‘১৭ কোটিকে খাওয়াতে পারলে রোহিঙ্গাদেরও খাওয়াতে পারব’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যকে ‘নির্বুদ্ধিতা’ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলতে বলতে বেশি বলেন। তিনি কীভাবে বলেন যদি ১৭ কোটিকে খাওয়াতে পারি, রোহিঙ্গাদেরও খাওয়াতে পারব। এই বক্তব্য নির্বুদ্ধিতা, এটা তিনি বলতে পারেন না।’ আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহযোগিতা নিয়েই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় মান্না এসব কথা বলেন। ভিআইপি লাউঞ্জে ‘রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন ও গণহত্যা: মানবাধিকারের চরম অবনতি এবং সমস্যা সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায় নীরব কেন?’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার আন্দোলন নামের বিএনপি-জামায়াতপন্থি একটি সংগঠন।
মান্না বলেন, ‘নির্যাতিত মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে যে কারো ঘরে এলে তাকে ফিরে দেয়া যাবে না। কিন্তু সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিয়েছে, পরে অবশ্য শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন পুঁতে রেখেছে, যা অপরাধ। কিন্তু সরকার এরও কোনো প্রতিবাদ করেনি।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে ভবিষ্যতে। সমগ্র দেশের শান্তি নষ্ট হতে যাচ্ছে, আগ্নেয়গিরি তৈরি হচ্ছে। এখন থেকেই আমাদের বিচক্ষণতার সঙ্গে আগলে রাখতে হবে। তাদের আগলে না রাখলে মহাবিপদ অপেক্ষা করছে সামনে।’
বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এখন স্টেট লেস কমিউনিটিতে পরিণত হয়েছে। তিন হাজার রোহিঙ্গাদের হত্যা করা হয়েছে, নির্যাতন করা হচ্ছে তাদের। এটা অং সান সূচির মতো গণতান্ত্রিক নেত্রীর কাছে কেউ আশা করেনি।’
বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘সারা বিশ্বের কাছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাহায্য চাওয়া উচিত ছিল। দেরিতে হলেও সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে হবে, বিশ্বের কাছ থেকে সাহায্য আনতে হবে। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বিশ্বে কাছে তুলে ধরতে হবে।’
বিএনপির ত্রাণ আটকে দেয়া নিয়ে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিএনপির ত্রাণ আটকে দেয়া হয়েছে, এর ব্যাখ্যা প্রধানমন্ত্রীর নেয়া উচিত। আজ তো বিরোধীদলীয় নেতা ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন, তার সাথে কী ব্যবহার করেন তা দেখব, তারপর কথা বলব।’
ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুকোমল বড়ুয়া বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কতটা লজ্জিত তা প্রকাশ করার ভাষা নেই। রোহিঙ্গাদের নির্যাতনে বৌদ্ধ ধর্মের বাণী আজ প্রশ্নবিদ্ধ, ক্ষতবিক্ষত, রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। এটা শুধু বৌদ্ধ ধর্মই নয় বিশ্বের কোনো মানুষ এটা সমর্থন করতে পারে না।’
সুকোমল বড়ুয়া বলেন, ‘মিয়ানমারে মানবতার যে চরম বিপর্যয় হয়েছে, তাতে বৌদ্ধদের পক্ষ থেকে আমার ক্ষমা চাওয়া উচিত, মার্জনা ছাড়া আর কিছুই বহন করতে পারে না। সেখানে মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে, তারা বৈশ্বিক রাজনীতির শিকার হচ্ছে। এই পলিটিক্স মানবতাকে মারাত্মক বীভৎতার অবস্থায় নিয়ে যায়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘মানবতা যেখানে বিপন্ন সেখানে কোনো পক্ষ বিপক্ষ থাকতে পারে না। দেশে মানবতার পক্ষ-বিপক্ষ খণ্ডিত ধারা দেখতে পাচ্ছি। রোহিঙ্গা সমস্যায় যেমন মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে, আমাদের অভ্যন্তরেও মানবতা বাধা পাচ্ছে, ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। যেখানে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াবো, তা হচ্ছে না। বিএনপি ত্রাণ নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াবে, সেগুলো কক্সবাজারে আটকে দেয়া হয়েছে।’ এটা করলে হবে না সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন