দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভক্ত দুই গ্রুপের মধ্যে দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করে। এক পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ।
বীরগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আবু আককাস আহমেদ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, একটি সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে বীরগঞ্জে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ অফিসের আশে-পাশে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিলো। তবে কোনো অপ্রীতির ঘটনা ঘটেনি।
যা ঘটেছে :
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বীরগঞ্জের ১১ টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। এ নিয়ে ১৪ অক্টোবর দিনাজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বুধবার বীরগঞ্জে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন।
কিন্তু সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করলেও কোথায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে তা ঘোষণা দেননি তিনি।
এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধ পক্ষ বীরগঞ্জের স্থানীয় সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপাল সমর্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ ধারণা করেন, আমিনুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়েই সংবাদ সম্মেলনটি করবেন। দলীয় কার্যালয়ে আমিনুল ইসলামের সংবাদ সম্মেলন প্রতিহত করার জন্য সকাল থেকে তারা উপজেলা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ নিয়ে গোটা বীরগঞ্জ উপজেলায় সকাল থেকেই টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে।
পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য :
এ বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম জানান, দলীয় নিয়ম-নীতি না মেনেই উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে। তাকে এ বিষয়ে আমিনুল ইসলাম না জানালেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে তিনি তা জেনেছেন। ফলে সকালে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন প্রতিহত করা হয়।
তবে বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেননি। তার বীরগঞ্জ পৌর এলাকার বাসভবনেই সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। শুধু সংবাদ সম্মেলন নয়, এ নিয়ে আরও কর্মসূচি ছিলো। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক লক্ষণ চন্দ্র সরকার গত রাতে মারা যাওয়ায় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম :
দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম তার বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন জানান, গত ১৪ অক্টোবর বীরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে আমার বিরুদ্ধে যে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করেছে তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ১১ নং ইউপি চেয়ারম্যান আতাহারুল ইসলাম চৌধুরী হেলাল অধিকাংশ জামাত-শিবির ও বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যানদের সাথে জোট করেছেন। তিনি তাদের নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমুলক অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। মূলত আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে তারা।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আমাকে মনোনয়ন দিলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট আমাকে পরাজিত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা চালায়। পরবর্তীতে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও নৌকার প্রায় সকল প্রার্থীকে পরাজিত করার জন্য ষড়যন্ত্র ও চেষ্টা চালায়। যার ফলে ১১টি ইউনিয়নের বেশীরভাগ জামাত-শিবির ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়। সেই সমস্ত চেয়ারম্যানদের নিয়ে এখন আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজিউর রহমান রাজু, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি শিবলী সাদিক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউর রহমান জিয়া, রহমত আলী, তরিকুল ইসলাম, পরেশ চন্দ্র রায়, আবুল খায়ের ও রবিউল ইসলাম সাবুল, বীরগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুণ চন্দ্র দাস প্রমুখ।
বীরগঞ্জে আ’লীগে বিভক্তি :
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বীরগঞ্জে স্থানীয় সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপাল এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সভাপতি জাকারিয়া জাকার নেতৃত্বাধীন গ্রুপে অবস্থান নিয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন