দশম জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশন শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। এটি ২০১৭ সালের পঞ্চম ও শেষ অধিবেশন ছিল। মাত্র ১০ কার্যদিবস চলা এই অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোতে স্বীকৃতি মেলার উপরে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব সংসদে পাস হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের সমাপ্তি টেনে বলেন, এই অধিবেশনে আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দানের জন্য ৮৭টি প্রশ্ন পাওয়া যায়। তিনি ৩২টি প্রশ্নের জবাব দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্য মোট ১ হাজার ৬৭৬ টি প্রশ্নের মধ্যে ১ হাজার ৩৩৩টি প্রশ্নের জবাব দেন মন্ত্রীরা।
স্বল্পকালীন এই অধিবেশনে ৩টি বিল পাস হয়েছে। এছাড়া কার্যপ্রণালী বিধির ৭১ বিধিতে ২৮৬টি নোটিশ পাওয়া যায়। নোটিশগুলো থেকে ১৫টি নোটিশ গৃহীত হয় এবং ১১টি নোটিশ নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়। আর ৭১ক বিধিতে দুই মিনিটের আলোচিত নোটিশ ছিল ১০৫টি। এর আগের অধিবেশন সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে মাত্র ৫ কার্যদিবস চলে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে সংসদে ক্ষোভ
বিভিন্ন পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি বলেন, এবার প্রাথমিকেও প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এর সঙ্গে শিক্ষকরা জড়িত। এসব কাজে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রী কি ব্যবস্থা নেবেন তা জানতে চেয়ে সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে তিনি এ দাবি করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, আলোকবর্তিকা। কিন্তু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কী করুণ অবস্থা সেটা কি আমাদের জানা আছে? প্রাথমিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে। এটা হওয়ার কারণ কি? এর কারণ হচ্ছে শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য চলছে। কোচিং সেন্টার, নোট বই জমজমাটভাবে চলছে।
বাবলু বলেন, প্রাথমিক স্তরের একজন ছাত্র যদি নকল শেখে তবে তারা জাতির জন্য কি করবে? এ থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই। একটি শিক্ষিত জাতি গঠন করতে না পারলে এই জাতির স্তম্ভ ভেঙে পড়বে। পরীক্ষার একঘণ্টা আগে প্রশ্ন দেয়া হয় তারপরেও প্রশ্ন ফাঁস হয়। এর কারণ শিক্ষকরা ওই প্রশ্নের ছবি তুলে বাইরে পাঠায়, সঙ্গে সঙ্গে বাইরে থেকে প্রশ্নের উত্তর চলে আসে।
কাজেই প্রযুক্তি একদিকে আমাদের কল্যাণ করছে, অন্যদিকে আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্ত কাজের সঙ্গে শিক্ষকরা জড়িত। এ ব্যাপারে কী করা হবে সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করছি।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের তিন বছরেও জাতীয়করণ হয়নি দু‘টি কলেজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় নেতা এএইচএম কামারুজ্জামানের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজ আজও জাতীয়করণ হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার গাফিলতির কারণেই কলেজ দু’টি জাতীয়করণ হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার রাতে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য (এমপি) ফজলে হোসেন বাদশা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে দেশের বিভিন্ন কলেজ জাতীয়করণের নির্দেশনা দেন। এ পর্যন্ত ৪৬টি কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে।
‘কিন্তু গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রাজশাহীর এএইচএম কামারুজ্জামান কলেজ এখনও জাতীয়করণ হয়নি। মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার কলেজ আত্মীকরণে বাধা দিচ্ছে। এ সংক্রান্ত যে আইন আছে, তা অনুসরণ করলেও তিনদিনের মধ্যে আত্মীকরণ সম্ভব।’
এমপি বাদশা বলেন, দামি-দামি নয়-এমন অনেক কলেজকেও আদালতের নির্দেশে আত্মীকরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণ করে ওই দুই কলেজকেও দ্রুত আত্মীকরণের দাবি জানাচ্ছি।
প্রতি ১০ জনে তিন নারী তামাক ব্যবহার করেন - স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে (গ্যাটস) অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে তিন নারী কোন না কোনভাবে তামাক ব্যবহার করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এম আব্দুল লতিফের ( চট্টগ্রাম-১১)এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তামাক ব্যবহারের কারণে (ধোঁয়াযুক্ত- ধোঁয়াবিহীন) যেকোনো ধরনের তামাকই স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (২০০৪ সালের ) এক গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৭ হাজার মৃত্যু এবং ৩ লাখ ৮২ হাজার পঙ্গুত্ব বরণ করেন। ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এন্ড ইভালুয়েশন, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৯৭ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।
তামাক ব্যবহারের কারণে প্রধানত আটটি রোগ হয়। এগুলো হলো, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, মস্তিকে স্টোক, মুখের ক্যানসার, শ্বাসনালি/ খাদ্যনালিতে ক্যানসার, ফুসফুসের শ্বাসতন্ত্রের বাধাজনিত রোগ, ফুসফুসে যক্ষা, বার্জারস ডিজিস।
তিনি বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি। বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ প্রণয়ন করে। ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০১৫ অনুসারে, ১৯ মার্চ ২০১৬ থেকে সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের ৫০ ভাগ জায়গা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হচ্ছে।
‘ভাষা নীতি’ প্রণয়ন হচ্ছে- সংসদে সংস্কৃতি মন্ত্রী
সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলনে সরকার ভাষা নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদরীয় সদস্য এম. আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
আবদুল লতিফ তার প্রশ্নে মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, লড়াই করে বাংলা ভাষা অর্জিত হয়েছে। অথচ আজও সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি। তাই দেশে একটি ভাষা নীতি প্রণয়ণ করার পরিকল্পন্ াসরকারের আছে কিনা। এবং থাকলে কবে নাগাদ বাস্তবায়ন করা হবে।
জবাবে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বর্তমান সরকার মাতৃভাষার প্রসার ও উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বাংলা একাডেমি একটি ভাষা নীতি প্রণয়নের কাজে সহযোগিতা করার জন্য প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ১ম খন্ড (সংস্করণ), বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ২য় খন্ড (সংস্করণ), বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ব্যাবহারিক ব্যাকরণ (পুর্ণমুদ্রণ), বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম (পুর্নমুদ্রণ), আধুনিক বাংলা অভিধান ইত্যাদি গ্রন্থগুলো প্রকাশ করেছে।
মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, দেশের প্রতিটি উপজেলায় গণগ্রন্থাগার ও শিল্পকলা একাডেমির সমন্বয়ে উপজেলা সাস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় মুক্তমঞ্চসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
গত ৮ বছরে ৪৭ টি নদ-নদী ড্রেজিং করা হয়েছে- সংসদে নৌমন্ত্রী
গত ৮ বছরে দেশের প্রায় ৪৭ টি নদ- নদী ড্রেজিং করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহার খান। গতকাল বৃহষ্পতিবার জাতীয় সংসদে ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজরীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
মন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী নদ নদী গুলো হলো- ১) মেঘনার (আলুবাজার-হরিণাঘাট),২) আড়িয়ালখা, ৩) গোমতী, ৪) কীর্তনখোলা, ৫) কুশিয়ারা, ৬) ব্রম্ভ্রপুত্র, ৭) মোংলা- ঘাষিয়াখালি চ্যানেল, ৮) ইছামতি, ৯) মগরা, ১০) কংস, ১১) মধুমতি,১২) ডাকাতিয়া, ১৩) তেতুলিয়া, ১৪) কালঅবদর, ১৫) যমুনা, ১৬) হুরাসাগর, ১৭) বড়াল, ১৮) লোহালিয়া, ১৯) সুরমা, ২০) গাবখান খাল, ২১) বালু, ২২) কুমার, ২৩) আপার কুমার, ২৪) লোহার কুমার, ২৫) খাগদোন, ২৬) তালতলা খাল, ২৭) কালিগঙ্গা, ২৮) তিতাস, ২৯) ধলেশ্বরী, ৩০) মনুমুখ, ৩১) ভৈরব, ৩২) আত্রাই, ৩৩) লাল মোহন, ৩৪) পোনা, ৩৫) বাউলাই, ৩৬) ধলেম্বরী, ৩৭) সন্ধ্যা, ৩৮) লালং, ৩৯) বিষখালী, ৪০) শীতলক্ষ্যা, ৪১) তুরাগ, ৪২) লাউকাঠি, ৪৩) মুখাইনগর নালা, ৪৪) শৈলাদহ, ৪৫) কীর্তিনাশা, ৪৬) ভোরাদিয়া।
মহিলা আসন-২৩ এ সংসদ সদস্য পিনু খানের এক প্রশ্নের জবাবে নৌমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএর অধীনে অভ্যন্তরীণ ২৯ টি নৌবন্দর রয়েছে।
নোয়াখালী-২ আসনের মোরশেদ আলমের এক প্রশ্নের জবাবে নৌমন্ত্রী আরো জানান, বর্তমানে দেশে মোট ২৩ টি স্থল বন্দর রয়েছে। এগুলো হলো-১) বেনাপোল স্থলবন্দর, ২) বুড়িমারী স্থল বন্দর, ৩) আখাউড়া স্থলবন্দর, ৪) সোনাসমজিদ স্থল বন্দর, ৫) হিলি স্থল বন্দর, ৬) ভোমরা স্থল বন্দর, ৭) বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর, ৮) বিরল স্থল বন্দর, ৯) টেকনাফ স্থলবন্দর, ১০) তামাবিল স্থল বন্দর, ১১) গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী স্থল বন্দর, ১২) বিবির বাজার স্থল বন্দর, ১৩) দর্শনা স্থল বন্দর, ১৪) বিলোনিয়া স্থল বন্দর, ১৫) নাকুগাঁও স্থল বন্দর, ১৬) রামগড় স্থল বন্দর, ১৭) সোনাহাটি স্থলবন্দর, ১৮) তেগামুখ স্থল বন্দর, ১৯) চিলাহাটি স্থলবন্দর, ২০) দৌলতগঞ্জ স্থল বন্দর, ২১) ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর, ২২) শেওলা স্থলবন্দর এবং ২৩) বাল্লা স্থল বন্দর।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন