নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আড়ালে আগে থেকেই প্রচারণায় আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনমুখী হচ্ছে ‘মাঠের বিরোধী দল’ বিএনপিও। তবে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ঝুলে আছে সংসদের বাইরে থাকা অধিকাংশ দলের নির্বাচনের অংশগ্রহণের বিষয়টি। বিএনপির পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক থেকে অনেকটা সরে এসে নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকারের’ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যদিও সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব তারা এখন পর্যন্ত দেয়নি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ‘তত্ত্বাবধায়ক’ ও ‘সহায়ক সরকারের’ মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখছে না। দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা অনড়।
.
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন ঘিরে যতটা সম্ভব ছাড় দিতে রাজি বিএনপি। সে লক্ষ্যে ‘সর্বোচ্চ ছাড়’ দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা শিগগিরই তুলে ধরবে দলটি। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে সর্বোচ্চ যোগাযোগ রাখছেন দলের নেতারা।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা দুটি বিষয় সামনে নিয়ে এগোচ্ছেন। প্রথমত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বাস্তবায়নের চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে সরে যাওয়া নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, এটা না হলে অন্তত নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সর্বময় ক্ষমতা খর্ব করা।
তারা মনে করেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগের সর্বময় ক্ষমতার মালিক প্রধানমন্ত্রী। তার অধীনে প্রশাসনকে রেখে নির্বাচন কমিশন চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুতরাং এই ইস্যুতে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, তারা বিশ্বাস করেন- আগামীতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা না থাকা বা নির্বাচন পরিচালনায় প্রধান ও অন্যতম শক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তার পদে বহাল থাকলে নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়।
তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ছেড়ে দিলে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেও বিএনপির জন্য তেমন অসুবিধা হবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা যতটুকু তার দলের জন্য কাজ করবেন, প্রধানমন্ত্রী না থাকলে তা পারবেন না।
একই সঙ্গে বিএনপি নেতারা এটাও মনে করেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ যতটা আওয়ামী লীগের অনুকূলে ছিল তা এবার থাকবে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর পদে না থেকে দলকে ক্ষমতায় আনা শেখ হাসিনার জন্য কষ্টকর হবে।
গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় ভারত সরকারের সরাসরি সমর্থন বা নির্বাচনকালীন সময়ে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা এবার সম্ভব নয় বলেও মনে করেন দলটির নেতারা।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘একটা সমোঝোতার প্রস্তাব তো তৈরি হচ্ছেই। তা রূপরেখায় স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘এটুকুও বলি- নির্বাচনের সময় পার্লামেন্ট থাকতেই পারে না, আগেতো এটা ছিল না। এটাতো তারাই (আওয়ামী লীগ) করেছিল।’
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, ‘যদি প্রধানমন্ত্রী সরে দাঁড়ান- এটাতো আমরা একটা প্রস্তাব দিচ্ছি, জনগণ দেখবে। প্রস্তাব যেহেতু দেব তাই এ মুহূর্তে আর বেশি কিছু বলতে চাই না।’
কবে নাগাদ প্রস্তাব দেবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সব কিছুরই তো একটা সময় আছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সরে যাওয়ার প্রস্তাব যেমন আসতে পারে, তেমনি নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবও থাকতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী সরে গেলে নির্বাচনে যাবেন এমন প্রস্তাব নিয়েই তাহলে এগোচ্ছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই। বিএনপি এমন একটা অবস্থান নিতেই পারে।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থাকছেন শেখ হাসিনা- এটা একটা জিনিস, আবার সর্বশক্তি তার। যদি তার নির্বাচনকালীন ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া যায়, সেটা একটা উপায় হতে পারে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন