শুরুটা হয়েছিল এ বছরের ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এসেছিলেন ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে। প্রথমে তাঁকে রাস্তায় আটকে দেওয়া হয়। কাদের সিদ্দিকীও ফিরে যান তাঁর বাসায়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ডেকে আনেন। জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে প্রধানমন্ত্রী কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করেন।
এরপর গত মাসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা, জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুণ:প্রতিষ্ঠাতা বললে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার প্রতিবাদ করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেন।
সর্বশেষ আজ ১৮ নভেম্বর, জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেসকোর স্বীকৃত প্রাপ্তি উপলক্ষে নাগরিক সমাবেশে যোগ দিলেন কাদের সিদ্দিকী। নাগরিক সমাবেশে বৈচিত্র, নান্দনিকতা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য-সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় কাদের সিদ্দিকী। কাদের সিদ্দিকী কি তাহলে ফিরে আসছেন? বরফ কি তাহলে গলেছে? নাগরিক সমাবেশে কাদের সিদ্দিকীকে দেশে অনেকে যেমন আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত, অনেকের অস্বস্তি তেমন স্পষ্ট।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর মুক্তিযোদ্ধা। একমাত্র বেসামরিক যোদ্ধা যিনি বীর উত্তম খেতাব পেয়েছিলেন। জাতির পিতার নির্দেশ অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর আবার অস্ত্র হাতে তুলে নেন। ভারতে প্রবাসী জীবনে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়াই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। তাঁর পথ ভুল ছিল কিনা ,তা নিয়ে বিতর্ক আছে, কিন্তু জাতির পিতার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় এতোটুকু খাদ নেই। যা বলার স্পষ্ট করে বলেন, জ্বী হুজুরের রাজনীতির সময়ে আশ্চর্য ব্যতিক্রম তিনি। ৭৫ এর ভূমিকার কারণে তৃণমূলের আওয়ামী লীগের কাছে তিনি হিরো। আর এই ৭৫ এর জন্যই তাঁকে নিয়ে অনেকে অস্বস্তিতে থাকেন। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন,পদত্যাগ করেন সংসদ থেকেও। এরপর কাদের সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের দুরত্ব হয়েছে অনেক, কথার লড়াইও কম হয়নি। কিন্ত এসব এখন অতীত। অনেকেই মনে করছেন তাঁর আওয়ামী লীগে ফেরা সময়ের ব্যাপার।
কিন্ত কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে ফিরলে তাদের কী হবে যাদের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর বিরোধ প্রকাশ্য। কাদের সিদ্দিকী কোনো রাখঢাক না রেখেই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সমালোচনা করেন। খুনি মোশতাকের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন তৎকালীন মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব এইচ টি ইমাম। কাদের সিদ্দিকী প্রকাশ্যেই এইচ টি ইমামকে খুনি মোশতাকের দোসর বলেন। এইচ টি ইমাম এখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কাদের সিদ্দিকী সবসময়ই তাঁর জন্য অসস্বস্তির কারণ। বঙ্গবীরকে নিয়ে এইচ টি ইমামের চেয়েও বেশি অস্বস্তিতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতা ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর।
ড. আলমগীরকে বঙ্গবীর ‘রাজাকার হিসেবেই ভাবতেই পছন্দ করেন। একাধিক বক্তৃতায় কাদের সিদ্দিকী ৭১ এ ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরের ভূমিকার সমালোচনা করেন। এছাড়াও ৭৫ এর ১৫ আগস্টের সময় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠরা যারা যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা মনে করেন তারাও কাদের সিদ্দিকীর সমালোচনার তীরে বিদ্ধ। এরা কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ছাড়ায় হাফ ছেড়ে বেঁচে ছিলেন। এখন তাঁর নিত্য আনাগোনায় তাঁরাও একটু বিব্রত। তবে কাদের সিদ্দিকী আবার আওয়ামী লীগে আসবেন এমন স্পষ্ট ইঙ্গিত তিনি এখনো দেননি। কাদের সিদ্দিকী মনে করেন, তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মার আত্মীয়। এই সম্পর্ক যত প্রগাড় হবে, ততই কাদের সিদ্দিকীর সমালোচনায় অভিযুক্তরা বিবর্ণ হবেন।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন