নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের নির্বাচন নিয়ে এখনো প্রকাশ্যে কেউ কিছু মুখ ফুটে না বললেও আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী এ আসনে নির্বাচন করতে দৃশ্যত মাঠে নেমে পড়েছেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির নেতা।
আগামী নির্বাচনেও মহাজোটের অবস্থান জাতীয় পার্টির প্রার্থিতার পক্ষেই বহাল থাকবে কিনা তা এখন অনেকটাই সংশয়ের মুখে।
এ ব্যাপারে মহাজোটের অবস্থান যা-ই হোক, দলের প্রার্থী দেবার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি থেকে শুরু করে সবাই। নেতাদের ইচ্ছা, এবার তারা চান নারায়ণগঞ্জের মোট ৫টি আসনেই যেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হয়।প্রার্থিতার ব্যাপারে এবার তারা কোনো ছাড় দিতে চান না।
নারায়ণগঞ্জের মোট ৫টি আসনের সবচে গুরুত্বপূর্ণ আসনটি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। এই আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির একেএম সেলিম ওসমান। তিনি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের একসাথে রেখেছেন। সেলিম ওসমান ব্যবসায়িক সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি।
বন্দর শহর হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের যানজট সমস্যা সমাধানে তিনি কাজ করেছেন এবং সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে এনেছেন। এছাড়াও ৫ আসনে বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ করছেন নারায়ণগঞ্জের অন্যতম প্রভাবশালী এ সংসদ সদস্য।
এ আসনে এবার যারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান তাদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান দিপু, মহানগর আ'লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত। জিএম আরাফাত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন, প্রচারণার পাশাপাশি সাংগঠনিক কাজও পরিচালনা করছেন। জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদিরও ঘোষণা দিয়ে ইতোমধ্যে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সময়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য থাকায় আওয়ামী লীগ থেকে তেমন সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেননি। আবার অনেকেই তখন আওয়ামী লীগের হয়েও জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সুবিধা ভোগ করতে পারেননি।
ফলে এখানে এবার আওয়ামী লীগের কাউকেই প্রার্থী হিসেবে পাওয়ার ইচ্ছা পোষন করছেন তারা। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থিতার প্রশ্নে তাদের বেশিরভাগের অবস্থানটি হচ্ছে, দল আগে, জোট পরে।
পরদিকে বিগত সময়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও এই আসনে কোনো ছাড় দিতে রাজী নন। তারা বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে একাট্টা অবস্থান ননিয়ে আছেন। এ আসনের নির্বাচনী এলাকা বন্দরে এসে সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এসে বলে গেছেন আগামীতে আবারো এ আসনে তিনি নিজেদের দলীয় প্রার্থী দেবেন। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাদের বক্তব্যে বারবার বলেছেন এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেয়া হবে। নেতাদের এমন ঘোষণায় দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচন করার জন্য ইতোমধ্যে মাঠে নেমে গণসংযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত বলেন, নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে আমাদের সাথে জাতীয় পার্টির জোট আছে। কিন্তু আগামীতে থাকবে কিনা আমরা জানি না। আমাদের সিনিয়র নেতারা বলছেন নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবেন। তাদের সাথে আমারও একই দাবি। কারণ আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। তবে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে অনেকেই আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন ৫ আসনের বন্দরে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের হাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত, অবহেলিত। অনেকেই সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হয়েও কোনো কাজ করতে পারছেন না। সুষ্ঠুভাবে রাজনীতিও করতে পারছেন না। অনেক স্থানে আমাদের নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের হাতে অহরহ লাঞ্ছিত হচ্ছেন।আমরা এ অবস্থার অবসান চাই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন