চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এক সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতাপশালী ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বর্তমানে সংগঠনটির কার্যক্রমে গতি আনতে সাংগঠনিক কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। পদ-পদবির আধিপাত্য বিস্তারে উপদলে বিভক্ত এ সংগঠনটির নেতারা। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনটির কার্যক্রম নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদারের বিরুদ্ধে একাধিক স্ত্রী নিয়ে সংগঠন বিমুখ। এমন তথ্য মানবকণ্ঠকে জানিয়েছেন সংগঠনটির ত্যাগী ও নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতাও এ কমিটির বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্ট।
প্রায় এক বছর আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নতুন কমিটি না হওয়ায় যেমন হতাশা বাড়ছে নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমনি নেতৃত্বের অন্তঃকোন্দল-গ্রুপিংয়ে বিপর্যস্ত করে তুলছে সংগঠনটিকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল এ যাবতকালের ইতিহাসে কর্মী সংকটের ক্রান্তিকাল পার করছে। সংগঠনটিতে ২০১২-১৩ সেশনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় কোনো কর্মীই নেই। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন চলছে ২০১৭-১৮ সেশন। ৫ বছর গ্যাপ থাকায় ছাত্রদলে অনার্স পড়–য়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো নেতাকর্মীই নেই। যারা আছেন তারা সবাই মাস্টার্স পাস। তাদের ছাত্রত্ব নেই। যার কারণে ঢাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে বর্তমান কমিটি।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এ জন্য খোদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকীর ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন। তাদের মতে, বর্তমান কমিটির নতুন কর্মী সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ না করা ও নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কর্মসূচি না থাকার জন্যই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর এতে করে ঢাবি ছাত্রদলে দিন দিন গ্রুপিং আরো প্রকট হয়ে উঠেছে।
ঢাবি ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদল ঢাবি শাখা সভাপতি মেহেদী ও সাধারণ সম্পাদক বাশারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে ইতোমধ্যেই আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করা শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বৃহৎ একটি অংশ। এই অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন ছাত্রদল ঢাবি শাখার ১নং সহসভাপতি নজরুল ইসলাম নাহিদ। সবশেষ ১২ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের বিএনপির সমাবেশেও আলাদাভাবে শোডাউন করেছেন তিনি। নাহিদ নিজেই বিভিন্ন হলের আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে ঢাবি ছাত্রদলের ব্যানারে মিছিল-সমাবেশ করেছেন। ২০০৮ সালে ক্যাম্পাস ছাড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের এমন বিভিন্ন গ্রুপের আলাদা মিছিল-সমাবেশ চোখে পড়েনি ছাত্রদলের নেতাদের। এতে করে ছাত্রদলের হলের নেতারাও বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে গেছেন। তারা দোটানায় ভুগছেন আসলে কাদের সঙ্গে থাকবেন। সংগঠনেও বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা।
সাধারণ কর্মীরা বলছেন, একমাত্র নতুন কমিটিই এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। বর্তমান ঢাবি সভাপতি আল মেহেদী তালুকদারের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি, আর সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকীর বিরুদ্ধেও নানান অভিযোগও করেছেন সংগঠনের একাধিক নেতা। এই মুহূর্তে ঢাবি ছাত্রদলের কমিটি না হলে সংগঠনে আরো গ্রুপিং বাড়বে এবং নতুন কর্মী সংগ্রহ করাও সম্ভব হবে না বলে অভিমত ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের।
তবে ছাত্রদলের ঢাবি শাখার গ্রুপিংকে ইতিবাচক মনে করছেন ছাত্রদলের সাবেক এক প্রভাবশালী সভাপতি। তিনি মনে করেন, সংগঠনে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকা ভালো। এমনিতেই সরকারের ভয়াবহ দমন নিপীড়ন, মামলা, ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের প্রাণ ওষ্ঠাগত। এ সময়ে ঝুঁকি নিয়ে কেউ যদি ছাত্রদলের জন্য কাজ করে এটাকে ইতিবাচকভাবেই আমরা দেখি। ঢাবিতে আরো বেশি গ্রুপ থাকা দরকার। এতে করে সংগঠন আরো বেশি প্রাণবন্ত হবে। গ্রুপ ভারি করার জন্য হলেও নতুন কর্মী সংগ্রহ বাড়বে।
ছাত্রদলের ঢাবি শাখার ১নং সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম নাহিদ মানবকণ্ঠকে বলেন, দেহে নতুন রক্ত সঞ্চালন হলে শরীর যেমন প্রাণ ফিরে পায় তেমনি ঢাবিতে নতুন কমিটি হলে ছাত্রদলের মধ্যেও রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। নির্জীব সংগঠনটি প্রাণ ফিরে পাবে। এখন ছাত্রদলের ঢাবি শাখায় কর্মীসংকট। অবশ্যই এটা বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ব্যর্থতা। আর এই কালিমা দূর করার জন্য ও ছাত্রদলের হারানো গৌরব ফেরাতে আমরা নিজেরাই পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা উপেক্ষা করে ভর্তিচ্ছুদের বরণ করেছি। ম্যাডামের ওপর হামলা ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মিছিল সমাবেশ করেছি। ব্যক্তিগতভাবেই নিয়মিত জুনিয়র কর্মী সংগ্রহের চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটি এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ হল কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদল ঢাবি শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদারের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। একইভাবে ফোন বন্ধ পাওয়া যায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির রাজীব আহসানের।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন