মিয়ানমার পুলিশের ২৪টি তল্লাশিচৌকি ও একটি সেনাঘাঁটিতে হামলার ঘটনা আদৌ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ঘটিয়েছে কি-না, এ নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা আরসার প্রতি সহানুভূতিশীল রোহিঙ্গারাও প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন- যদি আরসা এ হামলা করে থাকে, তাহলে আরসার কার্যক্রম পরিচালনায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কোনো ভূমিকা আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। বিশ্বের বিভিম্ন অঞ্চলের যুদ্ধ ও সংঘর্ষ নিরসন এবং প্রতিরোধে কার্যকর আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এক প্রতিবেদন থেকে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও আরসার মধ্যে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে বিদ্রোহীদের ছেড়ে দেওয়ার খবর জানা যায়, যা আরসার সঙ্গে মিয়ানমারের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ইঙ্গিত দেয়। মিয়ানমারের জাতীয় সংসদে ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর। গণতন্ত্র এলেও কার্যত স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগ পরিচালনা করে সেনাবাহিনী।
রোহিঙ্গাদের অনেকেই মনে করেন, আরসা যদি রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে, তাহলে কী করে এমন কিছু করল, যা রোহিঙ্গাদের এত ব্যাপক হারে বাস্তুচু্যত করার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া কান্ডটি এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন আনান কমিশনের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারের সেনা নির্যাতন থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষার মতো কোনো শক্তিই রাখে না আরসা। আরসার সদস্যরা পালিয়ে আছেন পাহাড়ে। হাতেগোনা যে ক'জন কর্মী-সমর্থক আছেন, তারাও শরণার্থীদের সঙ্গে মিশে দেশত্যাগ করছেন। মিয়ানমারের সরকারি সূত্রে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে আরসার সদস্যসংখ্যা এক হাজার বলে জানানো হলেও আরসা বলে বাস্তবে কিছু আছে কি-না এ প্রশ্ন তুলেছেন আন্তর্জাতিক গণআদালত (পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল)। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় অপরাধ সংঘটনের বিচারে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে পরিচালিত সাত বিচারকের আদালত সাক্ষীদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। গত মঙ্গলবার আদালতে উপস্থিত সাক্ষীরা জানান, আরসা আছে। তবে এর সদস্যসংখ্যা ৫০ জনেরও কম। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ২৪ আগস্ট রাতে পুলিশের তল্লাশিচৌকি ও সেনাঘাঁটিতে হামলায় মাত্র ৩০টি আঘ্নেয়াস্ত্র ব্যবহূত হয়েছে। হামলায় অংশগ্রহণকারী বাকিরা লাঠিসোটা ব্যবহার করেছে।
কুয়ালালামপুরে চলমান আন্তর্জাতিক গণআদালতে সাক্ষীরা জোরালোভাবে বলেন, তারা মনে করেন না যে আরসার দ্বারা সংঘটিত ২৪ আগস্ট বা তার আগের হামলার কারণে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সশস্ত্র অভিযান চালাচ্ছে। গত মঙ্গলবার আদালতে ব্রিটেনপ্রবাসী মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানবাধিকারকর্মী ড. মং জার্নি বলেন, শুধু জাতিগত পরিচয়ের কারণেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমরা পদ্ধতিগতভাবে গণহত্যার শিকার হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূল অভিযানের সঙ্গে আরসা গত ২৪ আগস্ট বা তার আগে-পরে কী করেছে বা করেনি, তার কোনো সম্পর্ক নেই।
আরসা কারা : ২৪ আগস্ট রাতে পুলিশের তল্লাশিচৌকি ও সেনাঘাঁটিতে হামলার আগপর্যন্ত আরসা নিজেদের ইংরেজিতে 'ফেইথ মুভমেন্ট' নামে পরিচয় দিত। মূল নাম 'হারাকাহ আল ইয়াকিন', সংক্ষেপে এইচএওয়াই বা হাই। স্থানীয়ভাবে ইয়াকিন নামে পরিচিত এই গ্রুপ গত মার্চে নিজেদের নাম পরিবর্তন করে আরসা রাখে। ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আরসা অন্তত ২০১২ সাল থেকে রাখাইন রাজ্যে সংগঠিত হতে শুরু করেছিল। গত বছরের অক্টোবরে রোহিঙ্গা বিতাড়নের পর ক্রাইসিস গ্রুপ 'মিয়ানমার : রাখাইন রাজ্যে নতুন মুসলিম বিদ্রোহ' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ক্রাইসিস গ্রুপের ওই প্রতিবেদনে হারকা আল ইয়াকিনের জন্মের সঙ্গে রাখাইনে মুসলিম বিদ্রোহের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। আলোকপাত করা হয়েছে কারা আরসা পরিচালনা করে, এর কর্মপরিধি ও সামরিক কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়েও।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষিত ২০ জনের একটি দল মিয়ানমারে প্রবেশ করে। নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যেও আরসাপ্রধান আতাউল্লাহসহ বিদেশে জন্ম নেওয়া ২০ রোহিঙ্গা কেমন করে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করল এবং ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সংগঠন বিস্তারের কাজ করতে পারল- এটাও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
মিয়ানমারের সরকার এরই মধ্যে আরসাকে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে। গত বছরের অক্টোবরেও তারা হামলা করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের ঠেকানোর নামে অক্টোবরের পর ছয় মাস রাখাইনে অভিযান চলেছে এবং তখনও বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, সংগঠনটি মূলত গড়ে উঠেছে সৌদি আরবে চলে যাওয়া ২০ রোহিঙ্গার হাতে। তাদের অন্তত একজন মদিনায় থাকেন, বাকিরা মক্কায়। তারাই সংগঠনের নীতিনির্ধারণ এবং তহবিল সংগ্রহ করেন। নীতিনির্ধারকদের ২০ জনের সিদ্ধান্তে আতাউল্লাহর নেতৃত্বে অন্য ২০ জনের একটি গ্রুপ মিয়ানমারে আসে। আতাউল্লাহ আবু আমর জুনুনি নামেও পরিচিত।
আতাউল্লাহর বাবা রাখাইন থেকে পাকিস্তানের করাচিতে চলে গিয়েছিলেন। সেখানেই আতাউল্লাহর জন্ম। তিনি বড় হয়েছেন মক্কায়। সেখানে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। ২০১২ সালে আতাউল্লাহ সৌদি আরব থেকে অদৃশ্য হয়ে যান।
ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আতাউল্লাহ রয়েছেন রাখাইন রাজ্যের মংডুর পাহাড়ি এলাকায়। এখানে আরসা শুধু সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডই পরিচালনা করেনি, দিয়েছে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণও। আরসার সদস্যরা ভারী অস্ত্র পরিচালনা থেকে শুরু করে আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ব্যবহারেও পারদর্শী। প্রশিক্ষণের সময় আরসা একের পর এক নিরাপত্তা বাহিনীর গোয়েন্দা তথ্যদাতাদের হত্যা করেছে। তবু কেন নিরাপত্তা বাহিনী আরসাকে ঘায়েল করেনি এবং আদৌ ঘায়েল করার চেষ্টা করেছিল কি-না এ প্রশ্নও উঠেেছ।
আরসা ও নিরাপত্তা বাহিনী : আরসা ও মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সংযোগ-সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেলেও এসব অভিযোগ যাচাই করার সুযোগ সীমিত। রাখাইন প্রদেশের মুসলিম অধ্যুষিত মংডু, বুচিডং ও রাশিদং এলাকায় বাইরে থেকে কোনো সাংবাদিক, গবেষক, এমনকি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কোনো প্রতিনিধি যেতে পারছেন না। মিয়ানমারের সাংবাদিকদেরও কেউ কেউ এ বিষয়ক লেখালেখি করে রাষ্ট্রের রোষানলের শিকার হয়েছেন। বাইরের মানুষের চলাচলের ওপর এ রকম নিষেধাজ্ঞা বহু দিনের। গত বছরের অক্টোবরের পর কড়াকড়ি বেড়েছে। তবে ওই অক্টোবরের ঘটনার পর ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ 'মিয়ানমার : রাখাইন রাজ্যে নতুন মুসলিম বিদ্রোহ' শীর্ষক গবেষণা শুরু করে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ক্রাইসিস গ্রুপের ওই প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও আরসার মধ্যে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে বিদ্রোহীদের ছেড়ে দেওয়ার খবর জানা যায়। ২০১৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিজিপি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আরসার আট সদস্যকে আটক করে। পরে আরসা দু'দফায় মিয়ানমারের টাকায় ৪৩ মিলিয়ন কিয়েট, যা প্রায় ৩২ হাজার ৩০০ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৬ লাখ টাকার মতো ঘুষ দিয়ে ওই আটজনকে ছাড়িয়ে নেয়। এটা আরসার আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ হিসেবে দেখছে ক্রাইসিস গ্রুপ। শরণার্থী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরসার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ক্রাইসিস গ্রুপ মনে করছে, আরসার তহবিল আসে আন্তর্জাতিক বিভিম্ন উৎস থেকে। কাজেই আরসা দেশের বাইরে থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে এড়িয়ে কীভাবে এত বিপুল অঙ্কের টাকা মিয়ানমারে নিয়ে আসে, সেটাও প্রশ্নের জন্ম দেয়।
ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আটক হওয়া আট আরসা সদস্যের মধ্যে প্রথমে পাঁচজনকে ১৬ সেপ্টেম্বর বিজিপি ছেড়ে দেয়। পরে বাকি তিনজন ছাড়া পায় ২৮ সেপ্টেম্বর। ৩০ সেপ্টেম্বর যাদের তথ্যানুযায়ী বিদ্রোহীরা আটক হয়েছিল, তাদের দু'জনকে আরসা হত্যা করে। এ পরিস্থিতিতে বিজিপি অভিযান পরিচালনা শুরু করে, যার সঙ্গে জড়িত গত বছর অক্টোবরের হামলা ও রোহিঙ্গা বিতাড়ন।
উদ্দেশ্য বিদ্রোহ জারি রাখা : গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে টেকনাফ ও উখিয়ায় সরেজমিনে শরণার্থী সংকট নিয়ে কাজ করার সময় মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিভিম্নজনের কাছে আরসা সম্পর্কে জানতে চেয়ে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে- টেকনাফের এমন এক ব্যক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ হয় মংডুর হাসসুরাতা থেকে আসা এক যুবকের সঙ্গে, যিনি নিজেকে আরসার একজন কর্মী বলে দাবি করেন। হাসসুরাতা গ্রামেরই তিনটি চৌকিতে ২৪ আগস্ট রাতে হামলা হয়। তবে কারা এ হামলা করেছে, তার নিজেরই এতে সন্দেহ রয়েছে। গুলি-বোমার শব্দে ঘুম ভাঙার পর তিনি চেষ্টা করেছেন, তবে সেনাবাহিনী ঘিরে রাখায় কিছুই জানতে পারেননি। পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ওই যুবককে বলি, আরসা হামলার পর টুইটারে পোস্ট দিয়ে দায় স্বীকার করেছে এবং হামলার আগে ১৬ আগস্ট ইউটিউবের আরসা নামে একটি চ্যানেল থেকে আতাউল্লাহ হামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি মনে করেন, ইউটিউবে আতাউল্লাহ যে হুমকি দিয়েছিলেন, সেটা কেবল চাপ প্রয়োগের জন্যই করেছিলেন। সত্যি যদি আরসা হামলা করে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, তারা রাখাইনের পরিস্থিতি বুঝতে পারে না অথবা সেনাবাহিনীর স্বার্থসিদ্ধি করছে।
টেকনাফের লেদা শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা আবদুল মতলবও একই রকমের মন্তব্য করলেন। ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাসকারী এই মানুষটি একদা অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) করতেন। ২০০১ সালে আরাকানে সহিংসতার পর তাকে জেল খাটতে হয়েছিল। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে চলে আসেন বাংলাদেশে। মতলবের মতে, আরসা একটা জুজুবুড়ি। সেনাবাহিনী আরসাকে খেলায়, হামলার জন্য উস্কানি দেয়। আরসা বা আরসার মতো কেউ হামলা করলে সেনাবাহিনীর লাভ হয় দ্বিগুণ, রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু করার অজুহাত পাওয়া যায়, আবার কোণঠাসা করা যায় সু চিকেও। তার প্রশ্ন, ইউটিউবের ভিডিও এবং টুইটারের পোস্ট ছাড়া রাখাইনে সেনা ও পুলিশ চৌকিতে হামলার আর কোনো প্রমাণ আছে কি? সেনাবাহিনী সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে ক্ষমতা হাতে রাখার জন্যই বিদ্রোহ জারি রাখে।
ক্রাইসিস গ্রুপসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার নিরাপত্তা বিশ্নেষকরা বরাবরই কথিত সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের সমালোচনা করে আসছেন। তারা বলছেন, এ জাতীয় সেনা অভিযান সন্ত্রাসবাদকে আরও উসকে দেয়। হাতেগোনা কয়েকজন বিদ্রোহীকে উচ্ছেদ করতে গিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ইতিহাস অনেক পুরনো।
মুসলিম বিদ্রোহের ইতিহাস : মিয়ানমারের মুসলিম বিদ্রোহীদের ইতিহাসের একটা ধারাবাহিকতা রয়েছে। ১৯৪২-৪৩ সালের দিকে প্রথম রাখাইনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বুর্মন ও রাখাইনদের সঙ্গে মুসলিম রোহিঙ্গাদের সংঘাতের তথ্য পাওয়া যায়। মিয়ানমারের স্বাধীনতা লাভের পর রাখাইনে প্রথম মুজাহিদিন বিদ্রোহ সংগঠিত হয় ১৯৪৮ সালের এপ্রিলে। এর পর বিভিম্ন সময়ে বিদ্রোহীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাধারণ রোহিঙ্গাদের সমর্থনের অভাবে তারা কখনই তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি। ১৯৫৪ সালের দিকে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সীমান্তসংলঘ্ন পার্বত্যাঞ্চলে বিদ্রোহী মুজাহিদদের বিরুদ্ধে অপারেশন মনসুন নামে একটি বড় অভিযান চালায় মিয়ানমারের সেনারা। এর ফলে ১৯৬১ সাল নাগাদ বিদ্রোহী তৎপরতা স্তিমিত হয়ে আসে এবং অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। শুধু ছোট ছোট কিছু সশস্ত্র গ্রুপ ওই অঞ্চলে টিকে ছিল। ১৯৬২ সালে দেশটির সামরিক জান্তা সরকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেয়, যা ওই অঞ্চলে মুজাহিদিন তৎপরতাকে আবার নতুন করে উসকে দেয়। ১৯৭৪ সালে বিশ্ব মুসলিম আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে রাখাইনে গড়ে ওঠে রোহিঙ্গা প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট নামে একটি সশস্ত্র গ্রুপ। পরে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হলে অপেক্ষাকৃত বেশি কট্টরপন্থিরা বেরিয়ে এসে ১৯৮২ সালে গড়ে তোলে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালপর্যন্ত মিয়ানমারের সীমান্তসংলঘ্ন বাংলাদেশের দুর্গম অঞ্চলে আরএসও নিজেদের ছোট ছোট ঘাঁটি তৈরি করেছিল বলে আইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাদের বড় ধরনের হামলার খবর পাওয়া যায় প্রথম ১৯৮৪ সালের এপ্রিলে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিশ্নেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালের শেষদিকে আরএসওর এই সশস্ত্র গ্রুপ বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের সীমান্তে তাদের তৎপরতা ছিল। ২০০০ সালের শুরুর দিকে আরএসও বাংলাদেশের জঙ্গি গ্রুপ জেএমবির সঙ্গে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ বিনিময় করত বলে ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
বাংলাদেশের অবস্থান : ২০০০ সালের পর থেকে রাখাইনের বিদ্রোহীরা বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে উচ্ছেদ হতে থাকে। ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশ সরকার জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করলে সীমান্ত থেকে বিতাড়িত হয় রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এখনও সজাগ রয়েছে। ২৪ আগস্টের ঘটনা ঘটার মাত্র কয়েক দিন আগে ৮ আগস্ট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মিয়ানমারের দুই নাগরিককে ১৭টি আঘ্নেয়াস্ত্র ও ৫০০ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করে।র্ যাব তখন জানিয়েছিল, তারা সন্দেহভাজন আল ইয়াকিন মুজাহিদিন। অবশ্য এই গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারের আগেই ইয়াকিন নাম পরিবর্তন করে আরসা হয়ে যায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের সম্পর্কে সব সময়ই সতর্ক। এবার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা আসতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আমাদের এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে বলেছেন। উদ্বাস্তুদের মধ্যে কোনো বিচ্ছিম্নতাবাদী মিশে আছে কি-না, এটা পুলিশ অনুসন্ধান করে দেখছে। কাউকে পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন