মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চরম নির্যাতনের মুখে রাখাইন থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরম মমতায় আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যরকম এক মানবিক বাংলাদেশের প্রশংসায় মুখর বিশ্ব। এমন প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে মেতেছে একটি পক্ষ। গ্রেপ্তারকৃত এক তরুণের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে স্থানীয় পুলিশ বলছে জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কিছু সংগঠন ও এনজিও অপতৎপরতা চালাচ্ছে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে। ইতোমধ্যে ২১ দফার দাবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টাঙিয়েছে তারা।
গত ১২ অক্টোবর রাতে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে মাহবুবুল আলম মামুন (৩০) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিস্ফোরকদ্রব্য। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলাও হয়েছে। পুলিশ বলছে, মামুন জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী। তাকে জিজ্ঞাসবাদেই উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
মামুনের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সাগরতীরের নিদানিয়ায়। বাবার নাম আবদুর রশিদ। তবে এই যুবক নিজেকে একটি এনজিওর কর্মী দাবি করেন।
পুলিশ অবশ্য জানায়, মামুন তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী। রোহিঙ্গাদের নিয়ে এই যুবক গোপনে বিভিন্ন কাজ করে আসছিল। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ২১ দফা দাবিসংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টাঙানোর কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকারও করেছেন তিনি। তদন্ত শেষে আরও বিস্তারিত জানা যাবে বলে মনে করছে পুলিশ।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রণজিৎ কুমার বড়–য়া বলেন, শিবিরের সঙ্গে মামুনের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। একেক সময় একেক কথা বলে বিভ্রান্ত করতে চাইছে সে। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। পালিয়ে যাওয়া অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গেল ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে তল্লাশিচৌকি ও সেনাঘাঁটিতে হামলার অভিযোগ এনে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে। আর সেই অভিযানে চলছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাট। ছোট্ট শিশুকেও ছুড়ে ফেলা হয়। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় রোহিঙ্গাদের। সেনাবাহিনীর দোসর মগরাও যুক্ত হয় এতে। বাধ্য হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে থাকে।
সরেজমিন টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, ত্রাণকাজ ছাড়াও ওই এলাকায় অনেক লোক আসছেন। তাদের মধ্যে কারো কারো কার্যক্রম সন্দেহজনক মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ইতোমধ্যে এমন কয়েকশ সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়েও দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে জামায়াত-শিবির রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে। অস্থিরতা তৈরির মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে তারা।
সম্প্রতি উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী ক্যাম্পের বিভিন্ন এলাকায় ‘আমাদের ২১ দফা মানতে হবে’ রোহিঙ্গা অধিকার প্রতিষ্ঠা কমিটি ও প্রচারে সব রোহিঙ্গা জনগণÑ শিরোনামে ছবি ও লোগোসংবলিত ব্যানার টাঙানো হয়। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় টাঙানো এসব ব্যানার যে রোহিঙ্গারা বানায়নি এটি নিশ্চিত হয়েছে স্থানীয় পুলিশ। অন্যপক্ষ রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে বলে প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। ব্যানার তৈরির অর্থদাতাসহ উসকানিতে জড়িত অনেকের নাম জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে কৌশলগত কারণে তারা এখনই সব কিছু জানাতে চান না। তবে ব্যানারে লেখাগুলো যৌক্তিক হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমন প্রচার হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
ব্যানারে রোহিঙ্গাদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নাগরিক অধিকার দিয়ে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়াসহ নানা অধিকারের কথা বলা হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, রোহিঙ্গারা এখনো আসছে। ইতোমধ্যে যারা এসেছে তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সবার মাথা গোজার ঠাঁই মেলেনি এখনো। সরকারিভাবে শরণার্থীর মর্যাদাও দেওয়া হয়নি তাদের। এমন প্রেক্ষাপটে এভাবে দাবি জানিয়ে পোস্টার লাগানোর বিষয়টি অস্বাভাবিক ও উদ্বেগের বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল আমাদের সময়কে বলেন, পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সূত্র : আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন