সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে হলে সেনাবাহিনী মোতায়েন অপরিহার্য বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন। আগামী নির্বাচকে একটি ‘দুরূহ’ নির্বাচন আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী মোতায়েন না হলে ভোটাররা কোনোভাবেই আশ্বস্ত হবে না। কারণ সামরিক বাহিনীকে মনে করা হয় একটি নিউটাল ফোর্স।’
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি জানি না কেন কিছু কিছু রাজনৈতিক দল সামরিক বাহিনীকে আরপিওর মধ্যে রাখতে চাচ্ছে না। তাদের অসুবিধা কোথায়, আমি তো কোনো অসুবিধা দেখছি না। আমি নির্বাচন কমিশনকে বলেছি সামরিক বাহিনীকে কীভাবে ব্যবহার করবেন সেটা আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আপনাদের।’
সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা ম্যানুয়াল নেই। এটা তৈরি করতে ইসিকে বলেছি। কারণ কমপ্লিনের কোনো রেকর্ড থাকে না। এটা প্রয়োজন। আর যেটা ইসিকে বলেছি এই ইলেকশনটা আপনাদের জন্য একটা দুরূহ ইলেকশন হবে। কী কী বিষয়ে আপনারা নেবেন, গত ইলেকশন থেকে আপনারা একটা লেসন নিয়ে নেবেন। এখন কনস্টিটিউশনে যেভাবে আছে এটা নির্বাচন কমিশনের জন্য খুব ডিফিকাল্ট।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বেটার নির্বাচনের জন্য ইসিকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমি ইসিকে লিখিত বক্তব্যে বলেছি, নির্বাচন কমিশন একটি সুপার গভর্নমেন্ট। আমি আরপিওর ২২টি জায়গায় পরিবর্তন করতে বলেছি, সেটা রাখা না রাখা ইসির ব্যপার।’
প্রসঙ্গত, নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৪টি রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে সেনা মোতায়ন চেয়েছে। যেখানে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে নির্বাচনের সময় কোন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা যাবে, তা ফৌজদারি কার্যবিধি ও সেনা বিধিমালায় সুস্পষ্টভাবে বলা আছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আমাদের সময়ে যে নির্বাচন হয়েছে সেটা আমরা আর চাই না। কারণ আমাদের সময় আইনশৃঙ্খলার অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। দেশের অনেক বড় দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক কঠিন সময়ে নির্বাচন করেছি, ওই সময়ের সঙ্গে এখনকার সময় মেলানো যাবে না। এখন সময় অনেক ভালো। আমি মনে করি সবার অংশগ্রহণে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। এখন আমাদের নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আইন ও সীমানার তেমন পরিবর্তন করার প্রযোজন নেই। অল্প কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা যেতে পারে। তবে যত কম পরিবর্তন করা যায় তত ভালো। আমি মনে করি বিদ্যমান আইনের নির্বাচন করা যেতে পারে।’ সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপের আয়োজন বর্তমান কমিশনের জন্য পজেটিভ হয়েছে বলেও জানান এ সাবেক কমিশনার।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন সংস্কার, সীমানা পুনঃনির্ধারণসহ ঘোষিত রোডম্যাপ নিয়ে কেএম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ৩১ জুলাই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়ে সংলাপ শুরু করে ইসি। ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি। এরপর ২৪ আগস্ট থেকে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন, যা শেষ হয় গত বৃহস্পতিবার। এরপর ২২ অক্টোবর পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান ও ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ইসি। আজ নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী সংলাপ।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন