বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এখন সাংগঠনিকভাবে অনেক সক্রিয়। দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব সংকটের সময়ে ছাত্রলীগ সাধারণ জনগণের পাশে থেকেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এক বিশেষ সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল সেই আলাপচারিতা-
ছাত্রলীগ সভাপতি হিসেবে বিগত দুই বছর কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
২০১৫ সালে ২৫-২৬ জুলাইয়ে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে আমি সভাপতি ও এস এম জাকির হোসাইন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমরা প্রতিদিন চেষ্টা করেছি বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে তার আদর্শে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ও পরামর্শে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
দুই বছরে সবচেয়ে বড় সাফল্য কী?
আমাদের সাংগঠনিক সক্রিয়তা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এমন সব জায়গায় সম্মেলন করতে পেরেছি যা আগে কখনো হয়নি। আগে কখনো হল সম্মেলনগুলো হয়নি, আমরা সেগুলো করেছি এবং অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা প্রথমবারের মত সম্মেলন করেছি সফলভাবে। এছাড়া নেত্রীর নির্দেশে আমরা বন্যার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি কুড়িগ্রাম থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের বন্যাপীড়িত সবগুলো জায়গায় গিয়েছি, সেখানে ৫ দিন থেকেছি। সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন সিলেট গিয়েছেন। দুইজনে কাজ ভাগাভাগি করে বন্যাপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক সাহায্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। এছাড়া পাহাড়ধসের সময়ও আমরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম, এবং সর্বশেষ রোহিঙ্গা পরিস্থিতিতেও মানবিক সহায়তা নিয়ে পাশে আছে ছাত্রলীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বলেছেন... তার অন্যতম চাওয়া নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গঠন। এ বিষয়ে আপনারা কী করছেন?
মাদক সবচেয়ে মারাত্মক হুমকি, এর বিরুদ্ধে শুধু ছাত্রলীগ নয় আমাদের যার যার অবস্থান থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী লড়াই করতে হবে। নেত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। আর নিরক্ষরতা সমস্যা একদিনে সমাধান হবে না। আমরা বিশ্বাস করি নেত্রীর স্থির করা লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে কোনো নিরক্ষর ব্যক্তি বাংলাদেশে থাকবে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কী অবস্থা? সেখানে কমিটি গঠনের পরিকল্পনা কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে?
এই বিষয়ে পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। ঢাকায় সম্ভবত ৯০টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সারা বাংলাদেশে ১০০টির মত রয়েছে। আমরা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে ৫০টির মত বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি দেয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা করে রেখেছি।
সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ে বর্তমান ছাত্রলীগ কতটা ভূমিকা রাখছে? ছাত্র সংসদের অনুপস্থিতির বিষয়ে ছাত্রলীগের অবস্থান কি?
আমি নিজেও একজন সাধারণ ছাত্র, তারপরে আমি ছাত্র সংগঠনের নেতা। ছাত্র না হলে ছাত্রলীগ করার সুযোগ নেই, কিন্তু অনেক ছাত্র সংগঠন রয়েছে যেগুলো ছাত্র ছাড়াই চলছে। আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলতে হয়, আমাদের সব কাজইতো ছাত্রদের নিয়ে। যেমন ধরেন গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে, প্রথমে ব্যবসায় অনুষদের পরীক্ষা দিয়ে শুরু হয়েছে। সেখানে ছাত্রলীগ বুথ করে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের সহায়তা করেছে। ছাত্র সংগঠনের মূল কাজ সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে হলেও ছাত্রলীগের বৈশিষ্ট্য এক দিক দিয়ে আলাদা। বাংলাদেশের যখনই সংকটে পড়েছে সংকট মোকাবেলায় নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই, তবে আমরা যেখানে পেরেছি সেখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার চেষ্টা করেছি। আমরা ডাকসু থেকে শুরু করে সব ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার পক্ষে। আমরা সেটার দাবি জানাতে পারি, আন্দোলন করতে পারি। তবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়ার এখতিয়ার কর্তৃপক্ষের।
ফেসবুকে ছাত্রলীগের একশ্রেণীর বিপ্লবী তৈরি হয়েছে। এদের মাঠে ময়দানে পাওয়া যায় না এমন অভিযোগ রয়েছে। তবে সংগঠনে বিভেদ সৃষ্টি করতে এরা নাকি সোচ্চার। এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা আছে?
সব বিষয়ে ইতিবাচক-নেতিবাচক রয়েছে। বিজ্ঞান যেমন আমাদের অনেক এগিয়ে নিয়েছে, আবার এর অপব্যবহার আবার আমাদের পেছনেও টেনে নিয়ে এসেছে। ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগের একটা মাধ্যম, কিন্তু সেটাকে অনেকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ফেসবুক প্রচারমাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতেই পারে, কিন্তু সেখানে আমার-আপনার যুদ্ধ করার জায়গা না। সেখানে আপনি আমাকে ফলো করবেন, আমি আপনাকে ফলো করব-আপনি কি করছেন সেটা আমি দেখব, আমার কর্মকাণ্ড আপনি দেখবেন। আমার মনে হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উদ্দেশ্যই সেটা। এর বাইরে যদি আমি আপনার বিরুদ্ধে লিখি, আপনি আমার বিরুদ্ধে লিখবেন সেটা অপব্যবহার। আমি মনে করি সবার এই অপব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
অতীতের চেয়ে ছাত্রলীগ অনেক বেশি শৃঙ্খল। কিভাবে হয়েছে এটা নিয়ে বলেন?
আগের সাথে তুলনা করার সুযোগ নেই। একেকটি কমিটি একেকটি পরিস্থিতিতে পরিচালনা করেছে। ১৯৪৮ সালের পর থেকে ২০১৫ পর্যন্ত যারা ছাত্রলীগ পরিচালনা করেছেন তাদের বিশাল অবদান, তারাই সংগঠনকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। তাদের জন্যই আমি সভাপতি ও জাকির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতে পেরেছেন। আমার জানামতে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। আমার পূর্বে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অনুসরণ করে, তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে, তাদের থেকে পরামর্শ নিয়ে সংগঠন পরিচালনা করি।
বই মেলায় আপনার লেখা ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস বইটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আগামী মেলার জন্য কোন পরিকল্পনা আছে কী?
আসলে আমাদের নেত্রীর অনুপ্রেরণায় বই লেখার কর্মকাণ্ড শুরু। ২০১৬ সালের বইমেলার সময় তিনি বলেছিলেন, সবসময়তো বই বিক্রি কর নিজেরা কী লিখছ? তোমরা দুয়েকটা বই লিখতে পারো না? তোমরাও বই লেখার চেষ্টা কর। বই লেখা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা অব্যাহত থাকবে।
আপনারা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ছাত্রলীগের মাঝে পড়াবেন, সেই বিষয়ে কাজ কতটুকু এগিয়েছে?
আমি সব জায়গায় বলি যে অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়েনি তার ছাত্রলীগ করার যোগ্যতাই নেই। শুধু ছাত্রলীগ নয়, সবারই অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়া উচিত। এরপর বেরিয়েছে বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচা। কেউ যদি এই দুইটি বিষয় আত্মস্থ করতে পারে আমি মনে করি তার রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবনে কোনো সংকটে পড়বে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন