ছোট ভাই মরহুম মোজাম্মেল হোসেন লালুর ছেলে সাবেক এমপি জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ সিটি নির্বাচন থেকে সরে না এলে জাতীয় পার্টির সকল ধরনের পদ-পদবি থেকে বহিস্কার করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। একইসাথে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আব্দুর রউফ মানিক জাতীয় পার্টির সাধারণ সদস্যও নয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছেন এরশাদের প্রেস সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায়। এদিকে এরশাদের এই হুমকির পর আসিফ শাহরিয়ার বলেছেন, কাউয়াকে তীর ধনুক দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। আর মানিক বলেছেন, তাকে নিয়ে 'নাড়াচাড়া' করায় তার মানহানি হয়েছে। ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রেস ও পলিটিক্যালে সেক্রেটারী সুনীল শুভ রায় স্বাক্ষরিত ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী সম্পর্কে জানানো যাচ্ছে, এ নির্বাচনে পার্টির চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মনোনয়ন প্রদান করেছেন। তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির দ্বিতীয় প্যারায় বলা হয়েছে, আব্দুর রউফ মানিক যনি কোথাও কোথাও নিজেকে জাতীয় পার্টির লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তার সম্পর্কে জানানো যাচ্ছে যে, তিনি এখন জাতীয় পার্টির একজন সাধারণ সদস্যও নন। তাই সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, তাই এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিয়ে বিভ্রান্তির কোনে প্রশ্ন নেই।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির শেষ প্যারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনে প্রার্থী হবার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশকারী আসিফ শাহরিয়ারকে পার্টির পক্ষ থেকে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে, তিনি যদি পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অমান্য করে রসিক নির্বাচনে প্রার্থী হন কিংবা তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে না নেন, তাহলে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে তাকে জাতীয় পার্টির প্রাথমিক পদসহ সকল পদ ও পদবি থেকে বহিস্কার করা হবে।
এ প্রসঙ্গে এরশাদের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার জানান, আমি ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তির কোনো কেয়ার করি না। তিনি বলেন, কাউয়াকে যেন তীর ধনুক না দেখান এরশাদ স্যার। আমি তার কারণে জেলা সেক্রেটারি পদ ছেড়ে দিয়েছি। আমাকে পার্টিতে রাখলো কী রাখলো না, সেটা আমার কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। আমি দলীয় কোনো পদ পদবি ব্যবহার করছি না। স্বতন্ত্র ইলেকশন করবো। মনোনয়ন ফরম তুলেছে। মাঠেও বেশ ফরমে আছি।
এ প্রসঙ্গে সাবেক মেয়র এ কে এম আব্দুর রউফ মানিক জানান, আমি কয়েক বছর আগে নিজেই জাতীয় পার্টির প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পদ ও পদবি থেকে পদত্যাগ করেছি। আমার সাথে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই। আমি কোথাও জাতীয় পার্টির কোনো পদ পদবি ব্যবহার করি না। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, একটি বিবৃতিতে আমার প্রসঙ্গ এভাবে আনায় আমার মানহানি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
গত ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারাস্থ প্রেসিডেন্ট পার্কে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়নপত্র তুলে দেন রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার হাতে। এর আগে গত ১৮ মার্চ রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে মহানগর জাতীয় পার্টির কাউন্সিল অধিবেশনে মোস্তফাকে হাত উঁচিয়ে সিটি মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন এরশাদ। শুধু তাই নয়, তফশিল ঘোষণার আগে অন্তত ২০ টি সভা সমাবেশ ও সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় মোস্তফার মনোনয়নের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন। তার পক্ষে ক্যাম্পেইন করে ভোট প্রার্থনার করেন এরশাদ।
এরই মধ্যে গত ১৪ জুন এরশাদের পৈত্রিক নিবাস রংপুর মহানগরীর সেনপাড়ার স্কাইভিউ লাঙ্গল ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী নিয়ে দলীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন ছোট ভাই মোজাম্মেল হক লালুর পুত্র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব, জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ২০ জুন এরশাদ রংপুর জেলা আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে প্রেসিডিয়াম সদস্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক করেন। এর মাধ্যমে এই কমিটি থেকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহসাসচিব এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার বাদ পড়ে যান। এরপর থেকে তিনি এরশাদ ও লাঙ্গলের প্রতীক এবং দলীয় পদপদবি বাদ দিয়ে নগরীর আনাচে কানাচে মেয়র পদে প্রার্থিতা করতে প্রচারণা চালান। লাগান উন্নতমানের ফেস্টুন, বিলবোর্ড পোস্টার। তিনি ইতোমধ্যেই মনোনয়নপত্র তুলে প্রচার প্রচারণাও চালাচ্ছেন।
ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২২ নভেম্বর। বাছাইয় ২৫ ও ২৬ নভেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৩ ডিসেম্বর। এবার এই নির্বাচনে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ এবং নারী ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন। ১৯৬টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১৭৭টি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রংপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হয়েছিল। এতে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন সরফুদ্দীন আাহম্মেদ ঝন্টু। এবারও তারা প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি এই নির্বাচনে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন