ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন সদরের ফরিদপুর-৩। এ আসনের এমপি নির্বাচিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় সংসদে। বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। এর আগে তিনি প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪ জন এমপির একজন তিনি। আগামীতে এ আসনে তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে তার বিপরীতে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী ছিলেন না। সে সময় তিনি ভোট পেয়েছিলেন ১ লাখ ২২ হাজার ৪৭টি। আর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ তখন দলের মনোনয়ন পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কামাল ইবনে ইউসুফ ভোট পান ৭৬ হাজার ৪৭৮টি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সমর্থকেরা জানান, এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এ এলাকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করেছেন। তাই আগামী নির্বাচনেও ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন এবং তিনি জয়ী হবেন বলে তাদের অভিমত।
১৯৭৯ সালের নির্বাচনে ফরিদপুর সদর আসনে নির্বাচন করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন সে সময়ের তরুণ নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। এরপর ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের মন্ত্রিপরিষদের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ২০০১ সালে ত্রাণ ও দুর্যোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও এ আসনে পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে স্বল্পকালীন সংসদ সদস্য ছিলেন এই বিএনপি নেতা। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এ আসনটি বিএনপির হাতছাড়া।
আগামীতে আসনটি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বিভিন্ন সময় ফরিদপুরে এসে এলাকার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে তিনি নেতাকর্মীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করছেন। অন্য দিকে বাবার হাত ধরে এ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ আহমেদ। কামাল ইবনে ইউসুফের প্রতিনিধি হয়ে তিনিও বিভিন্ন সময় জনসংযোগ করছেন।
এ আসনে বিএনপি থেকে আরো প্রার্থী হতে চাচ্ছেন যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু। শুরু থেকেই যুবদলের রাজনীতিতে জড়িত পিংকু ৮০-এর দশকের সংগ্রামসহ বিভিন্ন আন্দোলনে এখনো সক্রিয়। বিগত উপজেলা নির্বাচনে মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু বিএনপির প্রার্থী হয়ে প্রায় ৬৮ হাজার ভোট পান। এর পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকায় এসে দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। সর্বশেষ ঈদ ও পূজায় মাহবুবুল হাসান পিংকু সদর আসনের প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে দরিদ্র মানুষের মধ্যে বস্ত্র বিতরণসহ সামাজিক ও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রচারণা চালান। কোতোয়ালি থানা বিএনপির সভাপতি রউফ উন নবী এবং জেলা যুবদলের সভাপতি আফজাল হোসেন খান পলাশসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের একটি অংশ এ সময় তার সাথে ছিল। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েল আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন স্বেচ্ছাসেবক দল ও বিএনপির ব্যানারে। সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের তরুণ নেতাকর্মীদের মাঝে তার সমর্থক রয়েছে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া বলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের বিকল্প প্রার্থী এ আসনে নেই। তাকেই আমরা জিতিয়ে আনব আগামী নির্বাচনে। বিএনপির এ আসনটি যাতে পুনরুদ্ধার করা যায় সে জন্য সবাই একসাথে কাজ করবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বললে তারা অভিমত দেন, বিগত দিনে ফরিদপুরের অন্য আসনগুলো আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও সদর আসনটি বিএনপির দখলেই ছিল। সদরের এ আসনে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ টানা পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হন। তিনবার মন্ত্রী থাকার ফলে এলাকায় তিনি অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। তবে দীর্ঘ দিন ধরে দলের সম্মেলন এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নতুন কমিটি না হওয়ায় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা আছে। গত পৌরসভা নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হন। আর বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ফরিদপুরের ১১টি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীরা ৬টিতে এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ৫টিতে বিজয়ী হন। ফরিদপুর জেলা সদরের এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে হলে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলে মনে করেন দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরা।
এ দিকে জেলা জামায়াতের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থিতার বিষয়টি ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। অবশ্য ২০ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন না করলে সে ক্ষেত্রে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুত তাওয়াব এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হতে পারেন। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, সদর আসনে জামায়াতের ভোট বিজয়ী প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।
এ দিকে ফরিদপুর-৩ আসনে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন সাংবাদিক প্রবীর শিকদার। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে তিনি নির্বাচন করবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তবে দলীয় না স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন তা এখনো জানা যায়নি। জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি মরহুম ইমরান চৌধুরীর সহধর্মিণী হাসিনা চৌধুরী এবং জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো: ইয়াহিয়ার পোস্টার ও বিলবোর্ডে দেখা গেলেও এ আসনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে সমর্থন দিয়ে রেখেছে এখন পর্যন্ত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন