বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মাঝে বিএনপির ত্রাণ সামগ্রী নিতে বাধা দেওয়াই প্রমাণ করে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের মাঝে কাঁদা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের উদ্দেশ্য ছিল লোক দেখানো।
রাজধানীর রমনায় অবস্থিত ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে (আইইবি) বুধবার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১০ম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনার আয়োজন করে দলটি।
মির্জা ফখরুল বলেন, মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে আজকে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম রোহিঙ্গাদের জন্য ২২ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই টিমকে আটকে দেওয়া হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই আপনি রোহিঙ্গাদের সামনে গিয়ে কাঁদলেন। পত্রিকায় লেখা হল প্রধানমন্ত্রী কাঁদলেন- কাঁদালেন। আজকে এই যে ২২ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে আমাদের নেতারা গেলেন, তারাতো অন্তত চার-পাঁচ হাজার মানুষের মুখে এক বেলা খাবার তুলে দিতে পারতেন, সেই খাদ্য থেকে তাদের কেন বঞ্চিত করলেন?
তিনি বলেন, আসলে উদ্দেশ্য একটাই আপনারা এগুলো লোক দেখাতে করছেন। আপনারা মানুষকে যা দেখাচ্ছেন আসলে তা করছেন না। কারণ রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন সরকার আন্তরিক নয়। যদি আন্তরিক হতো তাহলে অনন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে যাওয়া উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে বাধা দেয়া হতো না। আমি বিএনপির প্রতিনিধি দলের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে বাধা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের প্রতি ধিক্কার জানাই, ঘৃণা প্রকাশ করছি।’
বিএনপি এ নেতা বলেন, অসহায় রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বিএনপির ত্রাণ টিমকে কক্সবাজারের উখিয়া যেতে বাধা দেয়ার ঘটনায় সরকারের মুখোশ উম্মোচিত হয়ে গেছে। এই মাত্র আমাদের কাছে খবর এসেছে কক্সবাজারে আমাদের যে কেন্দ্রীয় রিলিফ টিম ২২ ট্রাক নিয়ে গিয়েছিলো তাদেরকে উখিয়াতে প্রশাসন যেতে দিচ্ছে না, পুলিশ ট্রাক আটকিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, কক্সবাজারে আমাদের বিএনপি অফিস পুলিশ ঘিরে রেখেছে। আমাদের শীর্ষস্থানীয় নেতারা অফিসে আটকা পড়ে আছেন।
‘আমি সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিএনপির ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করা হউক। অনাচারে জীবনযাপন করা রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে বিএনপিকে সুযোগ দেয়া হোক।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরাও নির্বাচন চাই। তবে সেই নির্বাচনের আগে নির্বাচনী পরিবেশ ও পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। সর্বপ্রথম বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। অন্যথায় আপনারা (সরকার) যেভাবে গুম খুন মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন নিপীড়ন চালাচ্ছেন তার জন্য একদিন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে, জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে।
তিনি বলেন, ভুলে গেলে চলবে না যে, ১/১১ সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায়। তারা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হত্যা করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রথমে গ্রেফতার ও পরবর্তীতে নির্যাতন চালায়।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান প্রমুখ।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী সভা সঞ্চালনা করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন