বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে সহনশীলতার পরিচয় না দেয়া এবং এক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণে দলীয় দৃষ্টিকোণের বিষয়টি উল্লেখ করে ফেসবুকে লিখেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট জিয়া হাসান। সাম্প্রতিক সময়ে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আদালতের দেয়া রায়ের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রীদের মন্তব্যের বিষয়ে তিনি এসব বলেন।
ফেসবুকে জিয়া হাসান লিখেছেন,
“আমির হোসেন আমু, অপু উকিল এবং কামরুল ইসলাম যা বলেছেন তার থেকে, আমরা একটা জিনিস শিখতে পারি; সেইটা হইলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংখ্যালঘু নির্যাতন অব্লিক সেকুলারিজম এবং আদালত অবমাননা এমন তিনটা ছুরি; যা শুধু আওয়ামী লীগ ব্যবহার করতে পারবে, আর কোন পক্ষ পারবেনা। এইটা আওয়ামী লীগ করলে হালাল, বাকিরা করলে কেয়ামতের আলামত।
চিন্তা করে দেখেন, দেশ স্বাধীন না হইলেও আমরা পারলামেন্ট থাকতাম দাবী করে আমু সাহেব যে কথাটা বলেছে সেইটা যদি ইন্ডিপেন্ডেট বা সিভিল সোসাইটির কেউ বলতো তাকে কত বড় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী লোক হিসেবে গাল দেয়া হইতো। এই আলাপটা আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন দেশ চাইছে সেইটার কত কন্ট্রারি একটা কথা।
চিফ জাস্টিসকে নিয়ে অপু উকিল বলেছেন যে , তিনি প্রকৃত হিন্দু নন এই কথাটা যদি জামাত বা হেফাজতের কেউ বলতো তাহলে সেইটা নিয়ে কি হিন্দু বৌদ্ধ ক্রিসচিয়ান পরিষদ বা পুরো সেকুলার এস্টাব্লিশ্মেন্ট থেকে সংখ্যা লঘু নির্যাতন নিয়ে কি ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া হতো।
এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়, রায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা এবং আন্দোলনের যে ঘোষণা কামরুল ইসলাম দিয়েছেন সেইটা যদি বিএনপির কেউ বলতো এতো ক্ষণে তিনি আদালত অবমানানয় নত হয়ে কোর্ট থেকে ১৪ শিকের পেছনে পৌঁছে যেতেন বা পুরো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে পারসন নন গ্রাটা হয়ে জেতেন।
কিন্ত যেহেতু আওয়ামী লীগ বলেছে এই গুলো জাস্ট পলিটিক্স। যেন কিছুই হয়নি এমন ভাবে করে, আমরা হ্যাপিলি এভার আফটার দিন কাটিয়ে যাবো।
কোন ধরনের নৈতিক আনুগত্য বাদে শুধু মাত্র ক্ষমতাকে দখল করে রাখার জন্যে যে এই টুলস গুলো ব্যবহার হচ্ছে সেই গুলো যে কোন ক্লাস ফোরের বাচ্চার ও বুঝতে পারার কথা। কিন্ত আমাদের এলিটদের একটা অংশ এইটা বুঝতে পারেন না।
উনারা এই গুলো আমাদের সামনে দাড় করায় বলেন, এই পয়েন্ট গুলো নেগশিয়েট না করে-এই গুলোর প্রতি শত ভাগ আনুগত্যের ডিক্লারেশান না দিলে এই দেশে রাজনীতি করারই দরকার নাই, গণতন্ত্র আনার দরকার নাই। আগে এই তিনটা পয়েন্টে কন্সেন্সাস আনুন তারপর গণতন্ত্রের আলাপ করবো।
শুধু মাত্র একটা দলকে জনগণের ইচ্ছা বহির্ভূত ভাবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্যে ক্রিমিনাল ইন্টেন্ট দিয়ে কোন ধরনের নৈতিক আদর্শ বাদে যে আইডিওলজি দাড় করানো হয়েছে এবং তার ভিত্তিতে একটা মাফিয়া পলিটিক্স আয়োজন করা হয়েছে যেখানে প্রতিটা স্পেয়ার এমন কি ক্রিমিনাল স্পেয়ার দখল করে সেইটারও দলীয় করন করা হয়েছে।
সেই এজেন্ডাকে যারা চিনেও চিনতে পারেনা তাদের সবার আগে উচিত অন্যের কাছে পলিটিকাল কন্সেন্সাস চাওয়ার বদলে নিজের চোখের উপরে ঝাপসা চশমাটা ছুড়ে দিয়ে- সাদা চোখে রাষ্ট্রকে দেখা।
আপনেরা আওয়ামী লীগ হিন্দু নির্যাতন করলে, হালাল থাকেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অবমাননা করলে প্রবলেম দেখেন না, কোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আপত্তি করেন না তাইলে তো আপনেরা আওয়ামী লীগের মতই বিশ্বাস করেন, নির্বাচন হইলে ষড়যন্ত্র। তাই নির্বাচনের জনগণের ইচ্ছার রিফ্লেকশানের বদলে কন্সেন্সাস চান।
আর কোন মুক্তিযুদ্ধের হিস্টরিকাল কন্সেন্সাস খুজতেছেন? আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল নীতি তো সাম্য মানবিক মর্যাদা আর সামাজিক ন্যায়বিচার যার ভিত্তিতে মুজিবনগর সরকার গঠিত হইছে। সো সেই খানেও তো দাবী টিকেনা। ৭১ এর পরের সংবিধান তো পাকিস্তানের আমলের নির্বাচিত প্রতিনিধি দিয়ে করা। সো তাদের সংবিধান বড় নাকি মুক্তিযুদ্ধ যেই মূলনীতি দিয়ে গঠিত হয়েছে সেই মূলনীতি বড় ?
বরং বলি কি, নতুন কোন হিস্টরিকাল কন্সেন্সাস না খুঁজে যে কন্সেনেসাসের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে সেই মুলনিতির উপরে আস্থা রাখি যে আমরা এমন একটা রাষ্ট্র গঠন করবো যেই খানে কেউ অপু উকিল বা আমির হোসেন আমু বা আনিসুল হকের মত প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা ভাবনার কোন জায়গা থাকবেনা।
জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আগে নতুন করে কন্সেন্সাস যদি চান তবে, যাদের ক্ষমতায় রাখার নিশ্চিত করতে কন্সেন্সাস চাইতেছেন তাদের ক্রিমিনাল এক্টিভিটিকে স্বীকার করুন এবং তাদের কাছে আগে কন্সেসাস দাবী করেন। বাকিদের কাছে না।
বাংলাদশের জনগণের কাছে, সামনে আগানোর এবং সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের কন্সেন্সাস ইতোমধ্যেই আছে।
কেউ আঘাত পাইলে দুঃখিত।
কিন্ত, ব্যক্তিকে আঘাত করার জন্যে কথাটা বলানা বরং ব্যক্তির লেন্স দিয়ে ঢাকার এলিটদের একটা অংশের যে মাইন্ডসেট দেখা যাইতেছে তাদের সবার উদ্দেশেই দুই আনা জ্ঞান বিতরনের সুযোগ না ছাড়া।”
পাঠক মন্তব্য
oshoinkho dhoinnobad lekhok'ke.
এই অবস্থা আওয়ামীলীগ তৈরী করেছে। বিগত কয়েক বছরে বিরোধী মত,দল,জাতি ও গোষ্ঠীদের সহ্য করতে পারেনি। সবসময় দমনে ব্যস্ত ছিল। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটা চরম অন্যায়।
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন