দেশের রাজনীতি ও আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার ছাত্র সংসদটি স্বাধীনতা বা গণতন্ত্রের শিকল খুললেও এখন সে নিজেই শিকলে বন্দী হয়ে আছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা সহ নানা জটিলতায় ২৬ বছর ধরে আটকে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ‘ডাকসু’ নির্বাচন। দেশের স্বাধীনতা কিংবা জাতীয় সংকটে ভূমিকা রাখলেও গণতান্ত্রিক ধারার ২১ বছরেই অচল ঐতিহ্যবাহী ডাকসু। স্বনামধন্য এ ছাত্র সংসদকে সচল রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি ছাত্র নেতাদের।
১৯২৪ সালে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ৭৬ বছরে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ নির্বাচনে তৈরি হয়েছে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। অথচ দেশে গণতান্ত্রিক ধারা শাসন ব্যবস্থা ফিরে আসার পর থেকেই গণতন্ত্র চর্চার আঁতুর ঘর খ্যাত প্রতিষ্ঠানটি এখন একেবারেই অচল।
ডাকসু অচল থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের যে কোনো দাবি কিংবা সুযোগ সুবিধা আদায়ে বছরের পর বছর ধরে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ডের সহ-সভাপতি সুস্মিতা রায় সুপ্তি বলেন, ডাকসুকে কেন্দ্র করে ছাত্র-ছাত্রীদের একটি সক্রিয় অবস্থানে ডাকসু নির্বাচন দিতেই হবে। শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে নির্বাচনের একটা পারিবেশ তৈরি করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই ডাকসু নির্বাচনে আহ্বান জানালেন ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা আমদের কাজ না। এটা আয়োজন করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষের। আমরা যেহেতু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বসবাস করি এক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই চাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত হোক।
অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানালেন ছাত্রদল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল সভাপতি আল-মেহেদী তালুকদার বলেন, অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন কবে হবে সেই দিন তারিখ ধার্য করা উচিত।
ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংসদটি কার্যকর করতে জাতীয় রাজনীতি ঐক্যমত জরুরি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচিত হবে এবং তারা কাজ করবে এধরনের প্রক্রিয়া আমরা দেখতে চাই। সে কারণে আমরা আশা করবো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একটা ঐক্যমতে পৌঁছাবেন। এবং তাদের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়মিত ছাত্রদের হাতে ফিরিয়ে দিবেন। এটা যদি করা হয় তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদগুলো কার্যকর করার প্রক্রিয়া একধাপ এগিয়ে যাবে।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পর সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়েও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাহায্য করেছে এই ডাকসু। কিন্তু গণতন্ত্র আসার পর হারিয়ে গেছে ডাকসু নিজেই।
সূত্র : নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন