রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বের হয়েছে এই গাড়িটি। কালোগ্লাসে ঘেরা এই গাড়ির নম্বরপ্লেটে লাইসেন্স নম্বর নেই। সেখানে লেখা আছে ইঞ্জিন নং-৭৪৩৩২১। তবে গাড়িটি ফলো করতেই সন্দেহের কিছুটা সমাধান মেলে। গাড়ির ভেতরে যারা বসা ছিলেন তাদের গায়ে টেকনাফে ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতে যাওয়া ডিবি পুলিশের মতই জলপাই রঙের পোষাক। পেছনে হলুদ রঙের ইংরেজি অক্ষরে লেখা আছে (DB) ডিবি।
গত কয়েক মাসে ছাত্র, শিক্ষক, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাসহ অন্তত ১০ জন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ রয়েছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথের শিক্ষক ড. মুবাশ্বার হাসান সিজার গত তিন দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তার অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। সাংবাদিক উৎপল দাস নিখোঁজ রয়েছেন দীর্ঘ একমাস ধরে। তারও কোনো সন্ধান দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এসব ঘটনায় স্বজনহারাদের অভিযোগের তীর অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকেই। কিন্তু এসব নিখোঁজ ব্যক্তিদের কী অপহরণ করা হয়েছে, নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই তুলে নিয়ে গেছেন সে বিষয়ে কেউই মুখ খুলছেন না।
গত ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার। তিনি সম্প্রতি সমাজে জঙ্গিবাদের বিস্তার নিয়ে গবেষণা করছিলেন বলে জানা গেছে। তার আগে ১০ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন সাংবাদিক উৎপল দাস। এছাড়া ২২ আগস্ট থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ সাদাত আহমেদ। বিমানবন্দর সড়কের বনানী ফ্লাইওভারের নিচে তার গাড়ি আটকে কিছু লোক তাকে এরকমই একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়।
এছাড়া ২৬ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে অপহরণ করা হয় বাংলাদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আরএমএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে। একই দিন সন্ধ্যায় কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইশরাক আহম্মেদ (২০) ছুটি কাটাতে ঢাকা এসে ধানমন্ডি থেকে নিখোঁজ হন। পরদিন ২৭ আগস্ট রাত পৌনে ৯টার দিকে পার্টি অফিসে কাজ শেষ করে আমিন বাজারের বাসায় ফেরার উদ্দেশে রওনা হন কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ মেলেনি।
জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর পুত্র ব্যারিস্টার আহমাদ বিন কাসিম আরমান এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীর পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরীকেও একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়। এদের মধ্যে শুধুমাত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে ধানমন্ডির বাসায় ফেলে গেলেও বাকী দুইজনের কোন সন্ধান মেলেনি। এ বিষয়ে কোন তথ্য মিডিয়াকে না জানিয়েই গা ঢাকা দিতে বাধ্য হন হুম্মাম।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ঘটনার জন্য পরিবার পরিজন দাবি করেন তাদের নিখোঁজ স্বজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কালোগ্লাসে ঘেরা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মানবাধিকার কমিশন কিংবা রাষ্ট্রের এ ব্যাপারে কোন দায়িত্ব ও তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। স্বজন হারানোর এ সারি কি দীর্ঘায়িত হতেই থাকবে?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন