বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এককথায় ঐতিহাসিক রায়। এই রায়ে দেশে গণতন্ত্রহীনতা, অপশাসন, রাজনৈতিক দলগুলোর বাস্তব পরিস্থিতি, নির্বাচন, অর্থনৈতিক অবস্থা সহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে,এ রায় জনগণের রায়, এ রায়ে সাধারণ জনগণের বিজয় সূচিত হয়েছে, সাধারণ জনগণের সকল আশা-অাকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে এই ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। বাস্তব কথা হলো এই রায় শুধু বিচার বিভাগ না বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল। রোববার রাজধানীর বাড্ডায় নিজ বাসভবনে পূর্বপশ্চিমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন তিনি।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সংসদ বিচারালয় না, সংসদ সংবিধান প্রনয়ন করে কিন্তু সংবিধানের ভুলত্রুটি সংশোধন করার একমাত্র এখতিয়ার শুধুমাত্র সুপ্রিমকোর্টের। সুপ্রিমকোর্টের রায়কে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী সভা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা গণতন্ত্রে প্রতি অশ্রদ্ধার প্রকাশ।
বিচারপতির পদত্যাগ চাই খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তিনি নিজেই একজন সাজা প্রাপ্ত অপরাধী, তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়েও পদত্যাগ করেননি, যিনি নিজেই জানেন না সাজাপ্রাপ্ত হলে পদত্যাগ করতে হয় তার পক্ষে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করাও অপরাধ।
আওয়ামী লীগ এই রায়ের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণ হিসাবে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, তারা সব সময় গণতন্ত্রের বিপক্ষে, যে রায় তাদের বিপক্ষে যায় তখনই তারা সেই রায়ের বিরোধিতা করে, যারা বাকশাল গঠন করে, বাকশালের পক্ষে তারা তো গণতন্ত্রের বিপক্ষে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।তারা ক্ষমতার অপব্যাবহার করে ক্ষমতায় থাকতে চায়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের ভাবনা নিয়ে সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, বিএনপি চাই সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে সহায়ক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সহায়ক বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই। দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না, যার প্রমাণ ২০১৪ সালের একদলীয় নির্বাচন ব্যবস্থা। দলীয় সরকারের অধীনে যে কতটা খারাপ নির্বাচন হয় সেটা প্রমাণ দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। যার নজির বিশ্বের অন্য কোন দেশে নেই। সুতরাং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা সহায়ক সরকার দরকার। আর যদি সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে তার প্রধান হিসাবে শেখ হাসিনা থাকতে পারবেন না। দলীয় কাউকে সহায়ক সরকারের প্রধান করা যাবে না।
সাবেক বিচারপতি খায়রুল হকের সমালোচনা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, খায়রুল হক আওয়ামী লীগের পক্ষের লোক, তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি। তারপরও তিনি বর্তমানে আইন কমিশনে নিয়োজিত, অথচ তিনি নিজেই আইন করেছিলেন বিচারপতিরা পরবর্তীতে সরকারের কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু তিনিই আবার আইন ভঙ্গ করেছেন। দুদু আরো বলেন, খায়রুল হক বিচারপতি থাকাকালীন সরকারের কাছ থেকে চিকিৎসার নামে দশ লাখ টাকা নেন, এতেই প্রমাণিত হয় তিনি সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছেন। আমরা খায়রুল হকের পদত্যাগ দাবি করছি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাওয়ার জন্য বিএনপি প্রস্তুত এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনেও যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তখন নির্বাচন করা হয়েছিল দলীয় সরকারের অধীনে যাতে আমরা অংশগ্রহণ না করি, আমদেরকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্য দলীয় সরকারের অধীনে নামমাত্র নির্বাচন করেছিল আওয়ামীলীগ সরকার, যে নির্বাচনের কোন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, যে নির্বাচন ছিল ভোটার বিহীন নির্বাচন, একাদশ সংসদ নির্বাচনও তারা দলীয় সরকারের অধীনে করার চেষ্টা করছে,দেশে রাজনীতির করার মত কোন পরিবেশ নেই,দেশে এখন অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে এখান থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়া, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি জয়লাভ করবে।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা সর্বপ্রথম আলোচনা করবো, আলোচনার বিষয় থাকবে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকার প্রধান করতে হবে দলীয় সরকারের বাইরের কাউকে। যদি আলোচনা ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা আন্দোলনে যাবো। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে, দেশে আওয়ামী লীগ সরকার একনায়কতন্ত্র বিরাজ করতে চাচ্ছে। তারা অন্য কোন দলকে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। তারা জবরদখল করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। দেশের সাধারণ জনগণ এটা মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, সারাদেশের জনগণ এখন আওয়ামী সরকারের ওপর বিরক্ত, তারা বিএনপির সাথে আছে। সাধারণ জনগণ চান বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসলেই জনগনের আশা পূরণ হবে। আমরা চাইবো সহায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন; জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রাখবেন। আর যদি তারা জবর দখল করে ২০১৪ সালের মত নির্বাচন করার চেষ্টা করে জনগণ কখনো মেনে নিবে না।
বর্তমান কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতে সারাদেশে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে, সকল শ্রেণিপেশার মানুষ বিএনপির সদস্য ফরম পূরণ করছেন এবং বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন। আমদের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে সরকার বিভিন্ন বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী সরকার তাদের বিভিন্ন গুন্ডা বাহিনী এবং পুলিশের মাধ্যমে বাধা দিচ্ছে, আমাদের নেতাকর্মীদের মিথ্যা হামলায় হয়রানী করা হছে এবং গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে যাতে বিএনপি স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না পারে।
পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে দেশে আসার পর পরবর্তী কর্মসূচী কি হবে এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির ভূমিকা কি হবে তা ঠিক করা হবে।
বেগম জিয়া রাজনৈতিক কারণে লন্ডনে অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য প্রতিহিংসামূলক। বেগম জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন। বেগম জিয়ার বিদেশ সফর নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া সংকীর্ণতার পরিচয়। তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে কোন মন্তব্য করার আগে ভেবে চিন্তে করা উচিত।এ সরকারের কার্যক্রম ফ্যাসিবাদী উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিথ্যা মামলার কারনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও বেগম জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান এবং ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর পরিবার দেশে আসতে পারে না। আওয়ামী সরকার তাদের নামে বিভিন্ন মিথ্যা এবং উদ্যেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে তাদেরকে দেশে আসতে দিচ্ছে না। বেগম জিয়ার বিদেশ সফর নিয়ে যারা রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন তারা নিচু মনের পরিচয় দিচ্ছেন। তবে এই অবস্থা বেশি দিন থাকবে না এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফিরে আসবেন বলে আমরা আশা করি।
১৫ আগষ্ট নিয়ে বলতে গিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে শেখ মুজিবের অবদান অনেক, এটা আমরা স্বীকার করি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ মুজিবসহ আরও অনেকের অবদান আছে তাই বলে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে অন্য কোন সংগঠন কোন কর্মসুচি পালন করতে পারবে না এটা কেমন নিষ্ঠুরতা। রাজনীতিতে অবদানের কথা বলতে গেলে শেখ মুজিব, হোসেন শহিদ সোহরাওর্দী, জিয়াউর রহমান, কাদের সিদ্দিকী অন্যতম। আমাদের নেত্রী এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান শেখ মুজিবের মাজারে ফুল দিয়েছেন কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনো জিয়ার মাজারে যায় না। রাজনীতিতে একটা সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে পরস্পরের নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, চুয়াডাঙ্গা-১ (সদর) আসন থেকে দুই বার বিএনপির প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করে সংসদ সদস্য হয়েছি। এবারও যদি দল আমাকে প্রার্থী করে তাহলে নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবো।
শামসুজ্জামান দুদু বিভিন্ন সময় বিএনপির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি সবথেকে কমবয়সী বিএনপির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হন। তিনি প্রথমে ছিলেন গণশিক্ষা সম্পাদক, তারপর কৃষি সম্পাদক। পরে কিছুদিন তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ছিলেন, বর্তমানে তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এই নেতা বিভিন্ন সময় রাজৈনতিক মামলায় জেল খেটেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন