আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী ব্যাপক প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক গণসংযোগও চলছে ধীরলয়ে। জনগণের সামনে নেতাকর্মীরা তুলে ধরছেন সরকারের বিগত বছরগুলোর উন্নয়নমূলক কাজের নানা দিক। সাধারণ জনগণকে উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ঘোষণা করা হচ্ছে। সব মিলে টার্গেট একটাই- ‘আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী দেখতে চাই’। তবে কোথাও কোথাও এর ব্যতিক্রমও আছে। তেমনই কিছুটা বিপরীত চিত্র দেখা গেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের মুভমেন্টে। এর একটিই মূখ্য কারণ মনে করছেন সেখানকার স্থানীয় রাজনীতিকরা। আর সেটি হলো এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়া। মহানগর দক্ষিণে এখনও আওয়ামী লীগের থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মীরা জিমিয়ে পড়ছেন বলেও কারও কারও ভাষ্য।
আদৌ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে কিনা এই সংশয় ও শঙ্কা থেকে মহানগরের নেতাকর্মীদের মনে সৃষ্টি হচ্ছে চাপা ক্ষোভ। কমিটি দিতে না পারায় অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিও। দফায় দফায় সময় নেওয়ার পরও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও ঘোষণা করতে পারেনি। নেতারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে মনোবল হারিয়ে ফেলবে কর্মীরা। যার প্রভাব পড়তে পারে আগামী জাতীয় নির্বাচনে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং দুই শাখার অধীনস্ত ৪৫টি থানা ও ১০০টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলেও অধীনস্ত থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বাকি রয়ে যায়।
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চলতি বছরের ২ জানুয়ারি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ২৫-৩০ শতাংশ নারীকে অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত এসব কমিটি ঘোষণার আহ্বান জানান। যাতে করে নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠের রাজনীতিকেও চাঙ্গা করে। কিন্তু বেশ দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও দলের সাধারণ সম্পাদকের এ আহ্বানে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ কতটা সাড়া দিয়েছে তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
প্রায় এক বছর পার হলেও কমিটি না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় গত ৮ মে ওবায়দুল কাদের ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান, দক্ষিণের সমন্বয়ক ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে নিয়ে বৈঠক করে ৩০ মে’র মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। পরে আরও একদিন বাড়িয়ে ৩১ মে পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। দলের সাধারণ সম্পাদকের কথা যেন কানেই তুলেননি নেতারা। উল্টো দিনের পর দিন কালক্ষেপন করতে থাকেন। যার ফলে অনেক নেতাকর্মী ইতোমধ্যে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছু কমিটিতে পদ প্রত্যাশী এমন একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডিকে বলেন, “সারা দেশে যেখানে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে সেখানে আমাদের কমিটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আমাদের কমিটি না থাকায় অনেক ত্যাগী কর্মীদের মধ্যে হতাশা চলে আসছে। সেই সাথে চড়ম ক্ষোভের সৃষ্টিও হচ্ছে। কমিটি দেবে দেবে করে একবছর পার হয়ে গেল, কিন্তু কমিটির কোনও খবর নাই এখনও।”
ত্যাগী নেতার বাদ পড়ার আশঙ্ক্ষা রয়েছে উল্লেখ করে তাদেরই একজন বলেন, “আমরা যারা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ আমাদের দলের পদ থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে। তা না হলে এতদিন হলো এখনও কমিটি কেন দেওয়া হচ্ছে না।”
আগামী নির্বাচনে এই কমিটির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে জানিয়ে অপর একজন বলেন, “এখন যদি ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিডদের দলের পদে আনা হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে ভয়াবহ খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। যার খেসারত আমাদের দলকেই দিতে হবে।”
তবে কমিটি না হওয়ার পেছনে সেখানকার নেতাকর্মীদের অভিযোগের তীরটা যেন ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুরাদের দিকেই! তাদের অভিযোগ সভাপতিকে পাত্তা দেন না সাধারণ সম্পাদক। সাংগঠনিকভাবেও বেশ শক্তিশালী অবস্থানে সাধারণ সম্পাদক। তার কারণেই কমিটি দিতে এই বিলম্ব।
এনিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাতের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে কমিটিতে যোগ্য নেতারাই স্থান পাবেন জানিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডিকে বলেন, “যারা ত্যাগী, দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ তারাই দলের পদে আসতে পারবেন। এখানে অন্য কোনও দল থেকে এসে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “কমিটি আমরা কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। তবে দিন সপ্তাহ মাস বলতে পারব না। কমিটি যাচাই বাছাই হবে, তার পর ঘোষণা করা হবে।”
এনিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ব্রেকিংনিউজ.কম.বিডিকে বলেন, “আমি যতটুকু জানি কমিটির তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। তবে কমিটি কবে নাগাদ ঘোষণা করা হবে তা আমার জানা নেই। এ নিয়ে আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও কনসান রয়েছেন।”
কমিটিতে অন্য কোনও দলের নেতার অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কমিটিতে যাতে করে ত্যাগী নেতারা স্থান পায় সেদিকে গুরত্ব দেওয়া হচ্ছে। যাতে করে অন্য কোনও দল থেকে কেউ এসে কমিটিতে স্থান না পায়, সেই জন্য ড.দিপু মনি, নোফেল যাচাই বাছাই এর কাজ করছে।”
কমিটি দেরি হয়ে গেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এই নেতা বলেন, “আরও অনেক আগেই কমিটি দেওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু দিতে পারিনি। এনিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়াটা এটা স্বাভাবিক।”
আগামী নির্বাচনে এই কমিটি অনেকটা প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে আবদুর রাজ্জাক বলেন, “এটা অস্বীকার করার কিছুই নাই। যদি আমরা একটা ভাল কমিটি উপহার দিতে পারি তাহলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
কমিটির তালিকা জমা দেয়া হলেও নেতাকর্মীদের মধ্যে কিন্তু একটা চাপা উত্তেজনা ও কৌতুহল থেকেই যাচ্ছে। আর সেটি হচ্ছে কে হচ্ছেন এই নতুন কমিটির সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক। কারা থাকছেন অন্যান্য পদে। কারাইবা বাদ পড়ছেন। এইসব জিজ্ঞাসার উত্তর এ মুহূর্তেই পাওয়া যাবে-তবে কমিটি ঘোষণার পর।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন