চট্টগ্রামে ফের আলোচনায় সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গৃহকর অ্যাসেসমেন্ট বাড়ানো নিয়ে সরাসরি মুখোমুখি হয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশলী এই দুই নেতা।
একজন দিয়েছেন আল্টিমেটাম অন্যজন নিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের আশ্রয়। এ নিয়ে চট্টগ্রামে রাজনৈতিক মাঠে দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা। দু’পক্ষের নেতা কর্মীদের মাঝেও এ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের অনুসারীরা ফেসবুকে বিভিন্নভাবে স্ট্যাটাস দিয়ে মাঠে শক্তি পরীক্ষারও জানান দিচ্ছে।
গত বছরও গৃহকর নিয়ে তারা বাহাসে জড়ান। ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল নগরীর ফিরোজ শাহ এলাকার একটি বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে মহিউদ্দিন চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে মেয়র নাছির বলেছিলেন, সাবেক একজন মেয়র মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য উপাত্ত দিয়ে নাগরিকদের বিভ্রান্ত করছেন।
ওই বছরের ১ মে লালদীঘি মাঠে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে মেয়র নাছিরকে উদ্দেশ করে মহিউদ্দন চৌধুরী বলে ছিলেন, হুংকার বন্ধ করুন। নগর পিতা বানিয়েছি হুংকার দেওয়ার জন্য নয়।
এদিকে আক্রোশের রেশ কাটতে না কাটতে আবারো গৃহকর নিয়ে দুই নেতা মুখোমুখি হয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নতুন কর মূল্যায়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ১৭ শতাংশ গৃহকর নির্ধারণ করে। এর মধ্যে সাত শতাংশ হোল্ডিং বাবদ, তিন শতাংশ বিদ্যুতায়ন এবং আবর্জনা অপসারণ বাবদ সাত শতাংশ।
নতুন নিয়ম অনুসারে যে কোনো বহুতল স্থাপনার সব ফ্ল্যাটের মোট বার্ষিক ভাড়া থেকে দুই মাসের ভাড়া বাদ যাবে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হিসেবে। ভবন মালিক যদি ঘর ভাড়া না দিয়ে শুধুমাত্র নিজেই বসবাস করেন সেক্ষেত্রে এ থেকে আরো ৪০ শতাংশ ছাড় দেয়া হবে। এরপর বার্ষিক ভাড়ার যে মোট অংক বাকি থাকবে তার উপর ১৭ শতাংশ কর দিতে হবে। এর আগে স্থাপনার আয়তনের (বর্গফুট) ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে হতো।
এ ঘোষণার পর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষাভ সমাবেশ করে নগরবাসী। তাদের দাবী নতুন মূল্যায়নে গৃহকর বেড়েছে প্রায় ১০ গুণেরও বেশি। তাই নতুন গৃহকর বাতিল করে পুরনো নিয়মে আদায়ের দাবি করেন হোল্ডিং মালিকরা। এমনকি গৃহকর নিয়ে আপিলও করা করেছেন অনেকে।
এদিকে গৃহকর পুনঃমূল্যায়ন বাতিল এবং পূর্বের নির্ধারিত হারে গৃহকর আদায়ের জন্য মেয়রকে এক মাসের সময় দিয়েছিলেন সাবেক এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি এ সময়ের মধ্যে বর্ধিত গৃহকর প্রত্যাহার না করলে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য মেয়রকে দায়ী থাকতে হবে বলে জানিয়ে দেন। অন্যদিকে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনও তার অবস্থান থেকে অনড় থাকে।
তিনি বলেছেন, দেশে ক্রমে আইনের প্রয়োগ ও প্রতিফলন হচ্ছে। আইন কথা বলা শুরু করেছে। আমি আপনি কেউ আইনের উর্দ্ধে নই। অন্যদিকে মহিউদ্দিন বলেন, আল্টিমেটামের সময় এখনো শেষ হয়নি। আলটিমেটাম শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে ১৮ অক্টোবর বুধবার নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন মেয়র আজম নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, গৃহকর বিষয় নিয়ে কারো কোন বক্তব্য থাকলে, অনিয়ম হলে একমাত্র উপায় আপিল করা। অ্যাসেসমেন্টে আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে, অনিয়ম হলে একমাত্র উপায় আপিল করা। ইতিমধ্যে ৪০ হাজার আপিল জমা পড়েছে সিটি করপোরশনে। আইনি কাঠামোয় থেকে যত সুযোগ আছে নগরবাসীর জন্য করব, সহায়তা ও ছাড় দেব। এখানে কোনো রাজনীতি, সংকীর্ণতা বা উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। এটি সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে নগরবাসীর কথা সর্বোচ্চ গুরত্বের সঙ্গে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছি। আপিলের বিকল্প কিছু নেই।
ভাড়ার ওপর কর নির্ধারণ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২৭ শতাংশের জায়গায় ১৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স রেইট ধার্য করেছি আমরা। আইন মেনেই তা করা হয়েছে। এতে কারো আপত্তি থাকলেও আইন সংশোধনের ক্ষমতা আমার নেই।
তিনি বলেন, আগের মেয়ররা আইন না মেনে গৃহকর নির্ধারণ ও আদায় করেছেন। আইনি কাঠামোতে ভাড়ার বাইরে গিয়ে কিছু করার এখতিয়ার, বিধান, ক্ষমতা নেই। আমরা লিফলেট, মাইকিং, বিজ্ঞপ্তিতে বারবার বলেছি কোনো অ্যাসেসর যদি দুর্ব্যবহার করে, অনিয়ম করে জানাতে। কিন্তু আমাদের কাছে একজন নগরবাসীও অভিযোগ করেননি। তারপরও বলছি, কারো বক্তব্য থাকলে আপিলের সময় ধৈর্য ধরে শুনব। আন্তরিকভাবে বিবেচনা করব।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন করবিধি অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর কর পুনর্মূল্যায়ন করতে হয়। ২০ আগস্ট সিটি করপোরেশনের ২৫তম সাধারণ সভায় কর পুনর্মূল্যায়ন অনুমোদন দেয়া হয়। কর পুনর্মূল্যায়ন শেষে করপোরেশন এলাকায় হোল্ডিং সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার ২৪৮টি। এর মধ্যে নতুন হোল্ডিং ২৮ হাজার ৭০২ ও পুরনো এক লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৫টি।
সূত্রে জানা যায়, এ বছর নতুন করে গৃহকর মূল্যায়নের কাজ শুরুর পর থেকেই নাছির বিরুদ্ধে সরব অবস্থানে রয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। একপর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল লালদীঘি মাঠে এক সমাবেশ ডেকে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে খুনি বলেও আখ্যা দেন। ১২ এপ্রিল পুনরায় সংবাদ সম্মেলনে একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন। পরবর্তী সময় আ জ ম নাছির উদ্দীন এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদ করলে মহিউদ্দিন চৌধুরী চুপ হয়ে যান।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, একটি বাড়ির ১০ মাসের মোট ভাড়ার ১৭ শতাংশ গৃহকর হিসেবে পরিশোধ করতে হবে। বিভিন্ন বাড়ির মালিক দাবি করে আসছেন, যারা গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন করেছেন, তারা স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি হার দেখিয়ে কর নির্ধারণ করেছেন। এতে নগরবাসী সিটি করপোরেশনের কর মূল্যায়নকারীদের ওপর নয়, ক্ষেপেছেন মেয়রের ওপর।
তবে মেয়র বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহকর শতভাগ মওকুফ করব। আর যারা কেবল ভাড়ার ওপর সংসার চালায়, তাদেরও যৌক্তিক হারে গৃহকর কমানো হবে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন