রংপুর সিটি নির্বাচনে চমকে দিতে চান বেগম জিয়া। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিতে তিনি সড়ক পথে রংপুর যাবেন। দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের পালাক্রমে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অংশ নিতে বলেছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই রংপুর যাচ্ছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
রংপুরে বিএনপি জনপ্রিয় দল নয়। ৭৯ এর সংসদ নির্বাচনে রংপুর সদর থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি প্রার্থী রেজাউল হক সরকার রানা। রংপুরের বিএনপির সাফল্য বলতে ওই টুকুই। ঐতিহ্যগতভাবে রংপুর ছিল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। কিন্তু ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পর এরশাদের পতন হলে, রংপুরবাসী এরশাদ প্রেমী হয়ে ওঠেন। ৯১ এর নির্বাচনে জেলে থেকে এরশাদ রংপুরের সবকটি আসনে জয়ী হন। তবে, এরশাদের জনপ্রিয়তায় এখন বেশ ভাটার টান। তাছাড়া, এবার সিটি নির্বাচন নিয়ে জাপায় বিরোধ প্রকাশ্যে। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ মোস্তাফিজুর রহমানকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেন। কিন্তু এরশাদের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন তাঁর ভাতিজা এবং জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। জাপার ভেতরের খবর হলো, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা আসিফকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন। তাই, গত রসিক নির্বাচনে দ্বিতীয় হওয়া জাতীয় পার্টির এবারের অবস্থা খুব একটা ভালো না।
আওয়ামী লীগ শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করলেও বিরোধ স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের পক্ষেই একটি অংশ ঝন্টুর বিরুদ্ধে কাজ করছে। এছাড়া ঝন্টু সদ্য বিদায়ী মেয়র। তাঁর বিষয়ে মানুষের অভাব অভিযোগ রয়েছে। তাঁর অনেক কাজ ভালো হলেও, বেশ কিছু কাজের সমালোচনা আছে। সবচেয়ে বড় কথা, ঝন্টুর নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগই ঐক্যবদ্ধ নয়। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির এই দুর্বলতাগুলো কাজে লাগিয়ে রংপুরে বিজয় পতাকা ওড়াতে চান বেগম জিয়া। গত রসিক নির্বাচনে বিএনপি হয়েছিল তৃতীয়। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন মনে করছেন বিএনটির নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, রংপুরে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। কিন্তু রংপুরে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপ না। সারাদেশে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যে অনাস্থা তাঁর বহিঃপ্রকাশ ঘটবে রংপুরে।’
খসরু মনে করেন, ‘রংপুরের নির্বাচন হবে বর্তমান সরকারের প্রতি অনাস্থার নির্বাচন।’ বিএনপি একাধিক নেতা বলেছেন, ‘রংপুরে বিএনপির হারানোর কিছু নেই। এই এলাকাটি জাপা-আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত এলাকা। এখানে বিএনপি হারলেও কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু রংপুরে যদি বিএনপি জয়ী হয় সেটি হবে, ‘চমক’। যেমনটি মনে করেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। তাঁর মতে, ‘রংপুরে বিএনপির জয় প্রমাণ করবে এই সরকারের জনসমর্থনহীন ‘
তাই গতবার রসিক নির্বাচনকে হালকাভাবে নিলেও এবারের নির্বাচনক বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নিয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথমভাগেই বেগম জিয়া ৫ দিনের উত্তরাঞ্চল সফরের পরিকল্পনা নিয়েছেন। আসলে তাঁর এই সফরের গন্তব্য হবে রংপুর। বিএনপির নেতাদের মতে, বেগম জিয়া রংপুর সফরের মাধ্যমে একটি জোয়ার আনতে চান। এছাড়া দলের সিনিয়র নেতাদের পালাক্রমে রংপুর সফরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রংপুর দূর্গ জয় করলে, বিএনপি এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় দল, এটা প্রমাণ করা সহজ হবে, এমনটাই ভাবছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন