ইতিহাসও প্রতিশোধ নেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ’৭৫-এর হত্যাকাণ্ডের পর ৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। ওই ভাষণ বাজাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নাম তারা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। পারেনি। আসলে ইতিহাস মুছতে চাইলেও তা মুছে ফেলা যায় না। তিনি বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণে ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে তাদের কি এখন লজ্জা হয় না? দ্বিধা হয় না? জানি না তাদের লজ্জা আছে কি-না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্ব স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। এজন্য আমরা গর্বিত জাতি। আমাদের উন্নত শির যেন আর কোনোদিন পরাভূত না হয় সেজন্য সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত থাকবে, এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি এগিয়ে যাবে, এটাই হোক আজকের প্রতিজ্ঞা। তিনি বলেন, বিজয়ী জাতি হিসেবে বিজয়ের ইতিহাস বলতে পারবো না, এটা তো হয় না। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বোঝা গেল, ইতিহাসও প্রতিশোধ নেয়।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া উপলক্ষে আয়োজিত বিশাল নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে বিশিষ্ট নাগরিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ছাড়া আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
সমাবেশে ২৪ মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধাসহ সবাই সম্মানিত হয়েছি। তবে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা তোষামোদকারী ও চাটুকাররা যেন আর কখনও ইতিহাস বিকৃত করার সুযোগ না পায় সেজন্য বাংলার মানুষকে জাগ্রত থাকতে হবে। ভাষণের শেষদিকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এতদিন এরকম (গতকালের আবওহাওয়া ছিল মেঘাছন্ন) মেঘে ছেয়েছিল। আমাদের আকাশে সূর্য নতুনভাবে দেখা দিয়েছে। এই সূর্যই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আবারও আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।
এদিকে সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়ার আগে এ নিয়ে করা একটি ধন্যবাদ স্মারক ইউনেস্কোর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর বিট্রিস কালদুনের হাতে তুলে দেয়া হয়। দুপুর ২টা ৩৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা। এর পরপরই জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। এতে বক্তব্য দেন সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর বিট্রিস কালদুন।
আলোচনা ছাড়াও সমাবেশে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখানে আবৃত্তি করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও কবি নির্মলেন্দু গুণ। শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের কণ্ঠে সমবেত গানের পর লোকগান পরিবেশন করেন চন্দনা মজুমদার। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান পরিবেশন করেন সংসদ সদস্য ও শিল্পী মমতাজ বেগম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রামেন্দু মজুমদার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী। সমাবেশের কার্যক্রম সমন্বয় করেন পাঁচ সদস্যের নাগরিক কমিটি। তারা হলেন- সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, ডা. সারওয়ার আলী, হারুন-অর-রশিদ ও অসীম কুমার উকিল।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, পৃথিবীর কোনো ভাষণ ৭ই মার্চের ভাষণের মতো এতদিন এত ঘণ্টা ধরে বাজেনি। যাদের এ দেশে জন্ম হয়নি, যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না কিংবা করতে পারেনি, তারা বঙ্গবন্ধুর নাম ও ৭ই মার্চের ভাষণ মুছে ফেলতে চেয়েছে। এ কারণে বাজাতে দেয়নি। এ দেশে বসবাস করলেও তারা মূলত পাকিস্তানের প্রেতাত্মা। কিন্তু তারা যতই বন্ধ করতে চেয়েছে স্বাধীনতার উদ্দীপনা ও চেতনাকে রুখতে পারেনি। অনেক রাষ্ট্রনায়কের ভাষণ ইতিহাসে ঠাঁই পেলেও সেগুলো আগেই লেখা ছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণ এমন একটি ভাষণ যার লিখিত কিংবা কোনো নোট ছিল না। বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণ দেয়ার আগে পায়চারির সময় আমার মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বলেছিলেন, তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি শুধু সে কথাই বলবে। কারণ তুমি জানো তোমার কি কথা বলতে হবে বাঙালি জাতির জন্য। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সব দিকনির্দেশনা ছিল বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জানতেন পাকিস্তানি শাসকরা কখনও ক্ষমতা দেবে না। যুদ্ধ করেই দেশ স্বাধীন করতে হবে। ৭০-এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হয়েছিল জনগণের ম্যান্ডেট নিতে। তিনি জানতেন নির্বাচনে জিতলেও ক্ষমতা ছাড়বে না পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা। তাই ৭ই মার্চের ভাষণে সব দিকনির্দেশনা দিয়ে যান জাতির পিতা। অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, অর্থ সংগ্রহসহ সব পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা তার এই ভাষণে ছিল। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা নিতে এসেছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তখন ৫৬ শতাংশ মানুষ ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। কিন্তু বাঙালির কোনো অধিকার ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানিরা সম্পূর্ণ শোষণ করেছে। তারা আমাদের মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা কখনও চায়নি বাঙালিরা শাসনভার হাতে নিক। ডিসেম্বরের ৭ তারিখ ইলেকশন হয়। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি গেল কিন্তু তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। বঙ্গবন্ধুর কথায় এদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন দ্রুতগতিতে চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি যে ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে আমাদের এখন আর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় না। অথচ তারা বাঙালিকে গোলামির জাতিতে পরিণত করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী শক্তি, আর তারা পরাজিত শক্তি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
দুপুর থেকেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশে মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ, এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যানার নিয়ে সমাবেশে আসতে শুরু করে। দুপুরের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল। এখানেই ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শুনিয়েছিলেন স্বাধীনতার অমর সেই বাণী, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। সমাবেশস্থল সাজানো হয় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের মতো করে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কৃত্রিম লেকে শোভা পায় পাটবোঝাই পালতোলা নৌকা। আর নৌকার পালে ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের বিভিন্ন উদ্ধৃতি।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে স্বীকৃতি দিতে পেরে ইউনেস্কোও গর্বিত
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐহিত্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর বিয়েট্রিস কালদুন। সমাবেশে তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে’ যুক্ত করে নিয়েছে ইউনেস্কো। এ জন্য ইউনেস্কোও গর্বিত। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ভাষণটির ওপর অনেক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। গত মাসেই এ স্বীকৃতি দেয়া হয়। একটি ভাষণের মাধ্যমে একটি জাতিকে একত্রিত করার ইতিহাসের দলিল এটি। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিগৃহীত জাতির অধিকার আদায়ে অনুপ্রেরণা
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর নিগৃহীত নিপীড়িত জাতির অধিকার আদায়ের অনুপ্রেরণা ও শক্তি জোগাবে বলে মনে করি। তিনি বলেন, ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ভাষণ স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশকে অসাধারণ সম্মানিত করেছে। এ ভাষণ এখন পৃথিবীর সম্পদে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে পৃথিবীর নানা ভাষায় অনুবাদ করে ছড়িয়ে দিতে হবে। শোষিত জাতি এ ভাষা থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজবে। বঙ্গবন্ধু আমাদের একান্ত সম্পদ। তবে তিনি সমগ্র বিশ্বেরও। জাতীয় এ অধ্যাপক বলেন, তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম...’ এ বাক্যটি শুনেই বুঝতে পেরেছি, পৃথিবীর বুকে নতুন দেশ, জাতির জন্ম হলো। অনুধাবন করেছিলাম তার ভাষণের তাৎপর্য। অনানুষ্ঠানিক এ ভাষণের পর আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিই। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় কারাগারে ছিলেন, কিন্তু আমরা তার ভাষণে শক্তি সঞ্চয় করে স্বাধীনতার দুরন্ত লক্ষ্য অর্জন করি। এদিকে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমকাল পত্রিকার সম্পাদক গোলাম সারোয়ার। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল মহাকাব্য। ১৮ মিনিটের ভাষণে কোনো তৎসম শব্দ ছিল না, বঙ্গবন্ধু চলিত সহজ সরল ভাষায় পুরো বক্তব্য দিয়েছেন। আমি খুব কাছ থেকে সেই বক্তব্য শুনেছি। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এটা নিয়ে কোনো আপস করা যাবে না। ষড়যন্ত্র চলছে, যেকোনো ভাবে এটি মোকাবিলা করতে হবে।
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, দেশকে ভালোবাসার সবচেয়ে সহজ উপায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা। শুধু তথ্য জানলেই হবে না। মুক্তিযুদ্ধ ও ৭ই মার্চকে অনুভব করতে হবে। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম ভাষণ খুব বেশি নেই। এটা শুধু ভাষণ নয়, এটা মহাকাব্য। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ৭ই মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই সময় যারা শত্রু ছিল আজকে তারা নেই। এখন নতুন শত্রু আছে, তাদের মোকাবিলা করতে হবে। কলম সৈনিককে কলম দিয়ে, শিল্পীকে গান দিয়ে শত্রুদের মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীতে খুব কম দেশই আছে যেখানে দেশ ও একজন নেতা সমার্থক। আমরা সেই সৌভাগ্যবান জাতি- যেখানে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। আমাদের সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। ইউনেস্কো এ ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়ে নিজেদের সম্মানিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন জনপ্রিয় এ লেখক। তিনি আরো বলেন, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই ৫০ থেকে ৬০ জন ছাত্র একসঙ্গে আমার সামনে থাকে। সেখানে স্লোগান দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও দিতে পারি না। আজকে সুযোগ পেয়েছি, তাই স্লোগান দিচ্ছি। আপনারাও আমার সঙ্গে স্লোগান দেন।’ এ সময় তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। উপস্থিত সবাই তার সঙ্গে গলা মেলান।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য সেদিন আমার খুব কাছ থেকে শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। এ ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ভাষণ। ৭ই মার্চের ভাষণে বাঙালির স্বাধীনতা ঘোষণা হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল বাঙালি নামধারী পাকিস্তানিরা। আজও তারা সক্রিয় আছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সক্রিয় থাকতে হবে। ছদ্মবেশী পাকিস্তানিদের আর ক্ষমতায় যেতে দেয়া যাবে না। শহীদজায়া শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ২০১২ সাল থেকে ৭ই মার্চের ভাষণ পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৮ মিনিটের এ ভাষণ পড়াতে ৬টি ক্লাস নিতে হয় আমাদের। এ ভাষণ বুকে ধারণ করলে কেউ আর বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলার সাহস করবে না। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দেয়ায় ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ধন্যবাদ স্মারকটি ঢাকায় নিযুক্ত ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টরের হাতে তুলে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। স্মারকটি পড়েও শোনান তিনি। এর আগে নির্মলেন্দু গুণ তার ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন। শাহীন সামাদ ‘তোরা সব জয়ের ধ্বনি কর’ পরিবেশন করেন। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা: নাগরিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা ও তার চারপাশের সড়ক নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়। পুরো এলাকাকে নিয়ে আসা হয় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায়। মৎস্য ভবনের মোড়ে ও শাহবাগের শিশুপার্কের সামনে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যারিকেড বসানো হয়। ওই সড়কে সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। যানবাহনগুলোকে বিকল্প দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। মৎস্য ভবনের মোড় দিয়ে শুধু ভিআইপি ও একাধিক বিদেশি প্রতিনিধি তাদের যানবাহন নিয়ে ঢুকতে পেরেছেন। প্রটোকল ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি ছাড়া কোনো গাড়িকে ওই সড়কে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মৎস্য ভবনের সড়ক দিয়ে যানবাহন ছাড়াও কোনো পথচারীকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এ সময় পথচারীরা রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে রজনিগন্ধা গেট দিয়ে বের হয়ে শাহবাগে যান।
আর যারা নাগরিক সমাবেশে যোগদান করার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে গেছেন তারা হাইকোর্ট ঘুরে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে তিন নেতার মাজার পর্যন্ত পাঁচটি গেট দিয়ে প্রবেশ করেছেন। নাগরিক সমাবেশের প্রত্যেক গেটে পুলিশের পক্ষ থেকে আর্চওয়ে বসানো হয়। এদিকে সমাবেশ শুরুর আগে ও পরে আশপাশের কয়েকটি সড়ক ঘিরে তীব্র যানজট দেখা দেয়। যানজটের কারণে অনেকে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যান। বেলা তিনটার দিকে শেরাটনের মোড় থেকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। সমাবেশে আসা গাড়ি ছাড়া আর কোনো গাড়ি শাহবাগের দিকে যেতে দেয়া হয়নি। রমনা জোনের পুলিশের এসি এহসানুল ফেরদাউস সাংবাদিকদের জানান, নাগরিক সমাবেশকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় নেয়া হয়। মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের শিশুপার্কের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক কাজ করেছে। এতে খুব বেশি যানজট হয়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন