বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে আপোস করেননি বলেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলা দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আজকে তাকে (খালেদা জিয়া) প্রতি সপ্তাহে একদিন হাজিরা দিতে হচ্ছে। এখন দুঃসময় চলছে। এটা শুধু খালেদা জিয়া বা অন্য কারো জন্য নয়, এটা সমগ্র দেশের মানুষের জন্য কঠিন সময়।’
সোমবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে গণ-সাংস্কৃতিক দল আয়োজিত জাতীয় বীর অলি আহাদ ও চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলামের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সভা-সমাবেশ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেওয়া হয় না। এমনকি ঘরের মধ্যে মিটিং করতে দেয়া হয় না। গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এই জন্যই আমরা অধিকার ফিরে পেতে গণতন্ত্র চেয়েছি। আমরা বলি না, আমরা ক্ষমতায় আসতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মুখোশ পরে যারা গণতন্ত্রের কথা বলছে তারা মিথ্যা বলছে, জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। সেই জন্য বাইরে থেকে যারা আসে তাদের কাছে দেশে গণতন্ত্রহীনতার কথা বলি। এদেশের মানুষ অতীতে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। এদেশের মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে কারো দয়া চাইবে না। বুকের রক্ত দিয়েই প্রতিষ্ঠা করবে। তবে এর জন্য সবাইকে গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এদেশের মানুষ মুক্তি চায়, গণতন্ত্র চায়, মানুষের অধিকার চায়। খালেদা জিয়াকে তারা প্রতীক হিসেবে দেখে। সবাই জেগে উঠে অধিকারগুলো আদায় করে নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এদেশের সব কিছু অর্জনের নেপথ্যে ছিল তরুণরা। সেই তরুণদেরই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়ে আসতে হবে। অনেকেই খালেদা জিয়ার সমালোচনা করেন। তার অনেক ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। তবে এই কথাটি তো সত্য, তিনি আরাম-আয়েশ ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘ নয় বছর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। তিনি সেই ব্যর্থ অবৈধ মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারকে মেনে নেননি। সেই জন্য তাকে ১৬ মাস কারাগারে থাকতে হয়েছে। আর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে আপোস করেননি বলেই তার বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলা দেয়া হয়েছে, তাকে প্রতি সপ্তাহে একদিন হাজিরা দিতে হচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘আজকে এই স্বৈরাচারী সরকার জনগণের ওপর চেপে বসে আছে। তারপরও খালেদা জিয়া এতোটুকু আপোস করেননি। আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে দেশের চিত্রই ফুটে উঠেছে। ভবিষ্যতেও তিনি কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোস করবেন না।’
রোহিঙ্গা সংকটকে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা নিয়ে বড় ধরনের চক্রান্ত চলছে। তাই স্পষ্ট করে বলছি, রাজনীতি নয়, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার পদক্ষেপ নিতে দেরি করেছে। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করলেই সরকারের হাত শক্তিশালী হবে।
তিনি বলেন, ‘সরকার একদলীয় ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকতে চায়। প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে লিখেছিলেন ‘আমিত্ব’। এই কথাটি আমি এর আগেও বলেছিলাম ‘আমি’ ছাড়া আর কেউ নেই, এই ‘আমিত্ব’ ভাবটিই পুরো বাংলাদেশকে পাল্টে দিয়েছে। পৃথিবীর সব দেশের নেতাদের নিয়ে কার্টুন হয়। আমাদের দেশে করা যাবে না। ৫৭ ধারায় আটকা পড়ে যাবেন। এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
এ সময় প্রয়াত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম ও ভাষা সৈনিক অলি আহাদের স্মৃতিচারণ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, যারা আমাদের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছেন, পথ দেখিয়েছেন আজ তারাই অবহেলিত। দুর্ভাগ্যজনক যে, আজকে বিশ্ব নেতৃত্ব এমন মানুষের কাছে চলে গেছে যারা মানবতার কোনো গুরুত্ব দেয় না। তারা নিজেদের ভোগ-বিলাস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়।’
তিনি বলেন, অত্যন্ত সুপরিকিল্পতভাবে ডাকসুসহ সব ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। শুধু এই সরকার নয়, পরম্পরায় দীর্ঘ দিন ধরেই ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। এই সমাজকে যদি পরিবর্তন করা না যায়, সমাজকে যদি পরিবর্তন করা না যায় তাহলে মাওলানা ভাসানী বলেন, আর অলি আহাদই বলেন, অন্যান্য দিকপাল যারা পৃথিবী বদলে দিয়েছেন তাদের অনুসরণ করা সম্ভব হবে না।
আদালতকে কুক্ষিগত করতে প্রধান বিচারপ্রতিকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এ আলম মামুনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহান, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন