অ্যানালাইসিস বিডি
লাগামহীন ঘোড়ার মতো দৌড়াচ্ছে চালের বাজার। কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এতদিন উচ্চবিত্ত মানুষ যে দামে চিকন চাল কিনে খেত। এখন নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষকে সেই টাকায় মোটা চাল কিনে খেতে হচ্ছে। চালের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকার ও ব্যবসায়ী একে অপরকে দোষারোপ করছে। কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। আর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকাশ্যে সরকারের তিন মন্ত্রী ব্যবসায়ীদেরকে দোষারোপ করলেও ভেতরে ভেতরে ব্যসায়ীদের সঙ্গে তাদের দহরম মহরম সম্পর্ক রয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের কারসাজিতেই ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েছে। আর বাণিজ্যমন্ত্রীতো সেদিন প্রকাশ্যেই বলেছেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীসহ এই তিন মন্ত্রীর কারণেই বর্তমানে চাল সংকট মহামারি আকার ধারণ করছে। দেশে বিপুল পরিমাণ খাদ্য ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রীরা তাদের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু, বর্তমানে বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ চালের যোগানদাতা হলো হাওরের কৃষক। সরকার প্রতিবছর কৃষকের কাছ থেকে চালের বড় একটা অংশ আমদানি করে থাকে। কিন্তু, এবছর অকাল বন্যায় তলিয়ে গেছে হাওরের সব ধান। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী তলিয়ে যাওয়ার ফলে ধানের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকা। ফসল নষ্ট হবার ফলে কৃষকরা সরকারকে চালের যোগান দেয়াতো দূরের কথা নিজেরাই খেতে পাচ্ছে না। এছাড়া কিছু দিন আগে হয়ে যাওয়া তিন মাসব্যাপী বন্যায়ও ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এসব কারণে বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছিলো যে এ বছর চালের সংকট দেখা দিতে পারে। এনিয়ে সরকারকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু, বিশিষ্টজনদের সেই আশঙ্কাকে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের অন্য তিন মন্ত্রী পাত্তাই দেয়নি। তারা জোর গলায় দেশবাসীকে শুনিয়ে আসছেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার গল্প। এমনকি এখনও তারা বলছেন, দেশে চালের কোনো সংকট নেই।
কিন্তু, গত সপ্তাহে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মাতিয়া চৌধুরী ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বৈঠকের পরই আসল ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। সেদিন কৃষিমন্ত্রী আর খাদ্যমন্ত্রী দেশে ১ কোটি টন চাল মজুদ আছে জানিয়ে চালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের দায়ী করলে ব্যবসায়ীরা পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে বলেন- কোথায় ১কোটি টন চালের মজুদ আছে দেখান। ব্যবসায়ী নেতাদের চ্যালেঞ্জের মুখে নীরব হয়ে যান এতোদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল মজুদ থাকার গল্প শোনানো দুই মন্ত্রী। ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদের মুখে দাপুটে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও নীরব হয়ে যান। ব্যবসায়ীরা চালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতিও আঙুল তুলেন। চালের সংকট ও লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে দায়ী করলেও মন্ত্রী যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেন নি।
এ থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য মজুদ নেই। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা এতদিন যে কথা দেশবাসীকে শুনিয়ে আসছেন তা সবই গল্প ও বায়বীয়। বাস্তবে কিছুই নেই।
এরপর বর্তমানে চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০টাকা পর্যন্ত। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সভায় ব্যবসায়ীরা শর্তসাপেক্ষে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৩ টাকা পর্যন্ত কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন। বাড়ছে ২০ টাকা করে আর কমাবে মাত্র ৩ টাকা করে। সর্বোচ্চ তিন টাকা কমানোর আশ্বাস তারা মেনে নিলেন কেনো? দোষ যদি ব্যবসায়ীদের হয়ে থাকে তাহলে সরকার ব্যবসায়ীদের দেয়া শর্ত মানে কেন? এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন সৃষ্টি হয়-কেজি প্রতি বাকী ১৭ টাকা কি তাহলে তিন মন্ত্রীর পকেটে যাচ্ছে?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন