আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজধানী ঢাকার নিকটতম জেলা গাজীপুরে পাঁচটি সংসদীয় আসন রয়েছে। জাতীয় সংসদের ১৯৪ নম্বর আসনকে ধরা হয়ে থাকে গাজীপুর-১ আসন। নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কেউ কেউ পোস্টার, ব্যানার সাঁটিয়ে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে জানান দিতে শুরু করেছেন। তৃণমূল নেতাদের সমর্থন আদায়ে প্রার্থীরা নানা তৎপরতা শুরু করেছেন। মনোনয়ন পেতে এলাকায় দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি এসব প্রার্থী দলের হাইকমান্ডের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। এ আসনে মনোনয়ন যুদ্ধে পুরনোদের সঙ্গে নতুন মুখের সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে।
প্রধান দুই দলেই মনোনয়ন যুদ্ধে লড়বেন একাধিক নেতা। তবে এ আসনে প্রার্থী প্রায় চূড়ান্তই। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নামই শোনা যাচ্ছে। জেলার ৫টি আসনেই বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলেরই প্রার্থী বাছাইয়ে চমকও থাকতে পারে। তাই নানা হিসাব-নিকাশ করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের পথ চলছেন। তবে জেলার পাঁচটি আসনের সবকটিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি হারানো আসনগুলো পুনরুদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে। বসে নেই জাতীয় পার্টিও। কার্যত সবকটি আসনেই ভোটযুদ্ধ হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে।
২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর-১ আসন (কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌরসভা এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ১৮ নং ওয়ার্ড) নিয়ে গঠিত হয়। এর আগে গাজীপুর জেলায় ৪টি সংসদীয় আসন ছিল। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি এবারো প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। নবম সংসদ নির্বাচনে ওই আসন থেকে তিনি প্রথম এমপি নির্বাচিত হন বর্তমানে দল থেকে বহিষ্কৃত বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীকে প্ররাজিত করে। এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েসনের সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল ও কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন শিকদার মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
তবে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী মনোনয়নে এগিয়ে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী প্রবীণ নেতা আকম মোজাম্মেল হক এমপি। আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর-২ এলাকার বাসিন্দা হয়েও গাজীপুর-১ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে নির্বাচন করেন ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে। এর আগে ১৯৯১ সালে আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বর্তমান গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ মান্নানের কাছে বিপুল ভোটে ধরাশায়ী হয়েছিলেন। সে সময় অধ্যাপক এমএ মান্নান বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করায় সেবার তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পেয়েছিলেন।
অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছেন। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মো. মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মো. হুমায়ুন কবির খান এবং সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন হেলাল নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে তাদের সমর্থকরা জানিয়েছেন। এরা সবাই বিএনপির নতুন মুখ। এর আগে তারা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হননি।
এ আসন (কালিয়াকৈর-শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে) থেকে ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন চৌধুরী তানভীর আহম্মেদ সিদ্দিকী। পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনেই তিনি বিএনপির প্রার্থী হতেন। সর্বশেষ তিনি ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছে বিপুল ভোটে ধরাশায়ী হন। এর আগে এ আসনটি কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল। সে সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রবীণ নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী বর্তমান গাজীপুর-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট রহমত আলী।
দল ও দলীয় হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে তানভীর সিদ্দিকীকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি দল থেকে বহিষ্কারের পর আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে একাধিক নেতার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। তবে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাই নতুন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইছেন। তারা এবারই জাতীয় সংসদের নির্বাচনে প্রথম মনোনয়ন প্রার্থী। তবে চৌধুরী তানভীর সিদ্দিকী তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আবারো বিএনপির প্রার্থী হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা। ২০ দলীয় জোট দশম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন।
এ নিয়ে তিনি পরপর দু’বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগে তিনি গাজীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি মেয়র পদ ছেড়ে সংসদ নির্বাচন করেন।অপরদিকে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার আবদুস ছালাম প্রার্থী হবেন বলে তার সমর্থকরা জানান। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীও প্রার্থী মনোনয়ন দেবে বলে জানা গেছে। তবে তারা এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি। তারা নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন