দীর্ঘদিন আপাত স্থিতিশীল থাকার পর নতুন করে অস্থির হতে শুরু করেছে দেশের রাজনীতি। সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার আর চট্টগ্রামের বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নেতাদের সমাবেশে বাধা দেওয়ার ঘটনাকে অস্থিরতা শুরুর ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ ছাড়াও ১১ অক্টোবর দেশব্যাপী বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে বাধা দেয় পুলিশ। অনেক জায়গায় আটক করা হয় নেতাকর্মীদের।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘নার্ভাসনেস’ থেকে সরকার নতুন করে এই আচরণ শুরু করেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘নতুন ছক’ সাজাতে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে বিশ্বের মনোযোগ বাংলাদেশের দিকে। সুতরাং একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের তাগিদ রয়েছে। সে হিসেবে সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম আরও বেশি দৃশ্যমান হবে।
১০ অক্টোবর মঙ্গলবার চট্টগ্রামের দুটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দুটি অনুষ্ঠানস্থল থেকেই বিএনপি ও জোটের শরিক দল লেবার পার্টির কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এর আগের দিন ৯ অক্টোবর রাজধানীর উত্তরায় ‘গোপন বৈঠক’ করার অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতাকে আটক করা হয়। এর প্রতিবাদে ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার হরতাল ডেকেছে জামায়াত।
আবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে ১১ অক্টোবর বুধবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ। অনেক জায়গায় নেতাকর্মীদের আটকও করা হয়।
বেশ কিছু দিন থেকেই দেশের রাজনীতি স্থিতিশীল ছিল। বিএনপির বড় কোনো কর্মসূচির অনুমতি না দেওয়ার অভিযোগ থাকলেও ছোট ছোট কর্মসূচি, আলোচনা সভা চলছিল। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ জামায়াতের শীর্ষ কয়েক নেতার ফাঁসি কার্যকরের পর দলটির কার্যক্রমও গোটাতে থাকে। মাঝে-মাঝে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া চোখে পড়ার মতো কোনো দলীয় কর্মসূচি ছিল না। এরই মধ্যে জামায়াতের বর্তমান কয়েক শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার এবং বিএনপির সমাবেশে বাধা ও নেতাকর্মীদের আটক করায় আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। এই নিয়ে বৃহস্পতিবার জামায়াত হরতালের ডাক দিয়েছে। আবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়নার প্রতিবাদে বুধবার দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেয় বিএনপি। বুধবার বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। যদিও বেশিরভাগ জায়গায় পুলিশের বাধায় পিছু হটতে হয়েছে তাদের।
সমাবেশে বাধা দেওয়া ও নেতাকর্মীদের আটক সম্পর্কে বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু প্রিয়.কমকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু মোকাবেলায় ব্যর্থতা আর প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে অস্থিরতায় পড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নার্ভাস হয়ে পড়েছে। এই নার্ভাসনেস থেকে দৃষ্টি সরাতেই বিরোধী দলগুলোর ওপর চড়াও হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।’
প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দী হিসেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ভাঙন ধরাতে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে জোটের ঐক্য অটুট রয়েছে জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘জোটবদ্ধ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার পর নির্বাচনও হতে পারে একসঙ্গে’।
তবে বিষয়টিকে রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির একটি কৌশল বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী। তিনি প্রিয়.কমকে বলেন, ‘নির্বাচনী ছক তৈরিতে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো নানা কৌশল খাটাবে সেটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন আপাত স্থিতিশীল থাকার পর এ ধরনের তৎপরতা সেই কৌশলের অংশ।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় থাকা বাংলাদেশের রাজনীতির দিকেও মনোযোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। সুতরাং একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ রয়েছে সরকারের। ফলে সামনের দিনগুলোতে বিরোধী দলগুলোর রাজনীতি চর্চার সুযোগ বাড়বে বলে আশা করা যায়।’
অশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারি দলই বেশি চাপে থাকবে মন্তব্য করে গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে সরকারের অর্জন কম নয়। ফলে একমাত্র ‘তিলক’ হয়ে থাকা বিরোধী দলগুলোর রাজনীতি চর্চার সুযোগ বাড়ানোতে চেষ্টা থাকবে সরকারের।’
কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটি রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে’। তবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো বিকল্প আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নেই বলেও মনে করেন তিনি।
এ দিকে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী পরপর দুইবার জাতীয় নির্বাচনের অংশ না নিলে নিবন্ধন বাতিলের শঙ্কায় রয়েছে বিএনপি। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জনের পর সামনের নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন হারাতে হতে পারে দুই পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় থাকা দলটির। এসব বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের চাপ রয়েছে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলেরই।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন