই ফাঁদে পা দেবে না। কারণ এই নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েই যত সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান হতেই হবে।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিছু দিনের মধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। তখন এটা নিয়ে সবাই মতামত দেবেন। তারপর সংযোজন বিয়োজন করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সহায়ক সরকার পদ্ধতি চূড়ান্ত করার উদ্যোগ আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। তাহলেই বোঝা যাবে আওয়ামী লীগ সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
বৃহস্পতিবার সুইডেনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তাকে (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) এবং তার দলকে সুস্থ রাজনীতির সঠিক পথে আসার আহ্বান জানাতে চাই। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তারা যে ভুল করেছিল, এর পুনরাবৃত্তি করা তাদের উচিত নয়। জনগণ যাদের পছন্দ করবে তাদেরই ভোট দেবে।”
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপিকে আহ্বান জানিয়েছেন। খুব আনন্দের কথা। আপনার মুখ থেকে এমন কথা আগে কখনো শুনিনি, এখন শুনালম। তাতে আমরা কিছুটা আনন্দিত হয়েছি। তাহলে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে না।”
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, “সুইডেনে আপনি বলেছেন, আমরা যেন ২০১৪ সালের মতো ভুল না করি, নির্বাচনে যেন যাই। কিন্তু আমরা তো নির্বাচনে যেতে চেয়েছি। আপনারা চাতুরি করে, প্রতারণা করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে, বুঝতে না দিয়ে সংবিধান সংশোধন করে কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করলেন।”
কিছুদিনের মধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। আওয়ামী লীগ সেটি মেনে নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন দলটির এই মুখপাত্র।
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, যদি আওয়ামী লীগের শুভ বুদ্ধি উদয় হয়ে থাকে; তাহলে তারা সেটি মেনে নিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচন দেবে, যা সকলের গ্রহনযোগ্য ও অংশগ্রহনমুলক হয়। এর মাধ্যমে দেশের এই রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ ঘটবে।”
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “শেখ হাসিনা উপলব্ধি করতে পেরেছেন, এবার একতরফা নির্বাচন করা সম্ভব না। করতে গেলে তার এবং তার দলেরই বেশি ক্ষতি হবে। এজন্যই তিনি বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।”
শেখ হাসিনা নিজেও তার অধীনে নির্বাচন চান না বলে মনে করেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।
‘সহায়ক সকার পদ্ধতি সংবিধানে নেই’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “উনি কী বললেন তাতে কিছুই যায় আসে না। জনগণ কী চায় সেটাই মূল বিষয়।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলে আসছেন দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। বিএনপি বলছে, তাহলে নির্বাচনে যাব না। তার মানে প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে নির্বাচনে রাখবেন না। কিন্তু সেই প্রধানমন্ত্রী যখন বিএনপিকে নির্বাচনে আহ্বান করেন তখন বুঝতে হবে, বিএনপির সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তিনি পজেটিভলি নেবেন। এটা প্রত্যাশিত।”
তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, তিনি গতবারের মতো লজ্জাজনক নির্বাচন চান না।”
অপর ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান বলেন, “জাতি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। আর সেই নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে নয়, হবে সহায়ক সরকারের অধীনে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে জনদাবি উপেক্ষা করা যাবে না। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যায়।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও সকল দলের অংশগ্রহণ নিয়ে সরকার প্রচণ্ড দেশি-বিদেশি চাপে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সেই চাপেরই প্রতিফলন।”
যতক্ষণ পর্যন্ত সহায়ক সরকার পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত একতরফা নির্বাচনের আশঙ্কা রয়েই যায়, বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নিউজবাংলাদেশ.
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন