বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে নিজের ভূমিকার চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।
তিনি জানান, ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার সময় কারাগারে আটক শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য হস্তক্ষেপ করতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে অনুরোধ করেছিলেন।
প্রণব তার আত্মজীবনীমূলক বই 'দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস ১৯৯৬-২০১২'-তে এ তথ্য জানান।
বইটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি সাময়িকী ইন্ডিয়া টুডের চলতি সংখ্যায় তুলে ধরা হয়েছে।
এতে 'রেসকিউয়িং বাংলাদেশ'স টু বেগমস' নামের একটি অনুচ্ছেদে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়।
প্রণব উল্লেখ করেন, নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে (২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি) বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ জরুরি অবস্থা জারি করেন। তিনি ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন।
তিনি লেখেন, ওই সময় সব প্রভাবশালী রাজনীতিকদের বন্দি করা হয়। ঘুষ ও দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনাকেও কারাবন্দি করা হয়। ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পাশাপাশি আমরা শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য এবং অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে চাপ দিচ্ছিলাম।
প্রণব মুখার্জি লেখেন, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ ছয় দিনের ভারত সফরে আসেন। এ সময় তিনি আমার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সময় আমি তাকে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির গুরুত্ব বোঝাই। তখন মইন ভয় পাচ্ছিলেন যে শেখ হাসিনা কারামুক্ত হওয়ার পর তাকে চাকরিচ্যুত করতে পারেন। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে মইনের দায়িত্ব নেই এবং তাকে আশ্বস্ত করি যে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ফেরার পরও তার চাকরি বহাল থাকবে।
বাংলাদেশের দুই নেত্রীকে মুক্ত করতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বলেও উল্লেখ করেন প্রণব।
তিনি লেখেন, আমি খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়ের মুক্তির ব্যাপারে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সাক্ষাৎ চাই।
তিনি আরও লেখেন, তৎকালীন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এমকে নারায়ণনের মাধ্যমে আমার হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি এবং বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ফেরার বিষয়টি আমি নিশ্চিত করি।
এর কয়েক বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্সার আক্রান্ত জেনারেল মইনের চিকিৎসার ব্যাপারে আমি তাকে সহযোগিতা করেছিলাম বলে উল্লেখ করেন ভারতের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।
আত্মজীবনীতে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আমার ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু। যখন আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম, তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির মাধ্যমে ভারত তাকে সহযোগিতা করতে সচেষ্ট ছিল।
তিনি আরও বলেন, এমনকি শেখ হাসিনা কারাবন্দি থাকার সময় আওয়ামী লীগ নেতারা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার চেষ্টা করলে আমি তাদের তিরস্কার করেছিলাম। আমি তাদের বলেছিলাম, বিপদের সময় কাউকে ছেড়ে যাওয়া অনৈতিক। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচন হয়, যাতে শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন