ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের দুই দিনের ঢাকা সফরে এমন কোনো ইঙ্গিত পায়নি, যাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আশান্বিত হতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথক বৈঠকগুলো গতানুগতিক ও সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। সাক্ষাতের সময় এমন কোনো আলোচনা হয়নি, যাতে বিএনপি কিংবা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য বিশেষ বার্তা আছে। তবে বৈঠকটি নেতিবাচক হিসেবে দেখছে না দলের নীতিনির্ধারকরা।
সুষমা স্বরাজের এ বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি, যার কারণে বিএনপির নেতাকর্মী কোনো সুখবরও পায়নি। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বিষয়টিকে খুব স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে। কারণ এ বৈঠকে বড় ধরনের বার্তা পাওয়ার খুব আশাও করেনি। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বার্তা পাওয়ার আশা ছিল। তাদের ধারণা ছিল, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন কিছু বলবেন, যাতে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিষ্কার হবে।
রবিবার রাতে হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ভারত চায় যে অন্য দেশগুলো, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোয় গণতান্ত্রিক চর্চা থাকুক এবং গণতান্ত্রিকভাবেই সরকার নির্বাচিত হোক। এখানে নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় সেটা তিনি আশা করেন। এ জন্য নির্বাচন কমিশন যেন তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়া নির্বাচন প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। সংসদ ভেঙে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুললে এ ধরনের সরকার গঠনের বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। নির্বাচনের আগে লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন ভূমিকারও কথা আসে তাদের বৈঠকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুষমা শুনেছেন, বলেছেন কম। আবার এমন কিছু বলেননি, যাতে বিএনপির বিষয়ে ভারতের দৃষ্টি পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। সেখানে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা দেখতে চায়। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন দখেতে চায়। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে কী করা উচিত, সে বক্তব্যও আমরা দিয়েছি।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, তিনি শুনেছেন। কিন্তু তিনি (সুষমা স্বরাজ) কিছু বলেননি।
জানা গেছে, নির্বাচন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সংসদ ভেঙে নির্বাচনের কথা বলা হয়। বিএনপি সুষমা স্বরাজকে জানায়, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিধান থাকলেও পৃথিবীর কোথাও সংসদ রেখে নির্বাচনের বিধান নেই।
এ সময় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল। সেই আওয়ামী লীগই এ পদ্ধতি বাতিল করেছে। তারা নির্বাচনে সেনাবাহিনী চায় না। এগুলো তাদের খারাপ উদ্দেশ্য। বিএনপি নেতার ভাষ্য অনুযায়ী ওই সময় সুষমা স্বরাজ বলেন, গতবার তো আপনাদের অবস্থা ভালো ছিল। নির্বাচনে এলে ভালো করতেন। এবার নির্বাচনে আসবেন আশা করি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন আরেক নেতা বলেন, সরকার সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলছে এমনটিও বলা হয়। সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিষয়টি তোলা হয়। কীভাবে তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, তা-ও বলা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন