নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রাখতে বিএনপি। ঈদের পরেই রূপরেখা জাতির সমানে তুলে ধরবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে সহায়ক সরকারের দাবি সহজেই সরকার মানবে না তা আমলে নিয়েই আন্দোলনকেও মাথায় রেখেছে বিএনপি। একই সঙ্গে নিজেদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং বিজয় নিশ্চিত করতে কৌশলে এগুচ্ছে দলটি। নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন হিসাব কষতে শুরু করেছে দলটি। সারা দেশে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জনপ্রিয়তা বিবেচানায় নিয়ে নামের তালিকা গ্রহণ, দলের মধ্যে ঐক্য, মামলা-হামলা মোকাবিলা, সবই করছে বিএনপি। তবে প্রকাশ্যে নয়, গোপনে।
ইতোমধ্যে সারা দেশে দলের সর্বশেষ সাংগঠনিক অবস্থা জানতে ৫১টি টিমের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে বিএনপি। ইতিমধ্যে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার বেশির ভাগই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের জন্য ৯০০ প্রার্থীর নাম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে জমা হয়েছে। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ এবং তাদের মধ্যে উৎসাহ যোগাতে অঙ্গসংগঠনের কমিটি ঘোষণা করেছে খালেদা জিয়া। পবিত্র রমজাম মাসে সারা দেশে এবং ঢাকাতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের কাছাকাছি এসে দলের মধ্যে বন্ধন শক্তিশালি করছে বিএনপি।
সরকারকে বিএনপির দাবি আদায়ে বাধ্য করতে ২০ দলীয় জোট নেতাদের সাথে সুম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে নিজ নিজ জনপ্রিয়তার বিবেচনায় আসন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকাশ্যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বললেও ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি, সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে। পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে ক্ষমতাবলয়ের বাইরের রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী এবং বিভিন্ন দেশে কুটনৈতিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা শুরু করেছে। সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত দলের বাইরে থাকা নেতাদের আবার দলে ফিরিয়ে আনার প্রয়াসও চলছে।
নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচন বর্জনের কথা ভাবছে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে বিএনপি। তবে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দর-কষাকষিতে সব রকমের চেষ্টা চালাবে দলটি। সরকারকে চাপে রাখবে। যদি এই কৌশল সফল না হয় তবে দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে রাজপথের আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তাও করছেন নীতিনির্ধারকরা।
২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বয়কট করলেও আগামীতে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কোনোরকম ছাড়া দিতে নারাজ বিএনপি। রমজানের বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যেও এমনটা ফুটে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেছেন, ‘আগামীতে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচন হবে সহায়ক সরকারের অধীনে, সকাল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। বিএনপিকে বাদ দিয়ে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। হতে দেয়া হবে না। এদেশে নির্বাচন হবে সহায়ক সরকারের অধীনে, হাসিনার অধীনে নয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, ঈদের পরেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সহায়ক সরকারের রূপরেখা দিবেন। সরকার যদি মেনে নেয় তো ভাল, না মেনে নিলে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে বাধ্য করতে হবে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, আমরা আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার চাই। যে সরকার মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চত করবে। সে সহায়ক সরকার আলোচনার মধ্য দিয়ে হলে সবচেয়ে ভালো। সরকার যদি সেটি না করে ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে চায় তবে আন্দোলনের প্রয়োজন পড়বে। আলোচনা এবং আন্দোলন দুটাকেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। বিএনপি যে কোনো সময় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান বিএনপির এই নেতা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন