সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় আসবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য তিনি দলে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারের উন্নয়নের চিত্র এবং এর বিপরীতে বিএনপি জোটের জ¦ালাও পোড়াও ভোটারদের কাছে তুলে ধরতে হবে। আগামী নির্বাচনে মুখ দেখে নয়, মনোনয়ন জরিপের ‘ব্যারোমিটার’ অনুযায়ী প্রার্থী দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গতকাল বুধবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারি দলের সম্মেলন কক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সাধারণ সম্পাদক নূর ই আলম লিটন চৌধুরীর পরিচালনায় সভায় আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সদস্য অর্থাৎ দলীয় এমপিদের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। রাত ৮টার কিছু পর শুরু হওয়া বৈঠক চলে প্রায় সাড়ে ৯টা নাগাদ। বৈঠকে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রস্তুতি নিয়েই মূলত আলোচনা হয়। রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য তথ্যগুলো জানান।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, গৃহায়ণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, একেএম শামীম ওসমান, আবদুর রহমান বদি, ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, ছানোয়ার হোসেন তুহিন, অনুপম শাজাহান জয় প্রমুখ।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের এক এমপি বৈঠকে সাম্প্রতিক ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের এক সদস্যের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এগুলো সব ষড়যন্ত্রের অংশ। কারা আমাদের দলের এমপিদের বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করাচ্ছে তা খুঁজে বের করা দরকার। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি দেশবিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে পর্দার অন্তরালে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে থামিয়ে বলেন, তোমরা খালি ষড়যন্ত্রে কথা বল। আমরা সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে টানা দুবার ক্ষমতায় এসেছি। আমাদের উন্নয়ন কর্মকা-ের কথা জনগণের কাছে তুলে ধরলে আগামীবারও ক্ষমতায় আসব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুয়াডাঙ্গা, নড়াইলের দুজন এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা ব্যাপক আত্মবিশ^াসী হয়ে উঠেছি।
জনপ্রিয়তার বিচারেই আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় এমপিদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ছয় মাস অন্তর প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় জরিপ করা হচ্ছে। মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় কার কী অবস্থান তার আমলনামা তার কাছে রয়েছে। তাই এমপিদের জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটার বাড়াতে হবে। জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটারে যারা এগিয়ে রয়েছেন তারাই মনোনয়ন পাবেন। কারো মুখ দেখে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
দলের মধ্যে বিভেদ, দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দলের বিরোধিতাকারীদের ক্ষমা করা হবে না।
বৈঠকে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিদেরও নির্বাচিত এমপি-মন্ত্রীদের ডিস্টার্ব না করারও নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আর কোনো সময় অপচয় নয়। নির্বাচনী এলাকায় জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করুন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ৫-৭ জন এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, অনেক মন্ত্রীর কাছে গেলে তাদের কথা শোনেন না। আবার অনেক মন্ত্রী ইউএনও-ওসিকে ফোন করে কথা না শোনার নির্দেশ দেন। আবার বেশ ক’জন তরুণ সংসদ সদস্য অভিযোগ করেন, আমরা নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করলেও সিনিয়র নেতারা আমাদের পাত্তা দেন না। আবার কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন যারা নির্বাচনী এলাকায় আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন, স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন আমাদের কথা যেন তারা না শোনে। এ ধরনের বক্তব্যে দলের জ্যেষ্ঠ এমপিরা অবশ্য বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবারই আছে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, তবে সেটি যেন কোনো অবস্থায়ই নোংরামির পর্যায়ে চলে না যায়।
আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
ভোটারের ভোটে নির্বাচিত হলে সবাই সাধুবাদ জানাবে,আর কুকুর,পুলিশ,র্যাব,সন্ত্রাসী লীগের ভোট বিজয় হলে ময়লার স্তুপ শরীরে বেড়ে যাবে।
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন