বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একই দিনে দুর্নীতি ও জাতীয় পতাকার মানহানি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে আগামী শনিবার (১৪ অক্টোবর) সারা দেশে ‘প্রতিবাদ’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সস্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এ সময় তিনি অবিলম্বে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি বাতিলের দাবি জানান।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডনে চোখের অপারেশন হয়েছে। তিনি নিয়মিত চেকআপে আছেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি দেশে ফিরবেন। তাঁর দেশে ফিরতে আর বেশি বিলম্ব হবে না। ঠিক এ মুহূর্তে জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সরকারের ক্রমাগত এক কুটিল ছক বাস্তবায়নের অংশ। তাছাড়া ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়ার সাথে সাথেই যুবলীগ-ছাত্রলীগের মিছিল প্রমাণ করে যে, সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশেই বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কারসাজির নির্বাচনসহ একের পর এক সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মসূচি সফল করতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে সরকারের নানামুখী সুক্ষ্ম কূটকৌশলপূর্ণ কর্মকাণ্ড দেশবাসীর বুঝতে বাকি নেই। খালেদা জিয়াকে হয়রানি করে কোনও পাতানো নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া হবে না। দল নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনেই কেবলমাত্র দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট ও গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলসমূহ অংশগ্রহণ করবে।’
দলের এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির নাজেহালের দৃশ্য দেখে গোটা বিচার বিভাগ এখন শঙ্কিত হয়ে পড়ছে, এজন্য তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। এই সুযোগে আজকে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে যে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে, তা ভোটারবিহীন সরকারের সর্বোচ্চ স্থান থেকেই হুকুম হয়েছে বলে দেশবাসী মনে করে।’
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘সন্ত্রাসী কায়দায় বিচার বিভাগকে সরকারপ্রধান একক কর্তৃত্বে নিয়ে আসার কাজ বাস্তবায়নের পথে অনেক দূর এগিয়ে এসেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সর্বোচ্চ আদালতকে নতজানু রাখার নীতি চলমান রাখতে বাতিকগ্রস্তদের মতো উদ্ভট উল্লাসে এখন সরকার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে দমন করার অপচেষ্টায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সরকারের হুকুমেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।’
ক্ষমতাসীন সরকার দেশের বৃহৎ ও প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে বাদ দিয়ে একতরফাভাবে নির্বাচন করার জন্য আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি করার নীলনকশা আঁটছেন বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘সরকার নিজেই তাল-বেতালের বানোয়াট কথাবার্তার ডামাডোলে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত ও আশঙ্কাজনক করে তুলেছে। এবং তারা নির্বাচনের নামে বিভ্রান্তি, ধোঁয়াশা ও জনগণের চোখকে অন্যদিকে ফেরানোর জন্য কূটচালের আশ্রয় নিয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলেনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালি, দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া, বিএনপি নেতা এম এম মালেক, কাজী আবুল বাশার, আব্দুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন ও আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে হাজির না থাকায় বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান।
এর আগে স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকার মানহানি করার অভিযোগে আরেক মামলায় সমন জারির পরও আদালতে না আসায় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার মহানগর হাকিম নূর নবী।
এছাড়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুই বছর আগে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে আটজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় গত সোমবার খালেদা জিয়াসহ ‘পলাতক’ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন